মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৯ বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ।
নাটোর প্রতিনিধি:এ শীতে বেড়ার ফাঁক দিয়ে ঢুকে পড়া শীতের বাতাসে একখানা কম্বল শরীরের কাঁপুনী থামাতে পারে না। এমন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘আমার হৃদয়ে নাটোর’।
নারদ নদের পাড়ে ও শহরের বস্তিতে ১৫টি স্যাঁতসেঁতে ঘরে থাকা অসহায় মানুষকে একটি করে লেপ দিয়ে প্রচন্ড শীতে কষ্টে থাকা অসহায় মানুষ গুলোর এক একটি লেপ যেন এক টুকরো সোনার চেয়েও দামী।
মঙ্গলবার(২৪ জানুয়ারি) রাতে শহরের নারদ নদের বস্তিতে অসহায় শীতার্ত মানুষের শরীরে লেপে ঢেকে দেন নাটোর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সারমিনা সাত্তার।
এই নদের পাড়ে বস্তিতে থাকেন বৃদ্ধা রাওজান। দীর্ঘদিনের স্বামী পরিত্যক্তা রওজানের জীবনে মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে আসে ছেলের মৃত্যু। শারীরিক অসুস্থ্যতায় তেমন চলাচলও করতে পারেন না। মেয়ের অন্নেই কোনো রকম দিন কাটে তার। প্রচন্ড এ শীতে একটি মাত্র কম্বলই চলে শীত নিবারন। ছিলো অবলম্বন। একটি লেপ যেন বৃদ্ধার চোখে মুখে আনন্দ অশ্রুজল।
এ বস্তিতেই রিক্সাচালক নাজিমুদ্দিনের এক চিলতে ঘর থাকলেও নেই কোনো চৌকি। ঘরের বেড়া ডিঙিয়ে আসা বাতাসের সাথে মাটির
মেঝে থেকে উঠে আসা হিম ঠান্ডায় সারারাত হাত-পা যেন গরমই হয় না। লেপ পেয়ে নাজিমুদ্দিন হতভাগ।
আরেকজন শহরের দিয়ারভিটায় এলাকার শতবর্ষী বৃদ্ধা রত্না। একাকৃত্বি দিন কাটে তাঁর। রাত হলেই যেন হিমেল বাতাসে শীরে কাপুনি উঠে। শীতল নিবারনে একমাত্র অবলম্বন তাঁর কম্বল।
এ শীতে শরীরে নতুন লেপ পেয়ে যেন আত্মহারা তিনি।
‘আমার হৃদয়ে নাটোর’ এর যুগ্ম আহবায়ক জুলফিকুল হায়দার বাবু জানান, এবছর শীতের তীব্রতা বেশি। অনেকের ঘরে শীত
নিবারনের জন্য লেপ নেই। অনেকের একটি কম্বলই একমাত্র ভরসা। তাই ১৫ অসহায় ব্যক্তির বাড়িতে যেয়ে আবরণসহ লেপ প্রদান করা হয়েছে।
সংগঠনের আহবায়ক ফারাজী আহম্মদ রফিক বাবন বলেন, নিজেদের মানসিক প্রশান্তির জন্য সমাজের অসহায় মানুষের পাশে আমরা
সব সময় থাকতে চাই। শিক্ষা, বৃত্তি ও সহায়তা, খাবার পানির ব্যবস্থা, শীতের কাপড়সহ সমাজ সেবার আঙিনাতে আমাদের নীরব
পদচারনা। তাই অসহায় মানুষের পাশে একটু দাঁড়ানো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সারমিনা সাত্তার বলেন, শীতার্ত মানুষের জন্য লেপ প্রদান ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। লেপ প্রাপ্তদের আনন্দ অভিব্যক্তি মনে থাকবে অনেক দিন। সমাজ সচেতন ও বিত্তবান ব্যক্তিদের উচিৎ বাড়ির পাশেই থাকা অসহায় মানুষের খোঁজ রাখা। তাদের দুঃখে পাশে দাঁড়ানো। বিনিময়ে জীবন হয় সুন্দর ও আনন্দময়।