নিজস্ব প্রতিবেদক:
‘নারীর সমঅধিকার, সমসুযোগ, এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে নানা কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে রাজশাহীতে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপিত হয়েছে। শুক্রবার দিনব্যাপি সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান দিবসটি উদযাপন করেছে।
সকাল সাড়ে ৯টায় রাজশাহী জেলা প্রশাসন ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আয়োজনে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে শোভাযাত্রা নিয়ে অতিথিবৃন্দ কোর্ট শহিদ মিনারের সামনে দিয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে একই স্থানে এসে শেষ হয়। শোভাযাত্রা শেষে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর। তিনি বলেন, এই মার্চ মাসে বহু দিবস রয়েছে। বৃহস্পতিবার ৭মার্চ ছিল ঐতিহাসিক ভাষণ দিবস, আসছে ১৭ তারিখ জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী, আসছে ২৫ কালরাত্রী এবং ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস।
তিনি বলেন, যুগে যুগে নারীরা পুরুষের পাশে থেকে সাহস জুগিয়েছেন। সকল কাজে সহযোগিতা করেছেন। যার উদাহরণ ৭মার্চ বাংলাদশের স্বাধীনতাপূর্ব স্বাধীনতার ভাষণ। যার সাহস ও বুদ্ধি দিয়েছিলেন বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেসা। ১৯০৮সালে আমেরিকাতে ন্যায্য মজুরীর জন্য আন্দোলন করেছিলেন। সেই থেকে নানা পর্যায়ের পর থেকে এই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। সেইসাথে এটা জাতিসংঘেও অনুমোদিত হয়েছে।
তিনি বলেন, ১৯৭২ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু নারীদের অধিকার সংরক্ষণে চাকরীর জন্য ১০ভাগ কোটা বাস্তবায়ন করেছিলেন। নারীরা এখন সর্বক্ষেত্রে চাকরী করছে। শুধু তাই নয়, আইন প্রনয়ণ থেকে শুরু করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় পুরুষের পাশাপাশি কাজ করে যাচ্ছে। ২০০৮ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় আসার পরে দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ শুরু করেন। কিন্তু বর্তমানে সেই প্রধানমন্ত্রী এখন বাংলাদশেকে স্মার্ট হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কাজ শুরু করেছেন। আর এটা করতে হলে সবাইকে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও শিক্ষাদীক্ষায় স্মার্ট হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সরকারের ১০টি সূচকের মধ্যে নারী উন্নয়ন হচ্ছে একটা সূচক। এই সূচক বাস্তবায়ন করতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ষাটভাগ নারী কোটা করা হয়। সেই সাথে বিভিন্ন কমিটি ও স্থানীয় ও জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের ব্যবস্থা করা করেছেন সরকার। নীতি নির্ধারনী জায়গাতে নারীদের অংশগ্রহণ এখন উল্লেখযোগ্য বলে জানান তিনি। নারীদের উন্নয়নে নারীরা অনেকাংশে বাধা এবং নারী নির্যাতনেও নারীরা কম এগিয়ে নাই উল্লেখ করে সকল অপকর্ম থেকে বেড়িয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে নারী উন্নয়নের তাঁর সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে জানান। বক্তব্য শেষে দুই জন নারীর হাতে সেলাই মেশিন তুলে দেন অতিথিবৃন্দ।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদের সভাপতিত্বে সভায় শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন, রাজশাহী মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপপরিচালক শবনম শিরিন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও নারী নেত্রী শাহীন আকতার রেনী। এসময় উপস্থিত ছিলেন, রাজশাহী জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) জয়া মারিয়া পেরেরা, এডিএম সাবিহা সুলতানা, এজিইডি এর নির্বাহী প্রকৌশলী নাসির উদ্দীন, রাসিক সংরক্ষিত নারী আসনের কাউন্সিলর সাগরিকা, দিনের আলো হিজড়া সংঘের সভাপতি মোহনা ও ওয়েভ ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি মানুয়েল টুডুসহ সরকারী বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন স্তরের নারী নেতৃবৃন্দ।
সনাক:
নারীর সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), রাজশাহী’র উদ্যোগে এবং বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের অংশগ্রহণে ‘র্যালি, মানববন্ধন ও পথসভার মাধ্যমে দিবসটি পালন করা হয়। র্যালি সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট থেকে শুরু হয়ে আলুপট্টি মোড়ে পথসভার মাধ্যমে শেষ হয়।
সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ প্রতি বছর অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করে। জাতিসংঘ এ বছর ‘ওহাবংঃ রহ ডড়সবহ: অপপবষবৎধঃব চৎড়মৎবংং’– ‘উন্নয়নকে তরান্বিত করতে নারীর কল্যাণে বিনিয়োগ’ শীর্ষক প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে। বাংলাদেশ সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় ‘নারীর সমঅধিকার, সমসুযোগ; এগিয়ে নিতে হোক বিনিয়োগ’Ñপ্রতিপাদ্যে দিবসটি উদ্যাপন করছে। ‘নারী অধিকার ও দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন একসূত্রে গাঁথা’-এই চেতনায় টিআইবি প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করছে।
মানববন্ধন ও পথসভায় বক্তব্য দেন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ রাজশাহী জেলার সভাপতি কল্পনা রায়, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি’র পরিচালক (লিগ্যাল) ও সনাক সদস্য অ্যাডভোকেট দিলসেতারা বেগম (চুনি), বরেন্দ্র উন্নয়ন প্রচেষ্টার আতিয়া তাসনিম, আপসের নির্বাহী পরিচালক আবুল বাশার পল্টু, সনাক সদস্য আলিমা খাতুন লিমা প্রমুখ। র্যালি, মানববন্ধন ও পথসভায় অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি, পরিবর্তন, আপস, এডাব এবং বরেন্দ্র উন্নয়ন প্রচেষ্টা, রাজশাহী।