সোমবার, ২৯ মে, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
সাত বছর পর ইরান ও সৌদি আরব আবার কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে রাজি হয়েছে। চিনের রাজধানী বেইজিংয়ে আলোচনার পর সৌদি আরব ও ইরান এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দুই মাসের মধ্যে উভয় দেশে দূতাবাস খোলা হবে বলেও নিশ্চিত করা হয়েছে। সৌদি আরব ও ইরান একে অপরের সার্বভৌমত্ব ও অভ্যন্তরীণ বিষয়ে শ্রদ্ধা প্রদর্শনেও সম্মত হয়েছে। এই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে রিয়াদ ও তেহরান ২০০১ সালের একটি নিরাপত্তা সহযোগিতা চুক্তি সক্রিয় করতেও সম্মত হয়েছে।
২০১৬ সালে সৌদি আরব এক শিয়া নেতার মৃত্যুদ- কার্যকর করার পর তেহরানের সৌদি দূতাবাসে হামলা হয়েছিল। এরপর থেকে ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে সৌদি আরব।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ডামাডোলে ইরান ও সৌদি আরব সম্পর্কোন্নয়নের এই ঘটনা বিশ্বে বেশ সাড়া ফেলেছে। বিশেষ করে সমঝোতার ক্ষেত্রে চিনের মধ্যস্থতা আলোচনায় বাড়তি মাত্রা যোগ হয়েছে। ইরান ও সৌদি আরব একই ধর্মের অনুসারী হলেও ধর্মীয় গোষ্ঠীগত দিক দিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরমে। দেশ দুটির বিরোধের কারণেই সারা বিশ্বে এই ধর্মীয় গোষ্ঠী দুটিও নানা রকমের দ্বন্দ্বে জড়িত। বলা হয়, অন্য ধর্মের চেয়েও সৌদি আরব শিয়াপন্থি ইরানকে বেশি শত্রুভাবাপন্ন মনে করে। সেই দেশ দুটি দীর্ঘ সাত বছর পর কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করতে যাচ্ছে- যা বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে। চিনের মধ্যস্থতায় হওয়া এই সমঝোতাকে স্বাগত জানিয়েছে বিভিন্ন দেশ। তবে একই সাথে মধ্যস্থতায় চিনের ভূমিকা যুক্তরাষ্ট্রসহ আরো কিছু দেশের জন্য অস্বস্তির কারণ হিসেবেই দেখা দিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে এই দুটি দেশের দ্বন্দ্বের সুবিধাভোগী যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইল স্বাগত জানায়নি। তবে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে, চরম বৈরী সৌদি আরব-ইরানের সম্পর্ক কতটা টেকসই হবে তা নিয়ে।
মধ্যপ্রাচ্যে বহু দশক ধরে সব ধরনের সংঘাতে রেফারির ভূমিকায় ছিল যুক্তরাষ্ট্র। এখন তাদের সেই প্রভাব বলয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে যেভাবে চিন ঢুকে পড়ছে-সেটি মার্কিন নীতি-নির্ধারকদের জন্য সাংঘাতিক শিরপীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়াবে সেটাই স্বাভাবিক। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চিনের সম্পর্ক কয়েক বছর ধরে মারাত্মক টানাপোড়ন দেখা যাচ্ছে। সেই প্রেক্ষাপটে চিনের এই ভূমিকাকে বিশ্ব জুড়ে মার্কিন একাধিপত্যের প্রতি আরেকটি চ্যালেঞ্জ হিসেবেও দেখা হচ্ছে।
সৌদি আরব-ইরানের সম্পর্কের স্থায়িত্ব নিয়ে এখনই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এমন সংশয় অন্যদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তবে এই মুহূর্তে এটা বলাই যায় যে, সৌদি আরব-ইরানের সম্পর্ক-সমঝোতার প্রয়োজন ছিল। উভয় দেশই অতীতের বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতার সাথে পরিচিতি- যা দেশ দুটিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এই বোধের সমুন্নত ধারা সংহত করা গেলে টেকসই সম্পর্ক স্থাপন অসম্ভব কিছু নয়। সন্দেহ নেই উভয় দেশ যে সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছে তা ঐতিহাসিকই বটে।