সোমবার, ২ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৭ আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
বুলবুল হাবিব
রাজশাহী নগরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নগরবাসীর জন্য বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। ট্রাফিক আইন না মানায় ঘটছে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা। নগরীতে রাস্তায় লেগে থাকছে দীর্ঘ যানজটের সারি। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, অটোরিকশার জন্য নগরে পা ফেলা দায় হয়ে গেছে। সিটি করপোরেশন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এক বছর আগে থেকে লাইসেন্সে দেয়া বন্ধ থাকা সত্ত্বেও নগরীর বিক্রয়কেন্দ্রে চলছে অটোরিকশা বিক্রি। রাস্তায় একই নম্বর প্লেটে চলছে একাধিক অটোরিকশা।
অভিযোগ রয়েছে, লাইসেন্স দেয়া বন্ধ থাকা সত্ত্বেও নম্বর জালিয়াতি করে রাস্তায় নামছে নতুন নতুন অটোরিকশা। এ জালিয়াতির সঙ্গে খোদ সিটি করপোরেশনরে কর্মকর্তারা সম্পৃক্ত রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যাটারিচালিত শ্রমিক সংগঠনের নেতা বলেন, গত রোববার একজন অটোরিকশা চালকের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি পুরাতন নম্বর নতুন করে নবায়ন করে নিয়েছেন। নবায়ন করে নিতে ১২ হাজার টাকার মতো লেগেছে। এমনিতে সিটি করপোরেশন থেকে অটোরিকশা নিবন্ধন করতে খরচ হয় ১৫০০ টাকা।
মাত্রাতিরিক্ত অটোরিকশার কারণে নগরীর প্রাণকেন্দ্র সাহেববাজার এলাকায় তৈরি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। সাহেবাজার জিরোপয়েন্ট এলাকায় চার লেনের ওপর চারটি সারিতে দাঁড়িয়ে থাকে অটোরিকশা। ফলে রাস্তা পারাপারে ভোগান্তির শেষ থাকে না। জিরোপয়েন্টের চার লেনের ওপর যাত্রী তোলার জন্য চারটি সারিতে অটোরিকশা দাঁড়িয়ে থাকার কারণে অন্য যানবাহন ও পথচারীদের পথ চলতে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এছাড়া যাত্রী তোলার জন্য রাস্তার সব জায়গায় দাঁড়ায় চালকরা। ট্রাফিক আইন অমান্য করে তুলে যাত্রী। ফলে প্রতিনিয়ত ঘটে দুর্ঘটনা। ইতোমধ্যে নগরীতে কয়েকমাসে অটোরিকশার ধাক্কায় পাঁচজনের মতো মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া প্রতিনিয়ত ছোটখাট দুর্ঘটনা লেগেই রয়েছে।
বেসরকারিভাবে ১২ হাজারের মতো অটোরিকশা নগরীর রাস্তায় চলাচল করলেও রাজশাহী সিটি করপোরেশন সূত্রে জানিয়েছে, নগরীতে সিটি করপোরেশন কর্তৃক নিবন্ধিত ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা (ইজিবাইক) রয়েছে আট হাজার ৮৬২টি ও দুই আসনবিশিষ্ট ব্যাটারিচালিত রিকশা রয়েছে ৫ হাজার ৪০০টি। এরপরও নগরীতে প্রতিদিন নতুন নতুন অটোরিকশা নামছে। লাইসেন্স দেয়া বন্ধ থাকা সত্ত্বেও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর প্রায় ১০টি শো-রুমে প্রতিদিন অটোরিকশা বিক্রি হচ্ছে।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ট্র্যাক্সেশন কর্মকর্তা (লাইসেন্স) সারোয়ার হোসেন খোকন বলেন, গত এক বছর ধরে অটোরিকশার লাইসেন্স দেয়া বন্ধ রয়েছে। গত ৩০ জুন পর্যন্ত পুরাতন অটোরিকশাগুলোর মেয়াদ শেষ হয়েছে। এখন নতুনভাবে নবায়ন করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় তিন হাজারের মতো অটোরিকশা নবায়ন করা হয়েছে।
ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা শ্রমিক সংগঠনের সভাপতি শরিফুল ইসলাম সাগর জানান, রাজশাহী সিটিতে অটোরিকশা একটা বিরক্তিকর বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অটোরিকশার জন্যই জিরোপয়েন্ট থেকে সোনাদিঘি মোড় পর্যন্ত পাঁচ মিনিটের পথ যেতে লাগে ২০ মিনিট। এই অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য আমরা সিটি মেয়রকে নগরের অটোরিকশা বাইরে এবং বাইরের অটোরিকশা সিটিতে প্রবেশ করতে না দেয়ার জন্য অনুরোধ করেছি।
ট্রাফিকের সহকারী পুলিশ কমিশনার ইবনে মিজান জানান, আমরা কাগজপত্র বিহীন অটোরিকশা ধরে ডাম্পিং স্টেশনে এনে রাখি। পরবর্তীতে অটোচালকরা সিটি করপোরেশন থেকে প্রত্যয়নপত্র কিংবা রেজিস্ট্রেশনের কাগজপত্র এনে দিলে অটোরিকশাগুলো ছেড়ে দেয়া হয়।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র নিযাম উল আযীম বলেন, অটোরিকশা নিয়ে সব ধরনের জালিয়াতি বন্ধে সিটি করপোরেশন কাজ করছে। একই নম্বর প্লেট নিয়ে ১০টির অধিক অটোরিকশা চলার কারণে ইতোমধ্যে ২০১৪ সালের পূর্বের সব লাইসেন্স বাতিল করে নতুনভাবে অটোরিকশা নবায়ন করা হচ্ছে। নতুন নম্বর প্রদান করা হচ্ছে। স্টিকারও সিটি করপোরেশন থেকে লাগিয়ে দেয়া হচ্ছে। এমনভাবে স্টিকার কেটে রঙ লাগিয়ে দেয়া হচ্ছে যেন একই নম্বর প্লেট আর কেউ ব্যবহার করতে না পারে।
সিটি মেয়র দুঃখপ্রকাশ করে বলেন, জুলাই মাস থেকে অটোরিকশা নবায়ন করা হচ্ছে কিন্তু এ পর্যন্ত মাত্র তিন হাজার অটোরিকশা নবায়ন করা হয়েছে। নানারকম প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও সিটি করপোরেশন যানজট নিরসনে ও নগরবাসীর চলাচল নির্বিঘœ করার লক্ষ্যে কাজ করছে।