বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ৯ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক
ভেস্তে যেতে বসেছে নগরীর তেরোখাদিয়া কাঁচাবাজার নিয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের পরিকল্পনা। জলে যাবার উপক্রম হয়েছে এই কাঁচা বাজার নির্মাণাধীন ব্যয় ৭৬ লাখ টাকা। কারণ উদ্বোধনের দুই বছর পার হলেও কাঁচা বাজারটি চালু করতে পারেনি সিটি করপোরেশন। ভবন থাকলেও তার সামনেই ফুটপাতে দোকান বসিয়ে ব্যবসা করছেন ব্যবসায়ীরা। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন ওই সড়কে যাতায়াতকারী মানুষজন।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ দোকান ঘর বরাদ্দ নিতে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রচুর টাকা নিচ্ছেন। যা স্থানীয় এই ব্যবসায়ীদের পক্ষে দেয়া সম্ভব না। এছাড়া দোকানের ভেতর বরাদ্দকৃত জায়গার পরিমাণ কম। প্রশস্ত করিডোরও নেই। ক্রেতাদের দোকানের ভেতর কষ্ট করে ঢুকতে হয়। সবজি ও মাছের দোকান ঘর লাগোয়া হওয়ায় ক্রেতাদের চলাচলে অসুবিধা হয়।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, ৭৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন তেরোখাদিয়া কাঁচা বাজারে দোকান ঘর রয়েছে ৫১টি। এতে মুদি ব্যবসার জন্য ২৫টি এবং সবজি, মাছ ও মাংসের জন্য ২৬টি ছোট ছোট দোকানঘর রয়েছে। এর মধ্যে মুদির ১৪টি, সবজি বিক্রির ২টি ও মাছ বিক্রির ৮টি দোকান ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, মুদির দোকান ঘর বরাদ্দ পেতে একজন ব্যবসায়ীকে ভ্যাট বাদে ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ও সবজি বিক্রির দোকান ঘর পেতে ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা জামানত দিতে হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম দুইটি সবজি বিক্রির দোকান ঘর বরাদ্দ পেতে দিতে হয়েছে ভ্যাটসহ ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা। মাছ বিক্রির দোকান ঘর বরাদ্দ পেতে এককালীন ২০ হাজার টাকার সঙ্গে প্রতি মাসে ৩ হাজার ৫০০ টাকা করে এক বছর দিতে হয়েছে ব্যবসায়ীদের।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে সিটি করপোরেশনের বরখাস্ত মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল তেরোখাদিয়া কাঁচা বাজারের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর বরাদ্দকৃত দোকান ঘরগুলোতে এক সপ্তাহের মতো বসেছিল ব্যবসায়ীরা। বিক্রি না হওয়ায় পুনরায় ব্যবসায়ীরা ফুটপাতের ওপর দোকান দিয়ে ব্যবসা শুরু করেছে।
সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের আমলে তেরোখাদিয়া কাঁচা বাজারের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। তখন এর নির্মাণ ব্যয় ছিল ৬০ লাখ টাকা। পরিকল্পনায় ছিল পিলারের ওপর ছাদ তৈরি করে সামনের দিকে ফাঁকা রাখা। যাতে খোলামেলা পরিবেশ থাকে ও লোকজন সহজে বাজারে ঢুকে বাজার করতে পারে। এর পরে মেয়র নির্বাচিত হন মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। তখন এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৭৬ লাখ টাকা। মেয়র বুলবুল আগের পরিকল্পনায় পরিবর্তন এনে নতুনভাবে ওই বাজারে মাছের জন্য দোকান ঘর নির্মাণের নির্দেশ দেন। তার নির্দেশানুযায়ী মাছ বিক্রির জন্য দোকান ঘর তৈরি করা হয়। এজন্য পার্টিশান দিয়ে দোকান ঘর বাড়ানো হয়। চারদিকে গ্রিল দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়।
আবুল, আনিছারসহ কয়েকজন মাছ বিক্রেতা জানান, গরীব মানুষরা এত টাকা কোথায় পাব? যে কয়টাকা পুঁজি নিয়ে ব্যবসা করি, তাতে কোনোরকমে খেয়েপড়ে চলে। দোকান নেব কীভাবে?
সবজির দোকানদার সোহেল বলেন, দোকান তো নিয়েছি। কিন্তু ব্যবসা হচ্ছে না। দোকানে বসলে সকাল ১১টার পর আর কোনো খদ্দের দোকানের ভেতর ঢুকে না। এক সপ্তাহ ভেতরে বসেছিলাম, সেই এক সপ্তায় ব্যবসায় লস হয়েছে। যারা ফুটপাতে বসে কাস্টমাররা তাদের কাছ থেকে সবজি নিয়ে চলে যায়।
সবজি ব্যবসায়ী ইউনূস বলেন, অতিরিক্ত দাম দোকানের। এত দাম না রেখে যদি আমাদের কাছ থেকে প্রতিদিন ২০ টাকা করে নিত তাহলেও আমরা দিতে পারতাম।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম জানান, আমরা মার্কেটেই ব্যবসা পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কতিপয় স্থানীয় মধ্যসত্ত্বভোগীদের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ ফুটপাতে ব্যবসা করলে তাদের কোনো অর্থ ব্যয় হয় না। এইজন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ফুটপাত উচ্ছেদ করা হবে। এরপর যারা মার্কেটে দোকানঘর নিয়ে ব্যবসা করবে তারা থাকবে, যারা দোকানঘর নিবে না তারা ব্যবসা করতে পারবে না।