নওগাঁয় মৎস্যজীবী সমিতির কেউই মৎস্যজীবী নন

আপডেট: মার্চ ২২, ২০২৪, ৪:২৮ অপরাহ্ণ

নওগাঁ প্রতিনিধি:


নামেই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি। সভাপতিসহ ২০ সদস্যের কেউই প্রকৃত মৎস্যজীবী নন। তাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে জলমহালের ইজারা নেয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। নওগাঁর সাপাহার উপজেলার ‘কল্যানপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড’ নামের এ সমিতির কাছে কোণঠাসা স্থানীয় প্রকৃত মৎস্যজীবীরা। ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁরা সাপাহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

নিবন্ধিত ও প্রকৃত মৎস্যজীবীদের পক্ষে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগটি করেন সাপাহার উপজেলার ছাতাহার মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লি. এর সভাপতি মো. মোজ্জামেল হক। সমিতিটির সকলেই নিবন্ধিত মৎস্যজীবী। আবেদনের অনুলিপি দেয়া হয়েছে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা মৎস্য অফিসার, উপজেলা সমবায় অফিসারসহ বিভিন্ন দপ্তরে।

অভিযোগে বলা হয়, অ-মৎস্যজীবীদের নিয়ে মো. আশরাফুল ইসলাম সভাপতি হিসেবে ‘কল্যাণপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড’ নামের ভুয়ানোসমিতি পরিচালনা করছেন। সমিতির কোন মৎস্যজীবী সদস্য না থাকার পরেও তাদের সমিতির নাম মৎস্যজীবী নাম রেখে বদ্ধ জলমহাল বাংলা ১৪৩১-১৪৩৩ মেয়াদে ইজারার জন্য আবেদন করেছেন।

অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, সমিতির নাম কল্যানপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লি. এর স্থলে কল্যানপুর মৎস্যচাষী সমবায় সমিতি লি. হবে। এজন্য সমিতির সদস্যদের এফআইডি কার্ড যাচাই-বাছাইসহ সমিতির কাগজপত্র দেখার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। কারণ, ওই সমিতির কারণে প্রকৃত মৎস্যজীবীরা বঞ্চিত হচ্ছেন।

ছাতাহার মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লি. এর সভাপতি মো. মোজ্জামেল হক বলেন, ২০০১ সালে জবই বিল সরকার যখন আমাদেরকে লিজ দেয় তখন সরকার আমাদেরকে একটি মৎস্যজীবীর কার্ড দিয়েছে। এরপর ২০১৫ সালে সরকার সারা দেশের মৎসজীবীদের একটি তালিকা করেছে এবং সেই তালিকা অনুযায়ী একটি করে এফআইডি কার্ড প্রত্যেক মৎস্যজীবীদেরকে দেয়া হয়েছে। সেই কার্ড আমাদের কমিটির সকল সদস্যের আছে। উপজেলা মৎস্য অফিস আমাদের সবার কার্ড জমা নিয়ে আমাদের কমিটি অনুমোদন দিয়েছে। অথচ তাদের মাত্র একজন ছাড়া অন্য কারো এফআইডি কার্ড নেই। এজন্য তাদের কমিটির কোনো ভিত্তি নেই। আর ভিত্তিহীন কোনো কমিটিকে উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটি কোনো জলমহাল ইজারা দিতে পারেন না।

কল্যাণপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লি. এর সভাপতি আশরাফুল ইসলাম স্বীকার করে বলেন, সাদেকুল ইসলাম, আনোয়ার হোসেন, হুমায়ন রেজা এবং তিনি নিজে মৎস্যজীবী নন।

তিনি বলেন, ‘২০১২ সালে লোকজনের পরামর্শে ভবিষ্যতের জন্য আমরা একটা কমিটি করি। তখন এসব কার্ড ছিল না। তাই আমাদেরও কোনো কার্ড করা হয়নি। আর তখন সমিতি কিভাবে হয় সবই আপনারা জানেন।’ তিনি আরোও বলেন, ‘কমিটির ঘটনা যাই হোক উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটি জবই বিলের জলমহাল আমাদের কমিটির নামেই ইজারা দিবেন।’

জেলা সমবায় দপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, সরকারি জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতি, ২০০৯ অনুযায়ী, যিনি প্রাকৃতিক উৎস থেকে মাছ শিকার ও বিক্রি করে প্রধানত জীবিকা নির্বাহ করেন, তিনিই প্রকৃত মৎস্যজীবী। সে হিসাবে কল্যানপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লি. এর ২০ সদস্যের কমিটির মধ্যে নুরুল হক ব্যতিত আর কারো সরকার প্রদত্ত মৎস্যজীবী পরিচয়পত্র বা এফআইডি কার্ড নেই। সভাপতি মো. আশরাফুল ইসলাম পেশায় কৃষক, অন্য দুই সদস্য হুমায়ন রেজা এবং আনোয়ার হোসেন করেন শিক্ষকতা। উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির গত বছর প্রণীত তালিকায়ও তাঁদের কারও নাম নেই।

সাপাহার উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা নাজমুল হাসান বলেন, আমাদের অফিস থেকে নিবন্ধন দিতে গেলে মৎস্যজীবীদের আইডেন্টিটি কার্ড অথবা উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে প্রত্যয়ণপত্র দিতে হয়। কল্যাণপুর মৎস্য সমবায় সমিতি লিমিটেডের পক্ষে মৎস্যজীবীদের কোনো আইডেন্টি কার্ড জমা না দিলেও উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে প্রত্যয়ণপত্র নিয়ে এসে তারা নিবন্ধন নিয়েছেন। সমিতির সদস্যরা প্রকৃত মৎস্যজীবী কিনা তা আমাদের দেখার এখতিয়ার নেই। এটা দেখবেন উপজেলা মৎস্য অফিস।তাদের বৈধতা এবং অবৈধতার ব্যাপারটি উপজেলা মৎস্য অফিসই জানাতে পারবেন।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোছা. রোজিনা পারভিন বলেন, কল্যানপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লি. এর ২০ সদস্যের মধ্যে ১৫ জন মৎস্যজীবী বলে তিনি দাবী করেন। অবশিষ্ট ৫ জন কোনোভাবেই মৎসজীবী নন। তবে এই ১৫ জনের মধ্যে মৎস্য অধিদপ্তর থেকে মৎসজীবী হিসেবে কার্ড দেয়া আছে মাত্র একজনকে। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনের সকলেই অবগত।

তিনি আরোও বলেন, কল্যানপুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লি. এর ওই কমিটি ২০১২ সালে গঠিত হলেও তারা ১৪ জন মৎস্যজীবী হিসেবে এখনো কোনো কার্ড করেননি বা পাননি। কেনো করেননি তা আমার জানা নেই।

সাপাহার উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুদ হোসেন বলেন,  উপজেলা জলমহাল ইজারা কমিটিতে বিষয়টি উপস্থাপন করা হবে। সেখানে আলোচনা সাপেক্ষে সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ