শুক্রবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
নাটোর প্রতিনিধি
নাটোরে কনস্টেবল পদে নিয়োগ পরীক্ষার প্রাথমিক বাছাইয়ে অনিয়মের অভিযোগে নাটোর–ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেছেন কিছু চাকরিপ্রার্থী। এ সময় তাঁরা ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দিতে থাকেন। তাঁদের অভিযোগ, অযোগ্যদের নির্বাচিত করে যোগ্য প্রার্থীদের বঞ্চিত করা হয়েছে। নিয়োগ কমিটির সদস্যরা থাকা সত্ত্বেও পুলিশ লাইনের সিলেকশন বোর্ড এরিয়ার ভেতরে দালালকে প্রবেশের সুযোগ দিয়ে এটি করা হয়েছে।
বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধ করা চাকরিপ্রার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে একপর্যায়ে পুলিশ ধাওয়া দেয়। মোবাইল ফোনে এ দৃশ্য ধারনের সময় স্থানীয় এক সাংবাদিকের ফোন কেড়ে নেন নাটোরের পুলিশ সুপার (এসপি) মারুফাত হুসাইন ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার একরামুল হক। তবে শতভাগ স্বচ্ছতার মাধ্যমে নিয়োগ কার্যক্রম চলছে বলে দাবি করেছেন এসপি মারুফাত হুসাইন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শনিবার (২ নভেম্বর) সকাল থেকে নাটোর শহরতলির বড়হরিশপুর পুলিশ লাইনসে পুলিশ সদর দপ্তরের প্রতিনিধি, নিয়োগ বোর্ডের সদস্য ও জেলা পুলিশের সব পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে দ্বিতীয় দিনের নিয়োগ পরীক্ষা শুরু হয়।
শনিবার কার্য তালিকায় ছিল ২০০ মিটার দৌড়, লং ও হাই জাম্পসহ অন্যান্য ইভেন্ট। দিন শেষে বিকেলে পুলিশ লাইনসের মূল ফটকের সামনে বাদ পড়াদের মধ্যে ৩০-৩৫ জন বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধ করেন। এ সময় তাঁরা বিভিন্ন অভিযোগ করে বলেন, পুলিশে নিয়োগে স্বচ্ছতার কথা বলা হলেও দালালের মাধ্যমে অযোগ্য প্রার্থীকে যোগ্য ঘোষণা করা হচ্ছে। মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেনের মাধ্যমে এ অনিয়মের সুযোগ করে দিয়েছেন জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তারা। দৌড়ে ২০০ মিটারের কথা থাকলেও ৩০০ মিটার দৌড় করিয়ে পরবর্তী ইভেন্টের জন্য পরিকল্পিতভাবে চাকরিপ্রার্থীদের দুর্বল করা হয়েছে।
শহরতলির দত্তপাড়া এলাকার সায়েম আলী নামে এক চাকরিপ্রার্থী বলেন, ‘শনিবার দ্বিতীয় দিন বাছাই শেষে যোগ্য ও অযোগ্য প্রার্থীদের আলাদা করে দাঁড় করানো হয়। আমি অযোগ্যদের মধ্যে ছিলাম। আমাদের সঙ্গে থাকা একজনকে পুলিশের এক কর্মকর্তা এসে মা–বাবার নাম জিজ্ঞাসা করে নিয়ে চলে যায়। পরে দেখি তাকে যোগ্যদের মধ্যে দাঁড় করানো হয়েছে।’
গুরুদাসপুর থেকে আসা মাহাদী হাসান নামের এক প্রার্থী বলেন, ‘আমাদের বাছাই প্রক্রিয়া ছিল ৭টি ধাপে। শুক্রবার প্রথম দিন যারা টিকেছিলাম তারা শুক্রবার এবং শনিবারও ছিল। এক লোককে পুলিশ লাইনের ভেতরে দেখেছি। তিনি পুলিশের কেউ না হয়েও নিয়োগ বোর্ডের সদস্যদের আশপাশে ছিলেন। বারবার এদিক-ওদিক যাচ্ছিলেন। কেউ তাঁকে বাধা দেয়নি।’
গুরুদাসপুর থেকে আসা আরেক চাকরিপ্রার্থী রনি মৃধা বলেন, ‘একসঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার পর যারা যোগ্য তাদের বাদ দিয়েছে, আর যারা অযোগ্য তাদের ভেতরে নিয়েছে। এ সময় ভেতরে থাকা এক লোক আমাদের দেখিয়ে পুলিশকে বলে বের করে দিতে। পরে পুলিশ আমাদের বের করে দেয়। পরে জানতে পারি, সে পুলিশের কেউ না। অথচ শুরু থেকেই সে একটু পরপর পুলিশ লাইনের ভেতরে এদিক-ওদিক ঘোরাফেরা ও ফোনে কথা বলছিল।’
জোহা নামের এক চাকরিপ্রার্থী অভিযোগ করে বলেন, ‘দৌড় ইভেন্টে আমি তৃতীয় স্থান অধিকার করি। আমাকে বাদ দিয়ে বর্ষণ নামে চতুর্থ স্থান অধিকার করা প্রার্থীকে ওয়েটিংয়ে রাখা হয়। পরে এক অফিসার এসে জহিরুলের ছেলে কে জানতে চান। বর্ষণ জানায়, তার বাবার নাম জহিরুল। তখন তাকে নিয়ে যায়। পরে দেখি আমি ফেল আর বর্ষণ রিটেনে পাস!’
এছাড়া চাকরিপ্রার্থীরা আরও অভিযোগ করেন, অন্তত চারজনকে দালালের সহায়তায় অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পাস করানো হয়েছে।
স্থানীয় সাংবাদিক খান মামুন বলেন, ‘শনিবার বিকেলে মহাসড়ক অবরোধের খবর জানতে পেরে পুলিশ লাইনের সামনে যাই। এ সময় মহাসড়ক অবরোধ নিয়ে আমার পেজ থেকে লাইভ করছিলাম। চাকরিপ্রার্থীদের ধাওয়া দিতে দেখে ক্যামেরা ঘুরিয়ে নিই এবং সে দৃশ্য লাইভ হয়। এ সময় পুলিশ সুপার মারুফাত হুসাইন এগিয়ে এসে লাইভ বন্ধ করতে বলেন আর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার একরামুল হক হাত থেকে ফোন কেড়ে নেন। লাইভ চালু থাকায় পুরো দৃশ্যটি ধারণ করা আছে।’
এ বিষয়ে এসপি মারুফাত হুসাইন সাংবাদিকদের বলেন, ‘শতভাগ স্বচ্ছতার মাধ্যমে নিয়োগ কার্যক্রম চলছে। বঞ্চিতদের একটি অংশ পুলিশ লাইনের বাইরে এসে বিশৃঙ্খলা করছিল। সেখান থেকে তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোনো অযোগ্য ঘোষিত প্রার্থীকে সুবিধা দেওয়া হয়নি।’
এ বিষয়ে রোববার (৩ নভেম্বর) সকালে রাজশাহী রেঞ্জের উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. আলমগীর রহমান বলেন, ‘ঘটনাটি জানার পর শনিবার রাতে নাটোরের পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলেছি। কোন দালাল নিয়োগকে প্রভাবিত করেছে তার খোঁজ কেউ দিতে পারেনি। এখানে পুরো প্রক্রিয়াই স্বচ্ছ। কোনো অনিয়ম করার সুযোগ নেই। শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ হবে।’
উল্লেখ্য, নাটোর জেলায় চলতি বছর কনস্টেবল পদে ৪ হাজার ৪০৭ জন প্রার্থী আবেদন করেন। সেখান থেকে ৫০ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে।