সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩ চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
আব্দুর রউফ রিপন, নওগাঁ প্রতিনিধি:
বাবদ (বিবরণ) ছাড়াই নওগাঁর পত্নীতলার নজিপুর মহিলা কলেজের ফান্ড থেকে প্রায় সাড়ে ৮ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুমানা আফরোজ কলেজের বিগত দুই অধ্যক্ষের সময় এই ব্যয় দেখিয়েছেন। কলেজের সভাপতির দায়িত্বকালে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে এ কাজ করেছেন বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় পরবর্তীতে দায়িত্বরতদের মনে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। এদিকে বিষয়টি সুরাহার পূর্বেই তার বদলি হয়ে চলে যান বগুড়ার আদমদীঘিতে। বর্তমানে তিনি সেখানে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দায়িত্ব পালন করছেন।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, প্রায় দেড় বছর আগে পত্নীতলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে যোগদান করেছিলেন রুমানা আফরোজ। এরপর নিয়ম অনুযায়ী উপজেলার নজিপুর মহিলা কলেজসহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি। নজিপুর মহিলা কলেজে সভাপতির দায়িত্বে থাকাকালে প্রথম দফায় খরচ দেখানো হয়েছে ১ লাখ ৯১ হাজার টাকা। ওই সময় কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলেন নূর উদ্দিন।
দ্বিতীয় দফায় কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলেন (২২ সালের ১অক্টোবর ২৩ সালেন ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) সাবিনা ইয়াসমিন। তখন ৬ লাখ ৫১ হাজার টাকা খরচ দেখানো হয়। আর এভাবেই বাবদ ছাড়াই কলেজের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ৮ লাখ ৪২ হাজার টাকা ব্যয় দেখিয়েছেন। যে ব্যয় রেজুলেশনে নেই কোনো বাবদ। নেই কোনো সুনির্দিষ্ট খরচের ভাউচার বলে একাধিক সূত্রে জানা যায়। তবে নিয়ম অনুসারে হিসাবের পরিপূর্ণতার জন্য আয় ও ব্যয়ের খরচ বিস্তারিত উল্লেখ ও ব্যয়ের বিবরণ দাখিল করতে হয়।
অপরদিকে ঘটনাটি কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ অশ্বিনী কুমারের মাধ্যমে জানার পর খরচের বাবদ না থাকায় রেজুলেশনের অনুমোদন দেননি সদ্য বদলি হওয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার টুকটুক তালুকদার। তিনিও বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) বদলি হয়েছেন। এতে করে কয়েকমাস শিক্ষকদের বেতন ভাতা সহ মাসিক খরচ আটকে ছিলো।
বাবদ ছাড়া কলেজ ফান্ডের ৬ লাখ ৫১ হাজার টাকা খরচ দেখানোর বিষয়ে নজিপুর মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) সাবিনা ইয়াসমিন মুঠোফোনে বলেন, বাবদ ছাড়া কলেজ ফান্ডের কোনোদিন খরচ হয় না। আপনাকে যে বলেছে সে ভুল বলেছে। এক টাকা খরচ হলেও সেটার ভাউচার ও বাবদ থাকে। এছাড়া এই খরচের বিষয়ে অডিট হয়েছে এবং মিটিং এ পাশ হয়েছে বলে জানান তিনি। অপরদিকে সাবেক অধ্যক্ষ অবসরে যাওয়ায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
বর্তমান নজিপুর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) অশ্বিনী কুমার জানান, ২০২৩ সালের ১ অক্টোবর থেকে আমি এই কলেজের দায়িত্ব পেয়েছি। রেজুলেশনে দুই দফায় খরচ দেখানো আছে, কিন্তু আমার জানামতে সেখানে বাবদ নেই। ওই রেজুলেশনে আমি স্বাক্ষরও দেয়নি। টাকা উত্তোলনের নিয়ম জানতে চাইলে তিনি জানান, সভাপতি ও অধ্যক্ষের যৌথ স্বাক্ষরে টাকা তুলতে হয়।
পত্নীতলা সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুমানা আফরোজ জানান, কলেজের বিষয়ে তিনি প্রশাসনিক শাখায় খোঁজ নিতে বলেন তিনি।
পত্নীতলা সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার টুকটুক তালুকদার জানান, এখানে আসার পর কলেজের বিষয়টি জানতে পারি। রেজুলেশনটি আমার কাছে অসংগতি মনে হয়েছে। সেজন্য আমি স্বাক্ষর দেয়নি। আমি গত সপ্তাহে বদলি হয়ে চলে এসেছি। বিস্তারিত জানতে কলেজে গিয়ে তদন্ত করতে বলেন তিনি।
বর্তমান পত্নীতলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার পপি খাতুন জানান, কয়েকদিন হলো আমি এখানে এসেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে।