নাটোরের অপহৃত তিন যুবলীগ কর্মীর গুলিবিদ্ধ লাশ দিনাজপুরে উদ্ধার || অপহরণকারীদের গ্রেফতার ও শাস্তি দাবি

আপডেট: ডিসেম্বর ৫, ২০১৬, ১০:৩৪ অপরাহ্ণ

নাটোর অফিস



অপহরণের প্রায় ৩৬ ঘণ্টা পর নাটোর পৌর যুবলীগের তিন কর্মীর গুলিবিদ্ধ লাশ দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল সোমবার সকালে উপজেলার খোলাবাড়ি এলাকা থেকে তাদের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগে গত ৩ ডিসেম্বর রাতে নাটোর তকিয়া-ঢালান এলাকার একটি চা স্টল থেকে তাদেরকে অপহরণ করে দুর্বৃত্তরা। তবে নাটোর সদর পুলিশের দাবি, সাব্বিরের বিরুদ্ধে ১২টি হত্যামামলা এবং সোহেলের বিরুদ্ধে হত্যা ও অপহরণের অভিযোগে ৩টি মামলা রয়েছে।
এদিকে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত তিনকর্মীর বাড়ি নাটোর শহরে বলে নিশ্চিত করেছেন তাদের স্বজনরা। নিহতরা হলেন,  শহরের কানাইখালি এলাকার মৃত একরামূল হোসেন সোনার ছেলে পৌর যুবলীগের সদস্য রেদোয়ান সাব্বির (৩০), হাফেজ লুৎফর রহমানের ছেলে আব্দুল্লাহ (২৭) এবং এবং পৌর যুবলীগকর্মী, শহরের উত্তর-বড়গাছা এলাকার কালুর মোড়ের মৃত কালুর ছেলে সোহেল (২৮)।
বিডিনিউজ২৪ডটকম এক প্রতিবেদনে দিনাজপুরের পুলিশ সুপার হামিদুল আলমকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, শনিবার সন্ধ্যায় নাটোরের তকিয়া বাজার এলাকা থেকে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিরা একটি কালো মাইক্রোবাসে করে তিন তরুণকে উঠিয়ে নেয়।
ঘোড়াঘাট থানার ওসি ইসরাফিল হোসেন জানান, সোমবার সকাল ৯টার দিকে বুলাকিপুর ইউনিয়নের ভেলাই গ্রামে তিন তরুণের লাশ পড়ে থাকার খবর আসে।
“পুলিশ বেলা সাড়ে ১০টার দিকে ওই গ্রামের রঘুনাথপুর কলাপাড়া দাখিল মাদরাসা সংলগ্ন সড়কের পাশে আমবাগানের ভিতরে একটি পুকুরপাড় থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করে। দুইজনের মাথা ও কপালে এবং একজনের কপালে গুলির চিহ্ন রয়েছে।” পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে বলে জানান ওসি ইসরাফিল।
অপরদিকে তিন যুবলীগ কর্মীকে অপহরণের তদন্ত, অপহরণকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে পৌর যুবলীগ। গতকাল দুপুরে নাটোর প্রেস ক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, নাটোর পৌর যুবলীগের  যুগ্মআহবায়ক হাসিবুল হাসান বুলেট। এসময় উপস্থিত ছিলেন, নাটোর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন বিপ্লব, সদর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক ডাবলু, পৌর যুবলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সায়েম হোসেন উজ্জ্বলসহ অন্যরা।
সংবাদ সম্মেসনে উল্লেখ করা হয়, নাটোর শহর যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য রেদোয়ান সাব্বির গত ৩ ডিসেম্বর  রাত আনুমানিক আটটার দিকে তার দুই বন্ধু আব্দুল্লাহ এবং সোহেলকে সাথে নিয়ে তার ব্যবসায়িক কাজে সদর উপজেলার তকিয়া ঢালানে যায়। সেখানে কাজ শেষে ওই বাজারে মান্নানের চায়ের দোকানে তিনজন বসে চা পান করছিল। এসময় রাত ১১টার দিকে একটি সাদা এবং অপরটি কালো মাইক্রোবাসে এসে ১৫ থেকে ১৬ জনের দুস্কৃতিকারী সাব্বিরসহ তিন জনকে অপহরণ করে রাজশাহীর দিকে যায়। পরে নাটোর থানা পুলিশের মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত হয় যুবলীগ কর্মীর গুলিবিদ্ধ লাশ দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে উদ্ধার করা হয়েছে।
নিহত রেদোয়ান সাব্বিরের মা রুখছানা বেগম জানান, গত ৩ ডিমেম্বর রাত আটটায় সাব্বির ও তার দুই বন্ধু বাড়ি  থেকে বের হয় । পরে তারা নাটোর সদর উপজেলার তকিয়া বাজারে একটি চায়ের দোকানে চা পান করার সময়ে র‌্যাব পরিচয় দিয়ে তাদেরকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। তারপর থেকে তারা নিখোঁজ ছিল। এদিকে সাব্বিরসহ তিন যুবলীগ কর্মী নিখোঁজ হওয়ার পরপরই ৪ ডিসেম্বর নাটোর সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন সাব্বিরের মা।
জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, গত ৩ ডিসেম্বর রাত আটটার দিকে তকিয়া বাজারে চা খাওয়ার সময় র‌্যাব পরিচয়ে সাব্বিরসহ তিনজনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর আত্মীয়স্বজনদের বাসায় অনেক খোঁজাখুজি করে কোন সন্ধান পায়নি।
এদিকে নিহত তিন যুবলীগ কর্মীর বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে এলাকার পরিবেশ। মরদেহ নাটোরে নিয়ে আসার জন্য দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে অবস্থান করছেন নিহতের স্বজনরা।
আহাজারি করতে করতে রেদোয়ান সাব্বিরের মা রুখসানা বেগম বলেন, র‌্যাবের পোশাক পরে আমার ছেলেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যেটা সেখানকার মানুষরাই বলেছেন। দল করার কারণেই আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
আবু আব্দুল্লাহর পিতা লুৎফর রহমান বলেন, তার ছেলে কোন রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত ছিলো না। সে ব্যবসা নিয়েই পড়ে থাকত। মাঝখানে শহরের ট্রাফিক মোড়ে ছায়াবানী সিনেমা হল নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল। যে কারণে কোন সন্ত্রাসী গোষ্ঠি তাকে তুলে নিয়ে হত্যা করতে পারে। তিনি আরো বলেন, যারাই আমার ছেলেকে হত্যা করুক না কেন ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার দাবি করছি।
নাটোর-২ আসনের সাংসদ শফিকুল ইসলাম শিমুল জানান, শুক্রবার রাতে সদর উপজেলার তকিয়া এলাকা থেকে র‌্যাব পরিচয়ে তাদের তুলে নেয়া হয়। এই ঘটনায় গতরাতে সদর থানায় একটি জিডি করা হয়। তিনি অপহরণকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
বিষয়টি সম্পর্কে যোগাযোগ করা হলে সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিজানুর রহমান লাশ উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এ ব্যাপারে সাব্বিরের মা রুখসানা বেগম গত রোববার রাতে সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। ওসি দাবি করেন, সাব্বিরের বিরুদ্ধে ১২টি হত্যামামলা এবং সোহেলের বিরুদ্ধে হত্যা ও অপহরণসহ ৩টি মামলা রয়েছে। তবে অপরজন আবু আব্দুল্লাহর বিরুদ্ধে কোন মামলা ছিল না।
নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফম আনোয়ার হোসেন বলেন, নিহত হওয়ার খবর শুনেছি। তবে তারা যে নিখোঁজ ছিল, এটা আমার জানা নেই।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ