নওগাঁয় পাওনা টাকা ফেরত চেয়ে ভুক্তভোগীদের মানববন্ধন

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৪, ১১:৫০ পূর্বাহ্ণ


আব্দুর রউফ রিপন, নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁ সদর উপজেলার চণ্ডিপুর ইউনিয়নের ইলশাবাড়ি এলাকায় কম দামে ইট দেয়ার কথা বলে শতাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে প্রায় ৫ কোটি টাকা নিয়ে হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

এ ঘটনায় ইটভাটা মালিক সবেদুল ইসলাম ওরফে রনির বিচারসহ পাওনা টাকা ফেরতের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ইলশাবাড়ি-চন্ডিপুর গ্রামের ভুক্তভোগীরা। বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে নওগাঁ-রাণীনগর সড়কের ইলশাবাড়ির সুরমা ব্রিকস নামের ইটভাট খোলায় ভুক্তভোগীরা মানববন্ধন করে।

ইলশাবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা ভুক্তভোগী সাইদুর রহমানের (মিনকো) সভাপতিত্বে মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, চন্ডিপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ভুক্তভোগী বেদারুল ইসলাম, চন্ডিপুর ইউনিয়ন আ’লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. আলতাফ হোসেন, সদর উপজেলার মাদারমোল্লা খিদিরপুর গ্রামের মিজানুর রহমান, ইলশাবাড়ী গ্রামের মোশাররফ হোসেন, বগুড়ার আদমদিঘী উপজেলার তারাপুর গ্রামের তপেস কুমার প্রমুখ।

ভুক্তভোগীরা জানান, বছরের কিছু সময় ইটের দাম বেড়ে যায়। অন্যান্য সময়ে কম দামে ইট পাওয়া যায়। ভাটা কর্তৃপক্ষকে অগ্রিম টাকা দিলে প্রতি হাজার ইটে দুই-তিন হাজার টাকা কম পড়ে। ২০২০, ২০২১, ২০২২ ও ২০২৩ সালে বিভিন্ন সময়ে কম দামে ইট পাওয়ার চুক্তিতে সদর উপজেলার ইলশাবাড়ী এলাকায় পাশাপাশি অবস্থিত সুরমা ব্রিকস-১ ও সুরমা ব্রিকস-২ নামের দুটি ইটভাটার মালিক সবেদুল ইসলামকে ভুক্তভোগীরা অগ্রিম টাকা দেন। টাকা লেনদেনের রসিদ তাদের কাছে রয়েছে।

কিন্তু নানা অজুহাতে নির্ধারিত সময়ে তাদেরকে ইট দেয়া হয়নি। চুক্তি অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে ইট না পাওয়ায় অগ্রিম দেয়া টাকা ফেরত চেয়ে বারবার ধরনা দিয়েও ভুক্তভোগীদের টাকা ফেরত দেয় না সবেদুল ইসলাম। গত দুই মাস ধরে ইলশাবাড়ী এলাকায় অবস্থিত সুরমা ব্রিকস-১ ও সুরমা ব্রিকস-২ টাকা ফেরত না দেয়ায় অনেকে সর্বস্বান্ত হয়ে পথে বসেছেন।

ইলশাবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা সাইদুর রহমান বলেন, ‘আমি সুরমা ব্রিকস-১ ইটভাটা থেকে ৫৫ হাজার ৬০০ ইট কেনার জন্য সবেদুলকে ৫ লাখ ৪ হাজার টাকা অগ্রিম দেই। গত বছরের ১অক্টোবর এই টাকা দেই। চুক্তি অনুযায়ী ১ বছরের মধ্যে সব ইট দেয়ার কথা। বারবার তাগাদা দেয়া সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত একটি ইটও পাইনি। গত দুই মাস ধরে ভাটা মালিক ও ম্যানেজার সবাই উধাও। বন্ধ আছে ভাটার উৎপাদন কার্যক্রম। ইটভাটা মালিক সবেদুল ও তাঁর ম্যানেজারের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রতিকার চেয়ে বুধবার আমরা জেলা প্রশাসক, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছি।’

আদমদিঘী উপজেলার তারাপুর গ্রামের বাসিন্দা তপেস কুমার বলেন, ‘কম দামে দেড় লাখ ইট কেনার জন্য তিন বছর আগে সুরমা ব্রিকস ইটভাটা মালিক সবেদুলকে ৭ লাখ টাকা অগ্রিম দিয়েছিলাম। চুক্তি অনুযায়ী ১ বছরের মধ্যে সব ইটা দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো ইট পাইনি। আমার মতো নওগাঁ সদর, রাণীনগর ও আদমদিঘী উপজেলার আরও অর্ধশতাধিক মানুষ কম দামে ইট কেনার জন্য সুরমা ব্রিকস ইটভাটা মালিককে অগ্রিম টাকা দিয়ে ধরা খেয়েছেন।’

একাধিকবার ইটভাটার মালিক সবেদুল ইসলামের মুঠোফোনে কল করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। সবেদুল নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার পাটিচরা ইউপির চেয়ারম্যান। সুরমা মাল্টিপারপাস কো-অপারেটি সোসাইটি লিমিটেড নামের তার মালিকানাধীন একটি সমবায় সমিতিও রয়েছে। সেই সমিতির অনেক শাখাও বর্তমানে বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক স্থানে অর্থ ফেরতের দাবিতে সমিতির কার্যালয়ও ঘেরাও করার ঘটনাও ঘটেছে।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস.এম. রবিন শীষ জানান এই সংক্রান্ত একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরবর্তিতে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।