মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৮ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
নওগাঁ প্রতিনিধি:
উত্তরের খাদ্য ভান্ডার হিসেবে পরিচিত নওগাঁয় ভরা আমন মৌসুমেও হঠাৎ করে বেড়েছে চালের দাম। এতে করে চরম ভোগান্তিতে পরে দিন আনি দিন খাই শ্রেণির খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষরা। অপরদিকে নড়েচড়ে বসে সরকার। পরবর্তিতে সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক জেলার ১১টি উপজেলায় অবৈধ মজুদদারদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ অভিযান শুরু করে জেলা প্রশাসন।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর হঠাৎ করে জেলার হাট-বাজার মোকামগুলোতে ধান ও চালের দাম বৃদ্ধি হতে শুরু করে। এ নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে ধান চালের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে নির্দেশনা পাওয়ার পর স্থানীয় প্রশাসনও নড়েচড়ে ওঠে। এর একপর্যায়ে গত মঙ্গলবার থেকে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় অবৈধভাবে ধান-চাল মজুদদারদের সন্ধানে মাঠে নামে প্রশাসন। তারই ধারাবাহিকতায় গত শনিবার (২০ জানুয়ারি) পর্যন্ত মোট চারদিনে লাগাতার জেলার বিভিন্ন উপজেলার বড় বড় মিলে অবৈধ ধান ও চাল মজুদের বিরুদ্ধে ১৪টি ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করে ৮ লাখ ৯০ হাজার ৫শত টাকা জরিমানা আদায় করে স্ব স্ব ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারকগন।
শনিবার (২০ জানুয়ারি) বিকেলে সদর উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের মাদারমোল্লাহ হাটে অবস্থিত মেসার্স মফিজ উদ্দিন অটো: চালকলে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে কৃষি বিপনন আইন-২০১৮ এর ১৯ (ঠ) ও (ড) ধারায় চাল ইচ্ছেকৃত ভাবে পনের দিনের বেশি সময় ধরে মজুদ রেখে কৃত্রিম সংকট তৈরি করার অপরাধে ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড প্রদান করেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস. এম. রবিন শীষ। এছাড়াও শহরের আনন্দনগরে অবস্থিত আরএম রাইস মিলে অভিযান পরিচালনা করে ১ লাখ টাকা অর্থদন্ড প্রদান করা হয়েছে। এতে করে খুচরা বাজারে কিছুটা কমতে শুরু করেছে চালের দাম।
গত কয়েকদিনের অভিযানে চারদিনের ব্যবধানে অবৈধ মজুদদারদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করার কারণে নওগাঁর বাজারে প্রতি মণ ধানের দাম কমেছে ৬০থেকে ২০০টাকা। আর পাইকারি বাজারে চালের দাম কেজিতে কমেছে ২থেকে ৩টাকা পর্যন্ত। তবে খুচরা বাজারে এখনও আগের দামেই চাল বিক্রি হচ্ছে। গুদামে অবৈধ মজুদ বিরোধী অভিযানের ভয়ে চালকল মালিক ও ধান আড়তদাররা স্থানীয় বাজার থেকে ধান কেনা কমিয়ে দেওয়ায় ধানের কমতে শুরু করেছে। অপরদিকে হঠাৎ করে ধানের দাম প্রতি মণে ৬০থেকে ৭০টাকা কমে যাওয়ায় হতাশ কৃষকেরা।
কৃষিপণ্য বিপণন আইন-২০১৮ (সংশোধিত) অনুযায়ী, অটোমেটিক, হাসকিং ও মেজর চালকলের মালিকেরা তাঁদের পাক্ষিক (১৫ দিন) ছাঁটাই ক্ষমতার ৩ গুন ধান ও ২গুন চাল ৩০দিনের জন্য মজুত করতে পারবেন। পাইকারি ও খুচরা ধান-চাল বিক্রেতারা লাইসেন্স ক্যাপাসিটি অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৩০০ টন হতে সর্বনিম্ন ১৫ টন পর্যন্ত ধান ও চাল ৩০ দিন মজুদ রাখতে পারবেন।
নওগাঁর আলুপট্টি চাল মোকামের ব্যবসায়ী আবুল কালাম বলেন, মজুদবিরোধী অভিযান শুরুর পর থেকে মোকামে চাল কেনা-বেচা প্রায় নেই বলে চলে। আগে যেখানে একেকটা আড়ত থেকে প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ ট্রাক চাল বিক্রি হতো। এখন সেখানে এক ট্রাকও বিক্রি হচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে অনেক ব্যবসায়ী কম দামে চাল বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ গুদামে চালের মজুত পেলে যে কোনো মূহূর্তে জরিমানা গুনতে হতে পারে।
নওগাঁ জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, স্থানীয় মিল মালিক ছাড়াও কর্পোরেট ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোও গত কয়েক বছর ধরে প্রত্যন্ত এলকার হাট-বাজার থেকে ধান কিনছে। এছাড়া কিছু মানুষ আছে যারা ধান কিনে মজুদ করে রাখে। তারাও স্থানীয় বাজার থেকে ধান কিনছে। বাজারে প্রতিযোগিতা বেড়ে যাওয়ায় যত দিন যাচ্ছে ধান-চালের দাম ততই উর্ধ্বমুখী হচ্ছে। এর যেমন সুফল আছে, তেমনি কুফলও আছে। ধান-চালের দাম বেশি হওয়ায় কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন। অন্যদিকে যাদেরকে চাল কিনে খেতে হচ্ছে তাদেরকে ভোগান্তি হচ্ছে। এই অবস্থায় আমার পরামর্শ সরকারের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। কৃষক ও ভোক্তা উভয়ই যেন স্বস্তিতে থাকতে পারে সেদিকে নজর রাখতে হবে সরকারকে।
জেলা প্রশাসক মো. গোলাম মওলা বলেন, ধান-চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে গত মঙ্গলবার থেকে জেলার বিভিন্ন ধান-চালের প্রতিষ্ঠানে মজুদবিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অবৈধভাবে মজুদ করা ধান-চাল সঠিকভাবে খোলাবাজারে বিক্রি নিশ্চিত করতে সহকারী কমিশনার (ভূমি), কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা, উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক এবং একজন উপপরিদর্শকের (এসআই) সমন্বয়ে টিম গঠন করে দেওয়া হয়েছে। তারা বিষয়টি তদারকি করবেন। এছাড়া ধান চালের মূল্য সহনীয পর্যায়ে না আসা পর্যন্ত জেলা জুড়ে এমন অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি জানান।