নওগাঁয় সাইলেজের চাহিদা বাড়ছে

আপডেট: এপ্রিল ২৫, ২০২৫, ৭:১৮ অপরাহ্ণ

নওগাঁ প্রতিনিধি:


নওগাঁর রাণীনগরে দিন দিন সাইলেজের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেকেই বাণিজ্যক ভাবে সাইলেজ উৎপাদন করে লাভবান হচ্ছেন। এই সাইলেজ উৎপাদন করে খামারিরা নিজেদের চাহিদা পূরণের পর আশেপাশের ডেইরি খামারীদের মাঝেও সরবরাহ করছে। ফলে অধিক পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ পশুখাদ্য হিসেবে সাইলেজ খামারীদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। খামারীরা সাইলেজ তৈরি ও গাভীকে খাওয়ানোর বিষয়ে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন যা অদূর ভবিষ্যতে উপজেলা প্রাণিসম্পদকে আরো সমৃদ্ধ করবে বলে মনে করছেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ রফি ফয়সাল তালুকদার।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে মূলত: সাইলেজ হলো বায়ুশূন্য অবস্থায় প্রক্রিয়াজাতকৃত সবুজ ঘাস সংরক্ষণ পদ্ধতি। ঘাসের সাইলেজে শতকরা ৮৫ ভাগ পুষ্টি পাওয়া যায়। ঘাসের সমস্ত অংশই সংরক্ষণ করা যায়। বর্ষা মৌসুমে কাঁচা ঘাস সংরক্ষণ করা কঠিন কিন্তু সাইলেজ হিসেবে সহজেই সংরক্ষণ করা সম্ভব। সাইলেজ অত্যন্ত সুস্বাদু ও ল্যাকটিক এসিড খাদ্য। তাই আপদকালীন সময়ে গবাদি পশুর অধিকপুষ্টিগুন সমৃদ্ধ খাদ্য নিশ্চিত করতে চাইলে সাইলেজের কোন বিকল্প নেই। এছাড়া বাণিজ্যিক ভাবে সাইলেজ উৎপাদন করে অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব।

এই সাইলেজের প্রতি খামারীদের আগ্রহী করতে সরকারের পক্ষ থেকে নানা প্রকল্প ও উদ্েযাগ গ্রহণ করা হয়েছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের সার্বিক তত্ত্বাবধানে “প্রাণিসম্পদ ও প্রাণি পুষ্টি উন্নয়নে উন্নত জাতের ঘাস চাষ সম্প্রসারণ ও লাগসই প্রযুক্তি হস্তান্তর প্রকল্প” এর আওতায় ৮ টি ইউনিয়নের ১৬ জন সুফলভোগী খামারীকে সাইলেজ প্রযুক্তি হস্তান্তরের পাশাপাশি প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনী প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া “প্রাণিসম্পদ ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প (এলডিডিপি)” এর ম্যাচিং গ্রান্টের আওতায় পশু খাদ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের অধীনে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সাইলেজ উৎপাদনের নিমিত্তে উপজেলার মালশন গ্রামের খামারী আব্দুল মান্নান “মোল্লা কমিউনিটি বেজড সাইলেজ প্রডাকশন” প্রতিষ্ঠা করেছেন। মান্নান তার প্রক্রিয়াজাতকৃত সাইলেজ দিয়ে নিজের ৩০টি গাভীর চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বাজারজাত করছেন।

খামারী আব্দুল মান্নান জানান সাইলেজ অত্যন্ত লাভজনক একটি পশুখাদ্য। প্রথমে বিদেশী নেপিয়ারসহ অন্যান্য ঘাস মেশিনের মাধ্যমে কেটে নেয়া হয়। এরপর সেই ঘাসগুলোতে তরল গুরের (মোলাসেস) স্প্রে করা হয়। পরে ঘাসের স্তুপ থেকে বাতাস বের করে দিয়ে ভালো ভাবে প্রায় এক মাস ঢেকে রাখা হয়। এর মধ্যে ওই ঘাসগুলো সাইলেজে পরিণত হলে সেগুলো বস্তায় ভরে রাখা হয়। পরে বর্ষা মৌসুমে ও অন্যান্য আপদকালীন সময়ে অধিক পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ সাইলেজ গবাদী পশুকে সরবরাহ করা হয়। এতে করে গাভী পালনে খাদ্য খরচ কম হচ্ছে ও অধিক দুধ উৎপাদন হচ্ছে। কৃত্রিম প্রজননে ভালো সফলতাও পাওয়া যাচ্ছে। অপরদিকে সুস্থ সবল বাছুরের জন্ম হচ্ছে। সঠিক বয়সে যৌন পরিপক্বতা আসছে। পাশাপাশি দানাদার খাদ্যের প্রয়োজনীয়তাও কম হচ্ছে বিধায় উৎপাদন ব্যয় কম হচ্ছে। এছাড়া রোগ-ব্যাধি কম হওয়ার কারণে চিকিৎসা খরচ খুবই কম হচ্ছে। এককথায় বহুগুন সমৃদ্ধ সাইলেজ হচ্ছে খামারীদের জন্য আশীর্বাদ। বাণিজ্যিক ভাবে তিনি সাইলেজ উৎপাদন করে অনেক লাভবান হচ্ছেন।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ রফি ফয়সাল তালুকদার জানান প্রাণিসম্পদে সাইলেজ হলো একটি আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তি যার মাধ্যমে স্বল্প খরচে গাভীর প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। খামারীদের ক্ষেত্রে গাভী পালনে অথবা গরু হৃষ্টপুষ্ট করনের ক্ষেত্রে বড় একটি ব্যয়ের খাত হচ্ছে খাদ্য ক্রয়। বর্তমানে দানাদার খাদ্যের বাজার ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় খামারীরা গাভী পালনে অথবা গরু হৃষ্টপুষ্ট করনে আশানুরূপ লাভ পাচ্ছে না। কিন্তু এই সাইলেজ প্রযুক্তি ব্যবহার করে খাবারের ব্যয় অনেকাংশে কমানো সম্ভব যার ফলে খামারীরা গাভী পালন অথবা গরু হৃষ্টপুষ্টকরণ করে আশানুরূপ মুনাফা অর্জন করতে পারে।

সুতরাং সাইলেজ প্রযুক্তি খামারীদের জন্য একটি লাভজনক প্রযুক্তি। তাই সাইলেজ উৎপাদনে আগ্রহী অন্যান্য খামারীদের প্রতি প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে সব সময় সার্বিক সহযোগিতা প্রদান অব্যাহত থাকবে। প্রাণিসম্পদ দপ্তর দেশের ছোট থেকে বড় সব ধরণের খামারীদের পশুখাদ্য সংকট থেকে মুক্ত করে গবাদী পশু লালন-পালনে লাভবান করতে এই আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন সাইলেজ পদ্ধতি বিস্তার করতে বদ্ধ পরিকর।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ