নওগাঁর মাঠে মাঠে সৌন্দর্য্য ছড়ায় সরিষার হলুদ ফুল

আপডেট: ডিসেম্বর ৪, ২০২৩, ১১:৪০ পূর্বাহ্ণ


আব্দুর রউফ রিপন, নওগাঁ প্রতিনিধি:


নওগাঁর মাঠে মাঠে শোভা পাচ্ছে সরিষার হলুদ ফুল। দিগন্তজোড়া মাঠে সরিষার হলুদ ফুলে ফুলে উড়ে মধু সংগ্রহ করতে ব্যস্ত মৌমাছি আর প্রজাপতি। আবহাওয়া সরিষা চাষের অনুকূলে থাকলে চলতি মৌসুমে জেলায় সরিষার বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা। এছাড়া সরিষার বর্তমান বাজারদর অব্যাহত থাকলে এবার সরিষার দামও ভালো পাওয়ার আশা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর জেলায় ৪৭ হাজার ৮শো হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছিলো। চলতি বছর তা বৃদ্ধি পেয়ে ৬৮ হাজার ৪১১ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীলসহ বিভিন্ন জাতের সরিষার চাষ হয়েছে। আর তেল জাতীয় ফসলের চাষ বৃদ্ধি করতে সরকারের পক্ষ থেকে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে চলতি মৌসুমে জেলার ১১টি উপজেলার ৩৪ হাজার প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষি প্রণোদনা হিসেবে বিনামূল্যে সার ও সরিষার বীজ প্রদান করা হয়েছে। ফলে দিন দিন জেলায় সরিষা আবাদের চাষও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

উত্তরাঞ্চলের খাদ্য ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত জেলা নওগাঁ। নওগাঁয় উৎপাদিত চালের সুনাম দেশজুড়ে। কিন্তু লাগাতার ধানের দাম না পাওয়ায় কৃষকরা ছুটছেন লাভজনক তেল জাতীয় ফসল সরিষা চাষের দিকে। তাই চলতি মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ জমিতে উন্নত জাতের সরিষা চাষ হয়েছে। বেড়ে ওঠা গাছ আর ফুল দেখে অধিক ফলনের স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা।

কম খরচ, কম পরিশ্রম আর কম সময়ে সরিষা চাষ করা যায় বলে এটি অত্যন্ত লাভজনক একটি ফসল। প্রতি বিঘা জমি থেকে চলতি মৌসুমে গড় ৫-৬ মণ সরিষার ফলন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গত বছর স্থানীয় বাজারগুলোতে উন্নত জাতের সরিষার দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকরা এবার সরিষা চাষে অধিক আগ্রহী হয়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন।

কৃষিবিদরা বলছেন, সরিষা চাষ করলে জমির উর্বরতা শক্তিও বৃদ্ধি পায় আর সরিষা তোলার পর বোরো ধান রোপন করা সম্ভব। যার কারণে প্রতি বছরই সরিষার চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রত্যেক সরিষা চাষী অধিক মুনাফা লাভ করবেন বলে মনে করছেন কৃষকরা।
রাণীনগর উপজেলার ঘোষগ্রামের চাষী আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন বিদেশি ভোজ্যতেলের উপর চাপ কমানোর আশায় সরিষা চাষের দিকে ঝুঁকেছি। আমি জমি ফেলে না রেখে আমন মৌসুমে স্বল্প মেয়াদি জীবনকালের ধান চাষের পর ৬বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। সরকারের কাছ থেকে কৃষি প্রণোদনা হিসেবে উচ্চফলনশীল জাতের সরিষার বীজ, সার ও অন্যান্য কারিগরি সহযোগিতা পেয়েছি। নিজে সরিষা উৎপাদন করে সেখান থেকে পাওয়া ভেজাল মুক্ত পুষ্টিকর সরিষার তৈল দিয়ে সারা বছর নিজেদের প্রয়োজন মিটাতে পারছি।

একই গ্রামের আরেক চাষী মিঠন বলেন, সরিষা গাছের পুরোটাই কাজে লাগে। তাই সরিষার চাষ অত্যন্ত লাভজনক। গতবছর আমরা প্রতিমণ সরিষার দাম পেয়েছি ২৮শো থেকে ৩ হাজার টাকা। তাই এই বছরও দাম যদি একটু বেশি পাওয়া যায় তাহলে দেশের সকল সরিষা চাষী অনেক লাভবান হতে পারবেন। এখন পর্যন্ত জমিতে যে পরিমাণ সরিষার দানা এসেছে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে চলতি মৌসুমেও ভালো ফলন পাওয়ার আশা করছি। এই সরিষা চাষের লাভ দিয়ে আমরা বোরো ধান চাষ করি। আগামীতেও আরো জমিতে সরিষা চাষ করবো।

রাণীনগর উপজেলা কৃষি অফিসের উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন দিন দিন সরিষা চাষ লাভজনক হওয়ায় বর্তমানে সরিষা ফসল কৃষকদের কাছে আশির্বাদের ফসল হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সব সময় মাঠ পর্যায়ে জমি ফেলে না রেখে সরিষা চাষের সার্বিক পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।

এবার কৃষকদের উচ্চফলনশীল ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন টরি জাতের সরিষা চাষের পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। আমরা আশাবাদি বর্তমান আবহাওয়া অব্যাহত থাকলে চলতি মৌসুমেও কৃষকরা সরিষার বাম্পার ফলন পাবেন।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) কৃষিবিদ খলিলুর রহমান বলেন বিদেশি ভোজ তেলের উপর চাপ কমানোর লক্ষ্যে সরকারের নির্দেশনা মোতাবে তেল জাতীয় ফসলের চাষ বৃদ্ধি করতে আমরা কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে আসছি।

মাঠ পর্যায়ে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে কৃষকদের সরিষা চাষ বিষয়ে পরামর্শ প্রদান কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। এবারো সরিষার বাম্পার ফলন হবে বলে আমরা আশাবাদি। দেশে যেভাবে দিন দিন সরিষার চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে এতে করে বিদেশি ভোজ্য তেল আমদানি অনেকটাই কমবে এবং সরকারের অনেক টাকা রাজস্ব হিসেবে অর্জিত হবে।