সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১০ আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
এমআর রকি, নওগাঁ
নওগাঁয় শেষ সময়ে আমন খেতে কারেন্ট পোকার আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। জেলার সব চেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে পোরশা ও নিয়ামতপুর উপজেলার কৃষকরা। এ দুই উপজেলার মাঠগুলোতে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়েছে এ পোকার আক্রমণ।
কীটনাশক স্প্রে করেও কারেন্ট পোকা দমন করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা ফসল ঘরে তুলতে লোকসানের আশঙ্কা করছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি আমন মৌসুমে নিয়ামতপুরে ২৯ হাজার ২৬০ হেক্টর ও পোরশায় ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ করা হয়। এর মধ্যে নিয়ামতপুরে আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৮ হাজার ৭৭৬ হেক্টর।
কৃষকরা জানিয়েছেন, দুই উপজেলার আমন ধান ভালো হলেও ধান পাকার শেষ সময়ে গত সপ্তার শুরু থেকে ফসলে কারেন্ট পোকার (বাদামী ফড়িং) আক্রমণ দেখা দিয়েছে। পোকার আক্রমণে ধান গাছের গোড়া নষ্ট হওয়ায় ধান গাছের পাতা মরে যাচ্ছে। এদিকে কীটনাশক দিয়েও এই পোকা দমন করা সম্ভব হচ্ছে না। কারেন্ট পোকা ফসলের জন্য সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। একবার আক্রমণ করলে দ্রুত পুরো মাঠে ছড়িয়ে যেতে পারে। এই পোকা মূলত প্রথমে ধানের গোড়া কেটে দেয়। এতে ধানের মাথা সাদা হয়ে মরে যায়। ধানের ফলন না হয়ে চিটা হয়ে যায়।
নিয়ামতপুর উপজেলার বিভিন্ন ফসলি মাঠে প্রায় ৭৫ ভাগ কৃষক এবার স্বর্ণা জাতের ধান চাষাবাদ করেছেন। উপজেলার মাকলাহাট, শিবপুর, খড়িবাড়ীহাট, বালাতৈড়, রসুলপুর হাজিনগর, কুশমইলসহ বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৫শ বিঘা জমিতে এ পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে।
উপজেলার শারবাড়ী গ্রামের কৃষক আবদুর রহমান জানান, চলতি মৌসুমে ৯ বিঘা জমিতে স্বর্ণা জাতের ধান চাষাবাদ করেছেন। শুরুর দিকে ভালো থাকলেও শেষ সময়ে এসে তার ২-৩ বিঘা জমিতে কারেন্ট পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। ধানের গোড়া কেটে দেয়ায় ধানের গাছ সাদা হয়ে মরে যাচ্ছে। এ অবস্থায় তিনি ফসল নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ছেন। একই ধরনের সমস্যর কথা জানালেন আবদুল জব্বার, সবুজ হোসেন, আকবর রহমান, জালাল উদ্দিনসহ আরো বেশ কয়েকজন কৃষক।
পোরশা উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের জালুয়া গ্রামের কৃষক শহিদুল্লাহ, ইয়ার মোহাম্মদ, বদের মন্ডল, রমজান আলী, আবদুল আজিজ ও চান মোহাম্মদসহ কয়েকজন কৃষক জানান, গত সপ্তার শুরুর দিকে হঠাৎ করে অন্য কৃষকদের মতো তাদের জমিতে কারেন্ট পোকার আক্রমণ দেখা দেয়। রাতারাতি এই পোকা এক জমি থেকে অন্য জমিতে ছড়িয়ে পড়ছে।
ঘাটনগর ইউনিয়নের মাসিমপুর গ্রামের কৃষক সায়েদ আলী, আল-মামুনসহ কয়েকজন কৃষক জানান, দিন দিন এই পোকার আক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষি বিভাগ বিভিন্ন পরামর্শ দিলেও এখন পর্যন্ত পোকা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় নি। এই পোকার আক্রমণ ঠেকানো না গেলে ধানের ফলনে বিপর্যয় ঘটতে পারে।
এ বিষয়ে পোরশা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহবুবার রহমান এবং নিয়ামতপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আমির আবদুল্লাহ ওয়াহেদুজ্জামান জানান, পোকা দমনে উপজেলা জুড়ে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সচেতন করতে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত এ পোকার বিস্তার প্রকট আকার ধারণ করে নি। আশা করা হচ্ছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক ফসল কৃষকরা ঘরে তুলতে পারবেন।