‘নওগাঁর সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে’

আপডেট: নভেম্বর ১০, ২০২৪, ৭:৩৪ অপরাহ্ণ

নওগাঁ প্রতিনিধি:


দেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলন ও চলমান পরিস্থিতির পর নওগাঁর সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। আগামীর দিনগুলোয় যেন শান্তিপূর্ণ নওগাঁর কোথাও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না হয়। সে বিষয়ে সার্বক্ষণিক গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে সকল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সজাগ রয়েছে। যারা সুযোগ বুঝে নওগাঁর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্বাভাবিক করতে নানা ধরণের পাঁয়তারা করার চেষ্টা করছেন তাদের জন্য এই সংবাদ সম্মেলন একটি কঠোর হুশিয়ারী বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল।



রোববার (১০ নভেম্বর) দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলার আইন-শৃঙ্খলার সার্বিক পরিস্থিতি বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জেলা প্রশাসক এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ও জনগনের নাগালের মধ্যে রাখতে টাস্কফোর্সের মাধ্যমে বাজার মনিটরিং, মাদক ও নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহারের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে। এছাড়াও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নির্দেশনা মোতাবেক জেলা ম্যাজিস্ট্রেসি থেকে ইস্যুকৃত সকল সমর্পনযোগ্য আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্সের বিপরীতে ক্রয়কৃত আগ্নেয়াস্ত্র জমা নেয়া হয়েছে। বর্তমানে জমাকৃত আগ্নেয়াস্ত্র কমিটির মাধ্যমে যাচাই-বাচাই করে ফেরত প্রদানের প্রক্রিয়া চলমান আছে।

দ্রব্যমূল্য জনগণের নাগালের মধ্যে রাখতে গত অক্টোবর মাস থেকে জেলায় ১৯টি টাস্কফোর্স অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এছাড়া এই বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের উদ্বুদ্ধকরণ সভা অব্যাহত রয়েছে। জেলায় ১লা নভেম্বর থেকে নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহারের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট ও সচেতনতামূলক গনসংযোগ করা হয়। জেলার ১১টি উপজেলা এবং ৩টি পৌরসভাতেই এই কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এই অভিযানে ১৭টি মামলায় ১৫,৬০০টাকা অর্থদন্ড প্রদান করা হয়েছে।

শহরের যানজট নিয়ন্ত্রণে অনিবন্ধিত অটোরিক্সা/থ্রি হুইলার পৌরসভার মাধ্যমে নিবন্ধনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। দ্রুতই এই সব অনিবন্ধিত যানবাহন শহরে প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হবে। সংশ্লিষ্ট সকলের সার্বিক সহযোগিতায় এবং জেলা প্রশাসন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ও আনসারসহ সকল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় জেলায় শারদীয় দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হয়েছে। জেলার মোট ৭৫৮টি পূজামন্ডপের প্রত্যেকটি মন্ডপে সিসি ক্যামেরা/আইপি ক্যামেরা স্থাপন, সার্বক্ষণিক আনসার সদস্য মোতায়েন, গুরুত্বপূর্ণ মন্ডপে পুলিশ সদস্য মোতায়েন করাসহ সেনাবাহিনী ও পুলিশের নিয়মিত টহলসহ সীমান্তে বিজিবির টহল ছিলো চোখে পড়ার মতো।

তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে জেলার শহিদদের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। সেইসাথে আহতদের চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুতির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। শত দুই মাসে জেলায় ১৫২টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে বিভিন্ন অপরাধের দায়ে ৪১০টি মামলায় ৬,৫৯,৯৫০টাকা অর্থদন্ড এবং ১৪০জনকে কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়েছে। সীমান্তে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখতে এবং চোরাচালান রোধে বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গত দুই মাসে ৩৩১৭টি অভিযান পরিচালনা করে ২১৪টি মামলায় ২৩৪জনকে আটক করা হয়েছে এবং ২,৬৭,৩৯,০৯২টাকা সমমূল্যের মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে। মাদকের বিরুদ্ধে টাস্কফোর্স অভিযানসহ নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

জেলায় বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক কারণে দায়েরকৃত হয়রানীমূলক মামলাসমূহ প্রত্যাহারের বিষয়ে গঠিত কমিটির সভা আয়োজন ও গণবিজ্ঞপ্তি জারি করাসহ এই সংক্রান্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। শ্রেণিকক্ষে নিয়মিত পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত রাখাসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হয়েছে। বর্তমানে সকল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসেনর সর্বাত্মক প্রচেষ্টটায় নওগাঁ জেলার সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ভবিষ্যতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যাতে অবনতি না হয় সে বিষয়ে সার্বক্ষণিক গোয়েন্দা নজরদারীসহ জেলা প্রশাসক, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও আনসারসহ সকল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বদা সচেষ্ট রয়েছে।

তাই আগামীতে যারা নওগাঁর এই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ অশান্ত করার চেষ্টা করবেন তারা যে দলেরই হন কেন তাদেরকে আইনের মাধ্যমে দীর্ঘ কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। সবার সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে আগামীর দিনগুলোয় নওগাঁবাসীকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে রাখার দায়িত্বভার প্রশাসনের সকল সদস্যরা নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে। তাই নওগাঁর শান্তিপূর্ণ পরিবেশের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে প্রশাসনকে সঠিক ও গঠনমূলক তথ্য প্রদান করে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য জেলার সকল শ্রেণিপেশার মানুষের প্রতি অনুরোধ জানান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল।

এসময় পুলিশ সুপার কুতুব উদ্দিন, জেলা প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তা, সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, দায়িত্বরত সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা, র‌্যাব. প্রশাসনের অন্যান্য কর্মকর্তারা ও জেলায় কর্মরত বিভিন্ন গনমাধ্যমের কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

 

Exit mobile version