শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
নওগাঁ প্রতিনিধি
একদিকে নতুন শিল্প ইউনিটের জায়গা পাচ্ছে না শিল্প উদ্যোক্তারা। অন্যদিকে নামমাত্র মূল্যে শিল্প ইউনিট নিয়ে যুগের পর যুগ কোন শিল্প গড়ে না তুলে সেখানে পেঁয়াজ চাষ করছে। এ চিত্র নওগাঁর বিসিক শিল্প নগরীর। নানা সমস্যার বেড়াজালে আটকে আছে এখানকার শিল্পায়ন ।
নওগাঁ শহর থেকে দুই কিলোমিটার দূরে এ শিল্প নগরী গড়ে তোলা হয় ২০০০ সালে। স্থানীয় উদ্যোক্তাদের শিল্পায়নের মাধ্যমে আর্থসামাজিক উন্নয়ন, বেকারত্ব দূরীকরণ, ক্ষুদ্র ও মাঝারী উদ্যোক্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৫.১৪ একর জমির ওপর নওগাঁ সদর থানার শালুকা ও মশরপুরে এ শিল্প নগরী গড়ে তোলা হয়। ২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ব্যয়ে সে সময় যেসব অবকাঠামো তৈরি করা হয় তার বেশিরভাগ এখন নড়বড়ে অবস্থা। দুর্বল ড্রেনেজ আর পয়নিষ্কাশন না থাকায় শিল্প নগরীর সড়কগুলো এখন খানা খন্দে ভরা। মোট ৮২টি প্লটের কাগজে ৮১টি বরাদ্ধ সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে ৫১ টি শিল্প ইউনিট সচল বলে জানিয়েছে শিল্প নগরীর কর্মকর্তারা। কিন্ত কাগজে-কলমে এ অগ্রগতি হলেও বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। কোটি টাকা বিনিয়োগ করে এ শিল্প অঞ্চলে উৎপাদন শুরু করতে পারছে না ৬টি শিল্প প্রতিষ্ঠান। রুগ্ন হিসেবে কাগজে এখানে ১টি শিল্প ইউনিট দেখানো হলেও ৫ টি ইউনিটে এখনো কোন উৎপাদন শুরু হয় নি। এগুলো গ্রহণের পর থেকে গাড়ির গ্যারেজ, লোহার বিভিন্ন যন্ত্রপাতি রাখার জায়গা করে ফেলে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে একটিতে এখন পেঁয়াজ চাষ হচ্ছে।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, সাইদ আলী নামের এক ব্যক্তির প্লটে পেঁয়াজ চাষ করা হচ্ছে। এ প্লটের একটি গুদামে স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরি চলছে গোপনে। স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরির জন্য ওষুধ প্রশাসনের অনুমতি বা বিএসটিআইয়ের অনুমোদন বাধ্যতামূলক হলেও এই প্রস্তুতকারীর কোনো বৈধ অনুমতিপত্র নেই। অভিযোগ আছে নাম সর্বস্ব এ রকম কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পেছনে শিল্প নগরীর কর্মকর্তারা জড়িত। অন্যদিকে শিল্প ইউনিট বাড়ানোর জন্য ব্যবসায়ীদের আবেদন গত প্রায় ১ যুগ ধরে ফাইলবন্দী অবস্থায় পড়ে আছে।
ব্যবসায়ীদের মধ্যে আবদুল বারিক ও আতাউর রহমান জানান, এখানে শিল্প সম্প্রসারণের জন্য জমি অধিগ্রহণ করে শিল্প প্লট দেয়ার জন্য আমরা অনেক দিন ধরে আবেদন করছি। কিন্ত প্রয়োজনীয় তদারকি আর প্রশাসনের ইচ্ছে না থাকায় এটার বাস্তবায়ন দেখা যাচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, এখানে আমরা যখন ব্যবসা বৃদ্ধির জন্য শিল্প প্লট প্রত্যাশা করছি তখন কয়েকজন যুগ যুগ ধরে প্লট নিয়ে দখলে রেখে পিঁয়াজ চাষ করছে। অথচ শিল্প নীতি হচ্ছে যদি কোন প্লট বরাদ্দের দুইবছর শিল্প প্রতিষ্ঠান না গড়ে তোলা তা হলে তার প্লট বাতিল করা বাধ্যতামূলক। এখানে তা মানা হচ্ছে না। অন্যদিকে বিদ্যুৎ গ্যাস সঙ্কটে বিব্রত জেলার শিল্প উদ্যোক্তরা। এখানে যে সব ক্ষুদ্র শিল্প ইউনিট গড়ে তোলা হয়েছে তা প্রচলিত বাজার দরে টিকতে পারছে না। বগুড়ায় গ্যাসে উৎপাদিত পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পেরে উঠছে না এখানকার কয়লা বা বিদ্যুত দিয়ে উৎপাদিত পন্য। এ মুহূর্তে কিছু অটো চাতাল আর একটি লোহার ছোট রড তৈরি ছাড়া বড় কোন ভারী শিল্প এখানে গড়ে উঠে নি। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে নাসিম ব্রাদার্সের মো. নাসিম জানান, এখানে ধানের তুষ দিয়ে একটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র করার পর প্রয়োজনীয় মূলধন ও সরকারি পৃষ্টপোষকতা না পাওয়ায় এ প্রকল্প ব্যর্থ হয়েছে। ব্যবসায়ীদের অনেকেই বলেন, শহরের কিছুটা দূরে হওয়ায় বিসিক শিল্প নগরীতে সন্ধ্যায় ভুতুড়ে অবস্থা বিরাজ করে। নেই পর্যাপ্ত লাইট ব্যবস্থা। তাছাড়া এখানে সে সময় পানি সরবরাহ করার যে সাবমার্সিবল বসানো হয়েছে তা উঠানো পানিতে অত্যান্ত আইরন আর গন্ধের কারণে পান করা যায় না। এসব সমস্যা জানানোর জন্য যেসব কর্মকর্তারা এখানে রয়েছেন তাদের ঠিকমতো পাওয়া যায় না বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
এ বিষয়ে নওগাঁ জেলা প্রশাসক ড. আমিনুর রহমান বলেন, বিসিক শিল্প নগরী সম্প্রসারণের জন্য ইতোমধ্যে প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে খুব দ্রত তা অনুমোদন পাবে। বিসিক শিল্প নগরীর উপব্যবস্থাপক মো. সানাউল হক জানান, বিসিকের পশ্চিমে জমি অধিগ্রহণের জন্য আমরা চেষ্টা করছি। আরো ৭০ একর জমি অধিগ্রহণ করার জন্য আন্তমন্ত্রণালয়ে আবদেন করা হয়েছে। আগামী সপ্তায় মন্ত্রণালয়ের একটি টিম ভিজিট করার কথা রয়েছে।