বৃহস্পতিবার, ১ জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
নাটোর প্রতিনিধি:
নাটোরে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আওয়ামী ও বিএনপি কর্মিদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসময় উভয় পক্ষের নেতা কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও মারপিটের ঘটনায় অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে বিএনপির মঞ্চ। আহতদের মধ্যে সদর উপজেলার কাফুরিয়া ইউনিয়ন যুবদলের সহ-সভাপতি শরিফুল ইসলাম শরীফ গুরুতর আহত হয়েছে। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্য আহতরা হলেন, যুবদল কর্মী শৈবাল ও রনি ব্যাপারী, জেলা যুব-লীগের সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন বিপ্লব, পৌর যুব-লীগের সভাপতি সায়েম হোসেন উজ্জলসহ অন্যরা।
পুলিশ জানান, পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচী অনুযায়ী দুপুরে নাটোর শহরের আলাইপুর জেলা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে অস্থায়ী মঞ্চ তৈরী করে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে বিএনপি। কর্মসূচীতে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বক্তব্য দিচ্ছিলেন। এ সময় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান নেতৃত্বে একটি শান্তি মিছিল উপশহর মাঠের দিকে যাওয়ার সময় ওই এলাকায় পৌঁছলে শুরু হয় সংঘর্ষ।
এসময় বিএনপির অস্থায়ী মঞ্চ ভাঙচুর করা হয়। শুরু হয় উভয় পক্ষে ইট পাটকেল নিক্ষেপ। পরিস্থিতি বিবেচনায় আগে থেকেই মোতায়েন করা পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এসময় সরকারি বালিাকা বিদ্যালয়ের সামনে শান্তি সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ। পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি সৈয়দ মোস্তাক আলী মুকুলের সভাপতিত্বে শান্তি সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য রতœা আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান, নাটোর জজ কোর্টের পিপি সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ। বক্তারা বিএনপি কর্মিদের হামলায় তাদের অনেক নেতা কর্মি আহত হওয়ার দাবি করেন।
অপরদিকে এঘটনার পর দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, তাদের পূর্বঘোষিত কর্মসুচি অনুযায়ী নাটোর উপ শহর মাঠে মঞ্চ তৈরির সময়ই বৃহস্পতিবার রাতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা হামলা করে ভাঙচুর শেষে অগ্নিসংযোগ করে। শান্তি রক্ষার জন্য তারা উপ শহর মাঠ ছেড়ে দিয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে ফুটপাতে খুব সংক্ষিপ্ত পরিসরে অবস্থান কর্মসূচি করেন। ওই কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখছিলেন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু।
এ সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের দলীয় কার্যালয় থেকে একটি বড় মিছিলসহ বিএনপি অফিসের দিকে আসতে থাকে। নাটোর বিদ্যুৎ অফিসের সামনে পুলিশ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাঁধা দিলে তারা পুলিশী ব্যারিকেট ভেঙ্গে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে আক্রমন করেছে।
এদিকে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হওয়ার পর বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলূ নাটোরের বাসা ছেড়ে চলে যান। এ সময় তিনি এসব ঘটনার জন্য সরাসরি সরকার দলীয় নেতা-কর্মীদের দায়ী করেছেন। এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
সংবাদ সম্মেলন আরোও বলা হয়, আগামী সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে থাকার জন্য জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক নিজের অবস্থান ও ক্ষমতা জানান দিতে বিএনপির উপরে একের পর এক হামলা করছে। মত প্রকাশের নাগরিক অধিকার টুকুও আওয়ামী লীগ কেড়ে নিয়েছে বলে শহিদুল ইসলাম বাচ্চু দাবী করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রহিম নেওয়াজ, জাতীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য সাবেক এমপি অধ্যাপক কাজী গোলাম মোর্শেদ, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী শাহ আলম, সদস্য ফরহাদ আলী দেওয়ান শাহিন, জেলা যুবদল সভাপতি এ হাই তালুকদার ডালিম ও স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি আসাদুজ্জামান আসাদ প্রমূখ।
অপরদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান বলেছেন, তাদের পূর্ব নির্ধারিত নাটোর উপ শহর মাঠের শান্তি সমাবেশ করার জন্য তারা মিছিলসহ যাওয়ার সময় নাটোর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে পুলিশ তাদের বাঁধা দেয়। পুলিশি বাঁধার কারণে সেখানেই তারা শান্তি সমাবেশ করছিলেন। বিএনপি নেতাকর্মীরা এসময় শান্তি সমাবেশে ইটপাটকেল ছুড়ে হামলা করে। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চু ও সদস্য ফরহাদ আলী দেওয়ান শাহিন এসময় অস্ত্র দিয়ে গুলি করে। তিনি শহিদুল ইসলাম বাচ্চু ও ফরহাদ আলী দেওয়ান শাহিনকে গ্রেফতারের দাবি জানান।
নাটোর সদর থানার ওসি (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ জানান , বিএনপি ও আওয়ামী লীগ দুই দলই শহরে উপশহর মাঠে কর্মসূচি ঘোষণা করে । সেখানে উভয়র দলকে কর্মসূচি পালন করতে নিষেধ করা হয় । পরে বিএনপি শহরের আলাইপুরে দলীয় কার্যালয়ে সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে এবং একই সময়ে আওয়ামী লীগ জেলা পরিষদ মিলনায়তনের সামনে শান্তি সমাবেশ শুরু করে । কিছু অতি উৎসাহী লোক সংঘর্ষ জড়াই বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।
এঘটনায় নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এ টি এম মাইনুল ইসলাম বলেন, শহরের আলাইপুর এলাকায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগ দু দলের পক্ষ থেকে সমাবেশ আহ্বান করা হয়ে ছিলো। সমাবেশে চলাকালে দু পক্ষই ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। গুলি ছোড়ার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, লোকমুখে শুনেছি।