নতুন প্রবর্তিত জাতে রাজশাহী অঞ্চলে গমের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা

আপডেট: জানুয়ারি ১৬, ২০১৭, ১২:০৮ পূর্বাহ্ণ

বুলবুল হাবিব



রাজশাহী অঞ্চলে গম চাষে বাম্পার ফলনের স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা। নতুন প্রবর্তিত জাতে এবছর গমের ফলন বেশি হবে বলেও প্রত্যাশা করছেন কৃষক ও কৃষিবিদরা। তবে দাম নিয়ে শঙ্কিত কৃষকরা। কৃষকরা বলছেন, সরকার নির্ধারিত মূল্যে ক্রয় করলে লাভবান হবেন তারা।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এবছর রাজশাহী অঞ্চলের চারটি জেলা মিলে গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল এক লাখ ১৭ হাজার ৭৩৯ হেক্টর জমিতে। চাষ হয়েছে এক লাখ ৯ হাজার ১৫৬ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৯৯১ মেট্রিক টন। গতবছর এক লাখ ১৩ হাজার ৯৪৫ হেক্টর জমিতে গম চাষ করে উৎপাদন হয়েছিল ৩ লাখ ৪৬ হাজার ৯০৫ মেট্রিক টন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, এবছর রাজশাহী জেলায় ২৬ হাজার ৮৪১ হেক্টর জমি,  চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩১ হাজার ৩০০ হেক্টর, নওগাঁয় ২৯ হাজার ১০০ হেক্টর ও নাটোরে ২১ হাজার ৯১৫ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়েছে।
আঞ্চলিক গম গবেষণা কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, গম গবেষণা কেন্দ্র তাপ ও খরা সহিষ্ণু ছয়টি জাতের গম উদ্ভাবন করেছেন। এদের মধ্যে বারি গম-২৫ থেকে বারি গম-২৮ গত বছর উদ্ভাবিত। বারি-২৯ ও বারি-৩০ জাতের গম এবছর উদ্ভাবিত। এই জাতের গমগুলো গুণগত মান আগের উদ্ভাবিত গম থেকে উন্নতমানের।
কৃষিবিদরা বলছেন, গতবছর তাপমাত্রা বেশি থাকায় ও শিলাবৃষ্টির কারণে উৎপাদন কম হয়েছিল। তবে এবছর শীত কিছুটা কম থাকলেও আবহাওয়া গম চাষের অনুকূলে রয়েছে।  শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গমের বাম্পার ফলন হবে।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) কে জে এম আবদুল আউয়াল বলেন, গম উৎপাদনের বিষয়টা নির্ভর করে পুরোপুরি শীতের উপর। এখন পর্যন্ত আবহাওয়া গম চাষের অনুকূলে রয়েছে। শেষ পর্যন্ত শীত ভালো থাকলে গমের উৎপাদন ভালো হবে। কারণ কৃষকরা সাধারণত নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে গমের বীজ বপণ করেন। এর ৬৫ দিনের মধ্যে গম ফুলে যায়। শেষ সময়ে তাপমাত্রা কম থাকলে গমের উৎপাদন ভালো হবে। তবে তাপমাত্রা বেড়ে গেলে গমের ফলনে ক্ষতি হতে পারে।
আবদুল আউয়াল বলেন, গম গবেষণা কেন্দ্র থেকে বৈজ্ঞানিকরা তাপ সহনশীল জাতের গমের বীজ উৎপাদন করেছেন। বারি জাতের সব গম তাপ সহনশীল। এইজন্য আমরা কৃষকদের এই জাতের গমের বীজ বপন করতে পরামর্শ দিয়েছি। কাঞ্চন, শতাব্দি, বিজয় ও প্রতিভাসহ অন্যা জাতের গম থাকলেও তাপমাত্রার কারণে তা বপন করতে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করা হয়। গতবছর তাপমাত্রা বেড়ে যাবার কারণে গমের ফলন কমে গিয়েছিল।
রাজশাহী আঞ্চলিক গম গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ইলিয়াছ হোসেন বলেন, বারি গম-২৫ থেকে বারি গম-৩০ পর্যন্ত জাতের গম এবছর কৃষকদের মাঝে সরবরাহ করা হয়েছে। বিএডিসি থেকে বীজ শোধন করে দেয়া হয়েছে এই জাতের  বীজ। এই জাতের গম খরা ও তাপ সহিষ্ণু। এছাড়া ব্লাস্ট রোগও প্রতিরোধী। এবছর কৃষকদের এই জাতের বীজ সরবরাহ করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোটামুটি শীত থাকলেই গমের বাম্পার ফলন হবে।
ইলিয়াছ হোসেন বলেন, আমি এবছর বিভাগের আটটি জেলায় ঘুরেছি। কোথাও কোনো ধরনের সমস্যা এখন পর্যন্ত দেখা দেয়নি। নওগাঁয় জেলায় কৃষকরা বোরো ধানের আবাদ বাদ দিয়ে গম চাষের দিকে ঝুঁকেছে। রাজশাহী জেলায়ও কোনো ধরনের সমস্যা নেই। আশা করা যাচ্ছে, এবছর গমের বাম্পার ফলন হবে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ