নগরীতে রমরমা জুয়ার আসর

আপডেট: মার্চ ১৪, ২০২৪, ১২:১৫ পূর্বাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক:রাজশাহী মহানগরীতে প্রতি রাতে বসছে রমরমা জুয়ার আসর। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে চুনোপুঁটিরা গ্রেফতার হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে রাঘব-বোয়ালরা। গ্রেফতারের পর জামিন নিয়ে আবারও জড়িয়ে যাচ্ছে জুয়ার নেশায়। প্রতিরাতে রাজশাহী মহানগরীর অন্তত ৫০টি স্থানে বসছে জুয়ার আসর। প্রতিরাতে জুয়ার আসরে বসেন নিম্নআয়ের মানুষ। পেশায় অনেকে দিনমজুর। আর কিছু আসরে বসেন বড় ব্যবসায়ী, ঠিকাদার এমনকি সরকারি চাকরিজীবীরাও।

জুয়ার আসর খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী নগরীর সবচেয়ে বেশি জুয়ার আসর বসে রাজপাড়া থানা এলাকায়। এরপর কাশিয়াডাঙ্গা, বোয়ালিয়া, মতিহার, চন্দ্রিমা ও পবা থানা এলাকায় জুয়ার আসর বসে। মাঝেমধ্যেই এসব এলাকায় অভিযান চালিয়ে টাকা, তাসসহ জুয়াড়িদের গ্রেফতার করে রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা। সবশেষ ১৬ মার্চ কাশিয়াডাঙ্গা থানার বালিয়া এলাকা থেকে সাত জুয়াড়িকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। গত কয়েক বছর থেকে ডিবি পুলিশ জুয়ার আসরে হানা দিয়ে জুয়াড়িদের গ্রেফতার করেছে। ডিবি ছাড়া থানা-পুলিশের পক্ষ থেকে অভিযান চালানো হয় না বললেই চলে। তবে এসব অভিযানে বড়বড় জুয়াড়িরা থেকে যাচ্ছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, এ বছরের আড়াই মাসে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে মাত্র তিনটি। এর মধ্যে ধরা পরেছে মাত্র ২০ জুয়াড়ি। গেল মার্চ কাশিয়াডাঙ্গা থানা থেকে ৭ জন, ১০ মার্চ আবারও কাশিয়াডাঙ্গা থানা থেকে ৭ জন ২৪ ফেব্রুয়ারি রাজপাড়া থেকে ৬ জনকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ।

জুয়ার আসর এছাড়া এর তিন মাস আগে ২৮ অক্টোবর অভিযান পরিচালনা করা হয়। ওইদিন শিরোইল বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে ৬ জন জুয়াড়িকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া ১৭ অক্টোবর বোয়ালিয়া থানার পাঠানপাড়া থেকে ৭ জন ও ৭ অক্টোবর পবা থানা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর সবই অভিযান পরিচালনা নগর গোয়েন্দা পুলিশ। তবে পুলিশের অভিযান নেই বললেই চলে।

জুয়ার আসর আগে জেলা ক্রীড়া সংস্থার হাউজি খেলা হতো। এই হাউজি খেলতে যেতেন ব্যবসায়ী ও ঠিকাদার শ্রেণির লোকেরা। এখন হাউজি খেলা বন্ধ। এই জুয়াড়িরা এখন বিভিন্ন এলাকায় জুয়ার আসরে টাকা ওড়াচ্ছেন। প্রতি রাতে জুয়ায় বিপুল পরিমাণে টাকার লেনদেন হচ্ছে। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে নগরীর শেখপাড়া এলাকার একটি আবাসিক হোটেলে জুয়া খেলার সময় পুলিশের এমন আট সদস্য গ্রেফতার হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ছয়জন আরএমপিতে কর্মরত ছিলেন। অন্য দু’জন ছিলেন জেলা পুলিশে। পরে এই পুলিশ সদস্যদের সাময়িক বরখাস্ত করে বিভাগীয় মামলা করা হয়। এ ছাড়া ২০১৭ সালে জুয়া খেলার সময় রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের তিন কারারক্ষীও গ্রেফতার হয়েছিলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখন প্রতি রাতে নগরীর শিরোইল বাস টার্মিনাল এলাকায় জুয়ার আসর বসছে। এখানকার জুয়ার টাকার একটা অংশ শ্রমিকনেতাদের মধ্যে ভাগ-বাঁটোয়ারা হয়। ২০২০ সালে র‌্যাব একবার এই জুয়ার আসরে অভিযান চালিয়ে ২৬ জনকে গ্রেফতার করেছিল। এরপর কিছুদিন বন্ধ থাকলেও পরে আবার শুরু হয়ে যায়। এখন জুয়ার বিরুদ্ধে ডিবি পুলিশের অভিযান চললেও থানার পুলিশ বসে আছে হাত গুটিয়ে।

বর্তমানে প্রতি রাতে নগরীর রাজপাড়া থানার আইডি বাগানপাড়া বস্তি, বহরমপুর মোড়ের একটি ইন্টারনেট পরিষেবার কার্যালয়, নিমতলা মোড়, বসুয়া আলীর মোড়, তেরখাদিয়া মধ্যপাড়া ও ডিঙ্গাডোবা এলাকায় রমরমা জুয়ার আসর বসে। এ ছাড়া কাশিয়াডাঙ্গা থানা এলাকার গোবিন্দপুর, কাঁঠালবাড়িয়া, চারখুটার মোড় ও রায়পাড়া এলাকার কয়েকটি বাড়িতে এবং বোয়ালিয়া থানা এলাকায় বাস টার্মিনাল ছাড়াও পাঁচানিমাঠ পদ্মা পাড়ের বস্তি, খরবোনা, হাদির মোড়, পঞ্চবটি, দড়িখড়বোনা, শালবাগানসহ বিভিন্ন এলাকায় জুয়ার আসর বসছে। প্রতিটি আসর পরিচালনা করেন একেকজন ব্যক্তি। যারা পুলিশের সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন।

নগরীর এক ব্যবসায়ী জুয়া খেলতে খেলতে নিজের সবকিছুই শেষ করেছেন। এখন ব্যবসাও বন্ধ। বাড়িটিও বিক্রি করে দিয়েছেন। ওই ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, জুয়ার নেশায় আমি শেষ হয়ে গেছি। নিজের ব্যবসাও বন্ধ হয়ে গেছে। বাড়িটাও বিক্রি করে দিতে হয়েছে। আজ হেরেছি, কাল জিতবÑ এই ভেবে খেলতে খেলতে আমি একেবারে শেষ হয়ে গেছি।

তিনি বলেন, যারা আসর পরিচালনা করেন, তাদের সঙ্গে থানার কারও না কারও যোগাযোগ আছে। থানার ওই লোককে বলা যায় ক্যাশিয়ার। বড় কর্মকর্তার নাম বলে তিনি মাসে মাসে টাকা নিয়ে যান। থানা থেকে কেউ অভিযানে আসতে চাইলে আগাম ফোন করে জানিয়ে দেন। সেদিন কেউ বসে না।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার জামিরুল ইসলাম বলেন, জুয়ার আইন খুব শক্ত না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে গ্রেফতারের পর জরিমানা দিয়েই জুয়াড়িরা মুক্তি পেয়ে যান। তাই তারা আবার জুয়ার আসরে বসেন। তাদের ধরতে প্রায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। খবর দেওয়া কিংবা জুয়ার আসর থেকে টাকা নেওয়ার ব্যাপারে কোনো পুলিশ সদস্যের জড়িত থাকার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ