রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৩০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
সোনার দেশ ডেস্ক:
সরকার গঠনের জন্য লোকসভায় নূন্যতম ২৭২ টি আসন প্রয়োজন হয়। বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এবং অন্ধ্রপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলুগু দেশম পার্টির সমর্থন পেলে তবেই বিজেপি সরকার গড়তে পারবে।
ওই ২ নেতা এখন এনডিএ জোটে থাকলেও ২জনেই রাজনৈতিক কৌশল আর জোট বদল করতে সিদ্ধহস্ত।
বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জনতা দল (ইউনাইটেড)-এর প্রধান নীতীশ কুমার একটা সময়ে বিজেপির জোট সঙ্গী থাকলেও তিনি কয়েক বছর আগে এনডিএ ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন এবং বিজেপি-বিরোধী দলগুলিকে নিয়ে ‘ইন্ডিয়া’ জোট গঠনের অন্যতম কারিগরও ছিলেন তিনি।
তবে এবছরের জানুয়ারিতে আবারও জোট বদল করে এনডিএ-তে যোগ দেন তিনি। বিহারে এখন এনডিএ’র সঙ্গে সরকার চালাচ্ছেন তিনি, এবং লোকসভা নির্বাচনেও এই জোটে সামিল ছিল তার দর।
জেডি (ইউ) বিহারে ১২ টি আসন জিতেছে, এতটা তারা প্রত্যাশা করেননি। আবার বিজেপিও সে রাজ্যে ১২টি আসন পেয়েছে।
এনডিএ-র অন্যান্য সঙ্গীদের মধ্যে এলজেপি (রাম বিলাস) পাঁচটি এবং জিতন রাম মাজির দল একটি আসন পেয়েছে। অর্থাৎ বিহারে এনডিএ পেয়েছে মোট ৩০টি আসন।
পূর্ণিয়ায় নির্দল প্রার্থী পাপ্পু যাদব একটি আসনে জয়ী হয়েছেন।
চন্দ্রবাবু নাইডু ও নীতীশ কুমারই এখন ভরসা
অন্ধ্রপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলুগু দেশম পার্টি বা টিডিপি পেয়েছে ১৬টি আসন। লোকসভা নির্বাচনের পাশাপাশি ওই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
টিডিপি বিধানসভার ১৭৫ টি আসনের মধ্যে ১৩৫ টিতে জিতে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। টিডিপি আগেই এনডিএ-র শরিক।
ঘটনাচক্রে, নীতীশ কুমার ও চন্দ্রবাবু নাইডু ২জনেই কিছুদিন আগে পর্যন্ত মোদী সরকার-বিরোধী অবস্থানে ছিলো।
সেই জন্যই এনডিএ জোটে তারা এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
সরকার গঠন করতে হলে মি. মোদী ও বিজেপিকে এখন পুরনও এই জোট-সঙ্গীদের সাথে মানিয়ে নিয়ে চলতে হবে।
মোদীর সামনে এখন যে চ্যালেঞ্জ
লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল বেরনোর পরে এই দুই নেতা এখন হয়ে উঠেছেন ‘কিংমেকার’।
প্রবীণ-সাংবাদিক সঞ্জীব শ্রীবাস্তব বলছেন, “নীতীশ কুমার ও চন্দ্রবাবু নাইডুর ক্রাচ ছাড়া এই সরকার চলতে পারবেনা এবং নীতীশ কুমার তো হায়ার দিক বদলের মতও জোট বদলিয়ে ফেলেন।
“এখন এই দুটি ক্রাচ বিজেপির গলায় ঘণ্টার মতো হয়ে গেছে। তারা দুজনেই পুরানো ওস্তাদ খেলোয়ার এবং অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ। দুজনেরই একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা রয়েছে। এই ক্ষমতার সমীকরণে তারা নিজেদের পাওনা গণ্ডা বুঝে নেবেন। তারা নিজেদের দাবি তুলে ধরে বলবেন যে আমাদের এটা চাই,তবেই জোটে থাকব,” বলছিলেন সঞ্জীব শ্রীবাস্তব।
ক্ষমতার বি-কেন্দ্রীকরণ হবে
গত ১০ বছর যখন সরকার চালিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী, তখন ক্ষমতা পুরোটাই তার এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহের হাতেই থেকেছে, অন্য কেউ ক্ষমতার কেন্দ্রে ছিলেন না।
কিন্তু এখন জোট সরকার হলে সেখানে অন্যন্যরাও অংশগ্রহণ করবে, তাদের কথাও শুনতে হবে, তবেই সরকার চালাতে পারবে।
মি. সঞ্জীব শ্রীবাস্তব বলছিলেন, “এর অর্থ হল জোট ধর্ম মেনে, বাজপেয়ী মডেল যদি গ্রহণ করা হয়, তবেই সরকার চালনা সম্ভব হবে।“
তার কথায়, “মি. মোদী জীবনেও এই মডেলে কাজ করার কোনও অভিজ্ঞতাই নেই। গত ২২ বছরে তিনি তিনবার গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী এবং দুবার প্রধানমন্ত্রী হয়ে একরকম একচ্ছত্র আধিপত্য নিয়ে কাজ করেছেন। এখন হঠাৎ করে সমন্বয় করে, ঐকমত্যের ভিত্তিতে রাজনীতি করা তার কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। এই নতুন কাজের ধরণ তিনি কতটা গ্রহণ করতে পারবেন, তার ওপরেই এই সরকারের স্থায়িত্ব নির্ভর করছে।“
অটল বিহারী বাজপেয়ীর সরকার যখন গঠিত হয় ১৯৯৯ সালে, তখন এনডিএ জোটে ২৪টি দল ছিল। সেই সরকার টিকেছিল পাঁচ বছর।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, জোটের মধ্যে সমন্বয় সাধনের ক্ষমতাই বাজপেয়ী সরকারকে পাঁচ বছর টিকিয়ে রেখেছিল।
কংগ্রেসও কি সরকার গঠনের দৌড়ে রয়েছে?
নির্বাচনের ফলাফল যখন মোটামুটি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল মঙ্গলবার সন্ধ্যায়, তখন কংগ্রেস সদর দফতরে সাংবাদিক সম্মেলনে সরকার গঠন নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এবং কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে জানান, যে আজ বুধবার জোটের বৈঠকে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আবার সেই সময়েই জেডিইউ নেতা খালিদ আনোয়ার একটি রাজনৈতিক জল্পনা উসকিয়ে দিয়ে এক্স-এ লেখেন, “নীতীশ কুমারের চেয়ে ভাল আর কে প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন?”
তিনি আরও লেখেন , “নীতীশজি দেশকে বোঝেন। আমরা জানি কীভাবে আমাদের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে সম্মান করতে হয়, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়, মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হয়। এই মুহূর্তে আমরা এনডিএ জোটে আছি, কিন্তু আগেও ও এখনাে মানুষ নীতীশ কুমারকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেখতে চায়।“
তবে ইন্ডিয়া জোটের অপর দুই শরিক আরজেডি ও আম আদমি পার্টির বক্তব্যও লক্ষণীয়।
আরজেডি নেতা মনোজ ঝা বলেছেন, “বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে অনেক দূরে। যদি চন্দ্রবাবু নাইডুর দল টিডিপি এবং এখানে (বিহারে) জেডিইউকে কিছুটা আলাদা করে দেওয়া যায়, তাহলে সংখ্যাগরিষ্ঠতাই নেই। স্পষ্টতই, সেই ‘৪০০ পার’ করার বেলুন ফেটে গেছে।“
দিল্লির মন্ত্রী তথা আম আদমি পার্টির নেতা গোপাল রাই সাংবাদিক সম্মেলন করে চন্দ্রবাবু নাইডু ও নীতীশ কুমারকে ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন।
রাতে বিজেপি’র সদর দফতরে ভাষণ দেয়ার সময় যতই নরেন্দ্র মোদী বারে-বারে ‘এনডিএ’র সরকার গঠনের কথা বলুন, সবার নজর এখন নীতীশ কুমার ও চন্দ্রবাবু নাইডুর ওপরেই।
তারা ২জনেই কিন্তু জোট সঙ্গী আর রাজনৈতিক কৌশল বদলানোর জন্য সু-পরিচিত।
আজ, বুধবার দুই জোটেরই বৈঠক রয়েছে। রাজনৈতিক কৌশল ঠিক করে সরকার গঠনের জন্য কোন জোট কী সিদ্ধান্ত নেয়, এই দুই বৈঠকের পরেই তা স্পষ্ট হবে।
তথ্যসূত্র: বিবিসি বাংলা