‘নতুন’ বাংলাদেশে পুরনোর ছাপ

আপডেট: জানুয়ারি ৬, ২০১৭, ১১:৪৭ অপরাহ্ণ

সোনার দেশ ডেস্ক



ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশের পর এখন টি-টোয়েন্টি সিরিজেও হোয়াইটওয়াশের শঙ্কার মুখে দাঁড়িয়ে অধিনায়ক মাশরাফি। কিন্তু খাদের কিনারায় দাঁড়িয়েও তিনি এখনও শেষ ম্যাচটি জয়ের স্বপ্ন দেখেন। আবার বলেনও ‘দলগত পারফরম্যান্সের অভাবে এ ম্যাচটাও জিততে পারলাম না।’
শুক্রবারের খেলা শেষে মাউন্ট মাঙ্গানুইয়ের বে ওভাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মাঠ ধরে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা মিডিয়া ব্রিফিংয়ের উদ্দেশে হেঁটে যাচ্ছিলেন। তাকে দেখে খেলা দেখতে আসা তাওরাঙ্গা প্রবাসী বাংলাদেশি এক মেয়ে তাহমিনা চিৎকার করে বলে ওঠেন, ‘মাশরাফি ভাই, নেক্সট টাইম।’ মাশরাফি তার উদ্দেশে হাত নেড়ে জবাব দেন। কিন্তু এই ‘নেক্সট টাইম’টা কবে আসবে কেউ জানেন না। মাশরাফিও না। নিউজিল্যান্ড সফরের দ্বিতীয় ওয়ানডের মতো দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচেও বাংলাদেশ দল জয়ের সম্ভাবনা তৈরি করেছিল। কিন্তু এই জয়ও অর্জন করতে পারল না। ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশের পর এখন টি-টোয়েন্টি সিরিজেও হোয়াইটওয়াশের শঙ্কার মুখে দাঁড়িয়ে অধিনায়ক মাশরাফি। কিন্তু খাদের কিনারায় দাঁড়িয়েও তিনি এখনো শেষ ম্যাচটি জয়ের স্বপ্ন দেখেন। আবার বলেনও ‘দলগত পারফরম্যান্সের অভাবে এ ম্যাচটাও জিততে পারলাম না।’
শুক্রবারের খেলায় এক কলিন মুনরোই বাংলাদেশকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়েছেন। মুনরোর মতো জ্বলে উঠতে পারলেন না কেউ। আবার সাকিব-তামিম-ইমরুল ব্যর্থ। একটি সম্ভাবনা তৈরি করেছিলেন সাব্বির এবং সৌম্য। পাওয়ার প্লেতে নিউজিল্যান্ডের রান ছিল ৪৯। বাংলাদেশের ছিল ৪৮। কিন্তু এরপরও হলো না। সাব্বির-সৌম্যর লম্বা ইনিংস স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন, কিন্তু এক পর্যায়ে যেন দুজনের মধ্যে শুরু হয় উইকেট ছুঁড়ে আসার প্রতিযোগিতা! প্রথমে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন সাব্বির। এরপর অনুগত অনুজের মতো তাকে অনুসরণ করেন অনেক দিন পর রানে ফেরা সৌম্য সরকার। এর কারণে এদের একজনের রানও ৫০-এর ঘরে পৌঁছতে পারে নি। অথচ এই একই উইকেটে নিউজিল্যান্ডের মুনরো ১০১ ও ব্রুস করেছেন ৫৯ রান। অথচ বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা সুবিধাই করতে পারল না। তাহলে নিউজিল্যান্ড জিতবে না বাংলাদেশ জিতবে? এর উত্তর দিতে কি ক্রিকেট জ্যোতিষ হওয়া লাগে?
নেপিয়ারের মাঠে অনেক দিন পর জ্বলে ওঠা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও এদিন কিছু করতে পারলেন না। ব্যাটে-বলে দুই পর্বেই ব্যর্থ রিয়াদ। বল হাতে এদিন এক ওভারে সবচেয়ে বেশি রান দিয়েছেন তিনি। দুই ওভারে দিয়েছেন ৩২ রান! তার আগেই সাজঘরে ফিরে গেছেন বাংলাদেশ দলের তিন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান-সাকিব, তামিম ও ইমরুল। এদের মধ্যে তামিম নিউজিল্যান্ডের ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি আসরে ওয়েলিংটন টিমের হয়ে এই মাউন্ট মাঙ্গানুইয়ের মাঠে খেলে গেছেন। এই মাঠ তার পরিচিত। কিন্তু কী করেছেন তামিম ইকবাল? তাদের পর মাহমুদউল্লাহ-সাব্বির-সৌম্যও ব্যর্থ। এরপর কি আর কোনও আশা অবশিষ্ট থাকে টিম বাংলাদেশের?
এক সময় বাংলাদেশ দলে হঠাৎ হঠাৎ কারও ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সকে প্রাপ্তি হিসাবে দেখা হতো। অনেক দিন পর আবার সেই পুরনো দিনে ফিরে গেছে টিম বাংলাদেশ। অথচ গত বেশ কিছুদিন ধরে এই টাইগাররাই প্রতিপক্ষদের গুড়িয়ে দিয়েছে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে। দর্শকদের ভালোবাসা, খেলোয়াড়দের তারকাখ্যাতি, আইসিসির র‌্যাংকিং-কত কী। কিন্তু নিউজিল্যান্ড সফরে এসে সেই দল, তারকা খেলোয়াড়রা কোথায় এখন? ভূতের পা হাঁটা দিয়েছে পিছন পথে। খেলোয়াড়রা যোগ্য না এ কথা কেউ বলবে না। মাঠে যদি তারা সে যোগ্যতার প্রমাণ রাখতে না পারেন, সে যোগ্যতার মূল্য কী?  প্রতিটি ম্যাচ হারার পর সেই একই কথা, একই পুরনো রেকর্ড বাজানো হচ্ছে। প্রতিটি ম্যাচে একজন-দুজন খেলোয়াড় জ্বলে উঠছেন আর এসবকে প্রাপ্তি হিসাবে দেখা হচ্ছে! অথচ ক্রিকেট তো দলগত পারফরম্যান্সেরই খেলা। ‘এই কথা আর কিভাবে বুঝাইতে হইবে তাহাদের!’ নিউজিল্যান্ড সফরকে কঠিন হিসাবে যাত্রা শুরুর আগেই ধারণা করা হয়েছিল। কিন্তু এতটা কঠিন হবে, তা কী আগে কেউ জানতো। প্রতিটি ম্যাচের পরেই শুধু ‘ইশ্, ইশ্’ শব্দ! ইশ্, এটা যদি করতে পারতাম, ওটা যদি না হতো!  ক্যাপ্টেন মাশরাফি যখনই মিডিয়ার মুখোমুখি হন, তখনই খেলোয়াড়দের মনোসংযোগের অভাবের দিকে ইঙ্গিত করেন। মনোসংযোগ যদি বিপিএল-আইপিএলে ধনাঢ্য থাকে, দেশের পক্ষে খেলার সময় দরিদ্র হয়ে পড়ে কেন? এ প্রশ্নের উত্তর বের করার তাগিদ আসতেই পারে। তাহলেই কিন্তু তাহমিনাদের জবাব দিতে পারবে মাশরাফিরা। ‘নেক্সট টাইম’টাও চলে আসছে খুব তাড়াতাড়ি!-বাংলা ট্রিবিউন