রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৭ বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহীতে বৈশ্বিক খাদ্য হিসেবে দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্যের গুরুত্ব তুলে ধরার লক্ষ্যে বিশ্ব দুগ্ধ দিবস পালিত হয়েছে। সেই লক্ষ্যে ২০০১ সাল থেকে প্রতিবছর ১ জুন দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। সেই ধারাবাহিকতায় জেলা প্রশাসন ও জেলা প্রাণিসম্পদ দফতরের আয়োজনে র্যালি ও আলোচনা সভার মধ্যদিয়ে বিশ্ব দুগ্ধ দিবস পালিত হয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে শনিবার (১ জুন) সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মির্জা ইমাম উদ্দিন।
এর আগে, “বৈশ্বিক পুষ্টিতে দুধ অপরিহার্য”- প্রতিপাদ্যে জেলা প্রশাসককের কার্যালয়ের সামনে থেকে একটি র্যালি বের হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জেলা প্রশাসকরে সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভায় মিলিত হয়।
এসময় জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. জুলফিকার মো. আখতার হোসেন সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আবু সালেহ মো. আশরাফুল আলম।
সভার শুরুতেই মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, অতিরিক্ত জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. ফজলে রাব্বী।
কৃত্রিম প্রজনন ল্যাবরেটরির সিনিয়র সায়েন্টিফিক অফিসার ডা. অসীম কুমার প্রামাণিক এঁর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, নাবা ক্যাটেল অ্যান্ড ডেইরির এজিএম ডা. মো. আসাদুজ্জামান, আরএমভি ডেইরি অ্যান্ড এগ্রোর সত্ত্বাধিকারীদের পক্ষে মো. ফয়সাল বিন মাহবুব, নাহার ডেইরি অ্যান্ড এগ্রোর সত্ত্বাধিকারী গোলাম রাহী।
র্যালি ও আলোচনা সভায় পবা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুব্রত কুমার সরকারসহ জেলার সরকারি বিভন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, এনজিও প্রতিনিধি, দুগ্ধ খামারি, সাংবাদিকসহ গাভি পালনকারীরা অংশ নেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মির্জা ইমাম উদ্দিন বলেন, দুধ হচ্ছে একটি সুষম খাদ্য। দেহের মধ্যে জৈবিক ক্রিয়া, বৃদ্ধি ও শরীর গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় সকল উপাদান দুধে বিদ্যমান রয়েছে। দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার প্রোটিনের একটি ভালো উৎস। তাই দেশে দুগ্ধ খাতের উন্নয়নে আরও গবেষণার প্রয়োজন।
বিশেষ করে আরও বেশি পুষ্টিকর দুগ্ধজাত খাবার সৃষ্টি করা প্রয়োজন, যা ভোক্তার সুস্থ জীবন যাপনে সহায়তা করবে। তাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত নিয়মিত দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্য গ্রহণ করে দেহের পুষ্টি চাহিদা পূরণের মাধ্যমে মেধাবি জাতি গঠন করা ও বার্ধক্যের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা।
তিনি আরো জানান, দুধে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ফসফেট, ভিটামিন ডি এবং প্রোটিন মানবদেহের জন্য মূল পুষ্টি উপাদান, যা পেশি ও হাড়ের গঠন ও গুণমানকে প্রভাবিত করে। বর্তমান তরুণ সমাজ কোমল পানীয় ছাড়া তাদের দৈন্দিন জীবন কল্পনা করতে পারে না।
কিন্তু কোমল পানীয় স্বাস্থ্যসম্মত নয় বরং এতে থাকা অতিরিক্ত চিনি দেহে বিষের মতো ক্ষতিসাধন করে। তাই এসব কোমল পানীয় পরিহার করে দুধ ও দুগ্ধজাতপণ্য গ্রহণ সুস্থ সবল জাতি গঠনে ভূমিকা রাখবে।
জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. জুলফিকার মো. আখতার হোসেন বলেন, দুধের সংরক্ষণ ও বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। দুগ্ধ উৎপাদন আরো বাড়ানো সম্ভব হলে এর মাধ্যমে শুধু পুষ্টির চাহিদাই পূরণ হবে না, অর্থনৈতিকভাবেও খামারিরা বেশ লাভবান হবেন। মানব দেহের পুষ্টির ঘাটতি কমাতে দুগ্ধ শিল্পের উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সকলকের প্রতি আহবান জানান তিনি।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর রাজশাহীর তথ্যানুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে দুধের উৎপাদন ছিল ৯৯ দশমিক ২৩ লাখ মেট্রিক টন যা ৫ বছরে ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রায় দেড় গুণ বৃদ্ধি পায়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে দুধের চাহিদা ছিল ১৫৮ দশমিক ৫ লাখ মেট্রিক টন (জনপ্রতি চাহিদা ২৫০ মিলি ধরে), যার বিপরীতে উৎপাদন ছিল ১৪০ দশমিক ৬৮ লাখ মেট্রিক টন। ফলে জনপ্রতি দুধের প্রাপ্যতা দাঁড়িয়েছে ২২১ দশমিক ৮৯ মিলি। সুতরাং বলা যায়, দেশ আজ দুগ্ধ উৎপাদনে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ।
আলোচনা সভায় জানানো হয়েছে, প্রতি ১০০ গ্রাম দুধে গড়ে ৩.৪ গ্রাম প্রোটিন থাকে। এ ছাড়াও প্রতি ১০০ গ্রাম দুধে ৪২ ক্যালরি শক্তি, শর্করা ১ গ্রাম, ফ্যাট ১ গ্রাম, কোলেস্টেরল ৫ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১২৫ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ৪৪ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ১৫০ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৯৫ মিলিগ্রাম রয়েছে।
দুগ্ধজাত দ্রব্য বয়স্কদের জন্য পুষ্টি সরবরাহ করে, পেশির স্বাস্থ্য বজায় রাখে এবং বার্ধক্যজনিত পেশি ও হাড় ক্ষয় প্রতিরোধে সহায়তা করে। তাই দুগ্ধজাতদ্রব্য বয়স্ক জনগোষ্ঠীর জন্য অতি প্রয়োজনীয় খাদ্য হিসেবে বিবেচিত হয়। অন্যদিকে, এ ধরনের পুষ্টিসমৃদ্ধ দুগ্ধজাত দ্রব্য গ্রহণ বিপাকীয় রোগ এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগের প্রকোপ কমায় এবং কিডনির কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।