নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন মুদি দোকান ও সুপারশপে মিলছে না বোতলজাত সয়াবিন তেল। মুদি দোকানগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে খোলা সয়াবিন তেল। বাড়তি দামেও মিলছে না বোতলজাত তেল। ডিলাররা সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে বলে জানাচ্ছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। আর ডিলারদের ভাষ্য, কম্পানি থেকে তেল পাওয়া যাচ্ছে না। এজন্য সরবরাহ কমানো হয়েছে।
নগরীর খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বাজারে দু-তিনটি কম্পানি ছাড়া অন্য কোনো ব্র্যান্ডের বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। আর যেসব ব্র্যান্ডের তেল পাওয়া যাচ্ছে, তাও চাহিদার তুলনায় নেহাতই কম। বিশেষ করে এক ও দুই লিটারের বোতলের সরবরাহ একেবারেই কম। আর পাঁচ লিটার মোটেও পাওয়া যাচ্ছে না। তবে বাজারে খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের সরবরাহ ঠিক আছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, রমজানকে টার্গেট করে বাজার থেকে হঠাৎ করে সয়াবিন তেল উধাও করা হচ্ছে। রোজাকে ঘিরে পুরোনো সিন্ডিকেট আবারও সক্রিয় হয়েছে। কম্পানিগুলো মিল পর্যায় থেকে তেলের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে। ডিলারের কাছে কমিয়ে দেয়া হয়েছে সরবরাহ। আর ডিলার থেকে খুচরা বাজারে সরবরাহ কমিয়ে বাড়ানো হচ্ছে দাম।
তবে বাড়তি দামেও চাহিদামতো ভোজ্যতেল পাচ্ছেন না খুচরা বিক্রেতারা। এতে বাজার থেকে এক প্রকার উধাও হয়েছে সয়াবিন তেল। পণ্যটির দাম সহনীয় রাখতে গত ১৭ অক্টোবর পাম ও সয়াবিন তেলের মূল্য সংযোজন কর ১৫ শতাংশ কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়। আর উৎপাদন ও ব্যবসা পর্যায়ে সয়াবিন ও পাম তেলের মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতি দেয়া হয়।
তবে মাসের ব্যবধানে লিটারে ২০ টাকা বেড়ে খোলা সয়াবিন খুচরা বাজারে ১৮৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আর লিটারে ৩ টাকা বেড়ে বোতলজাত বিক্রি হচ্ছে ১৬৭-১৭০ টাকা। সঙ্গে ১৫ দিনের ব্যবধানে পাম তেল ও রাইসব্রান তেলের দরও লিটারে ৬ থেকে ২০ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে। এতে আসন্ন রোজায় বাজার আরো অস্থির হওয়ার আশঙ্কা করছেন ভোক্তারা। তারা বলছেন, প্রতিবছরের মতো এবারও রমজানে বাড়তি দরেই ভোজ্যতেল কিনতে হবে।
সাহেববাজারের মুদি দোকানি আবদুল মোতালেব বলেন, ২ সপ্তাহ আগেও ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল ৭৯০-৮০০ টাকা দিয়ে কিনেছি। আর খুচরা পর্যায়ে ৮১৮ টাকায় বিক্রি করেছি। এখন ভোজ্যতেল পাওয়া যাচ্ছে না। ডিলাররা অল্প পরিমাণে সরবরাহ করছেন। সংকট দেখিয়ে এখন ৮১০ টাকা দিয়ে বিক্রি করছেন তারা। তবে সরকার নির্ধারিত পণ্যেও মোড়কে খুচরা মূল্য ৮১৮ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, এক লিটার বোতলজাত তেলেও একই অবস্থা। লিটারে সয়াবিন তেল ১৬৭-১৭০ টাকা খুচরা মূল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে। এ তেল ডিলারদের কাছ থেকে ১৬২ টাকা দিয়ে কিনতাম। এখন ১৬৫ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। রূপচাঁদা, তীর, বসুন্ধরা, ফ্রেশসহ সব কম্পানি একই রেট ধরে দিচ্ছে।
দেশে যেসব ভোগ্যপণ্য আমদানি করা হয়, এর প্রায় সবকটির দামই আন্তর্জাতিক বাজারে কমেছে। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ডিসেম্বরে প্রতি টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের দাম ছিল ১ হাজার ১০৫ ডলার। গত আগস্টে তা কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩১ ডলারে। সেপ্টেম্বরে আবার কিছুটা বেড়ে ১ হাজার ৪৪ ডলারে দাঁড়িয়েছে। তবে সার্বিকভাবে এর দাম নিম্নমুখি। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও দেশের বাজারে এর দাম ঊর্ধ্বমুখি।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, আগের সপ্তাহের তুলনায় খুচরা পর্যায়ে খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৪-৫ টাকা ও পাম তেলের দাম ৩-৪ টাকা কমেছে। বর্তমানে এক লিটার খোলা সয়াবিন ১৬৫-১৬৮ টাকা এবং এক লিটার খোলা পাম তেল ১৫৭-১৫৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যদিও এক মাস আগের তুলনায় খোলা পাম ও সয়াবিনের দাম এখনো বেশি।
সপ্তাহ দুই আগেও বাজারে বোতলজাত সয়াবিনের সরবরাহ-সংকট তৈরি হয়। পরে সরকার ভোজ্যতেল আমদানিতে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করে। পরে ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী কম্পানিগুলো বোতলজাত তেলের সরবরাহ বাড়ায়। যদিও গত তিন-চার দিনে তা আবার কমেছে।
এ বিষয়ে ভোজ্যতেল কম্পানিগুলোর কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।