মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
মানব দেহের কিডনি ও অন্যান্য অঙ্গ-প্রতঙ্গ নিয়ে অবৈধ ব্যবসা নতুন কিছু নয় প্রায় সময়ই কিডনি কেনাবেচার সাথে জড়িত সিন্ডিকেটেরর হৃদ-কাঁপানো খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ ও প্রচার হতে দেয়া যায়। সংবাদ মাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর একটু হইচই হয়Ñ আবার এক সময় থেমে যায়। সিন্ডিকেটের সদস্যরা ঠিকই তাদের অবৈধ কাজ-কারবার চালিয়ে যায়।
সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এক শ্রেণির দালাল মধ্যসত্ত্বভোগি গ্রামের মানুষদের অর্থের লোভ দেখিয়ে কিডনি বেচতে প্ররোচিত করে। বিশেষজ্ঞদের মতে মানবদেহের দুটি কিডনির একটি থাকলেও ব্যক্তির স্বাভাবিক জীবন-যাপনে কোনো সমস্যা নেইÑ এমন তথ্য হাজির করে দরিদ্র মানুষকে কিডনি বেচতে রাজি করানো হয়। দালালদের সম্পর্ক থাকে বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের সাথে। শেষ পর্যায়ে মোটা অঙ্কের বিনিময়ে এসব কিডনি কেনাবেচা হয়। কিডনি সিন্ডিকেট সম্পর্কে এটাই এ পর্যন্ত জানা তথ্য। কিন্তু ডাক্তার কর্তৃক কিডনি চুরির মত একটি ঘটনাও দৈনিক সোনার দেশে প্রকাশিত হয়েছে।
শনিবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে তাজ্জব বনে যাবার মতই তথ্য উঠে এসেছে। অভিযোগের আঙুল একেবারে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের সার্জারি বিভাগের এক সহযোগী অধ্যাপকের দিকে। তার বিরুদ্ধে নাটোর সদর থানায় একটি অভিযোগও হয়েছে। ওই অধ্যাপক নাটোর শহরের জনসেবা হাসপাতালে (বেসরকারি) প্র্যাকটিশ করেন। আর্থিক সক্ষমতা, সামাজিক মর্যাদা, সম্মান থাকার পরও অতিঅর্থের মোহ মানুষকে এতো নিচে নামাতে পারে?
পুলিশের উদ্ধৃতি দিয়ে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সিংড়া উপজেলার ছোট চৌগ্রামের আসমা বেগম প্রায় দুইবছর আগে নাটোর শহরের জনসেবা হাসপাতালে ডান কিডনির পাথরের অপারেশন করান। অপারেশনের ৮ মাস পর ব্যথা অনুভব হলে অন্য হাসপাতালে পরীক্ষা করান আসমা। ওই সময় ডাক্তাররা জানান, তার ডানপাশের কিডনি নেই। বিষয়টি জনসেবা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানানো হলে তারা কিডনি রয়েছে বলে যে চিকিৎসাপত্র দেয় তাতে আসমা বেগম সুস্থ হয়ে যান। সম্প্রতি তিনি আবার অসুস্থ হয়ে পড়লে গত বুধবার আরেকটি হাসপাতালে পরীক্ষা করা হলে সেখানে পরীক্ষার পর আবার জানা যায় তার কিডনি নেই। বিষয়টি নিয়ে শুক্রবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে আবার জানালে তারা কিডনি না থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেন। শুক্রবার দুপুরেই আসমা বেগমের ছেলে রবিউল ইসলাম নাটোর সদর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ বিকেলে ওই হাসাপাতালে অভিযান চালিয়ে সেখানকার চিকিৎসক রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবদুল হান্নানকে আটক করে। তবে পুলিশি অভিযানের আগেই পালিয়ে যায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে আটক ডাক্তারের দাবি কিডনি চুরি হয়নি। কিডনি ছোট হয়েছে। যদিও পরে আটক ডাক্তারকে জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়।
ডাক্তারদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের বিস্তর অভিযোগ আছে কিন্তু কিডনি চুরির অভিযোগ বিরল। ডাক্তার ও সংশ্লিষ্টদের যোগসাজসের কথা শোনা গেছে এতোদিনÑ এবার সরাসরি অভিযোগ চুরির। এই ঘটনা সত্যতা পাওয়া গেলে নিঃসন্দেহে তা হবে অত্যন্ত উদ্বেগের খবর। যে ডাক্তার রোগির জীবন বাঁচানোর শপথে দীক্ষা নেন, তিনই যদি রোগির মৃত্যুর কারণ হন কিংবা রোগির অজ্ঞাতে তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বের করে নেন, সেটা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর ব্যাপার। ডাক্তার রোগির মধ্যে যে আস্থা ও বিশ্বাসের ভয়ঙ্কর লঙ্ঘন। বিষয়টির সুষ্ঠু ও নিবিড় তদন্তের দাবি রাখে। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও অভিযুক্ত সামাজিক অবস্থানগত কারণেই প্রভাবশালী। অভিযোগকারী নিঃসন্দেহ অনেক দুর্বল। এই অভিযোগের নাগাল পাওয়া সহজসাধ্য কাজ নয়। তবুও আমাদের প্রত্যাশা, তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও ডাক্তার দোষি প্রমাণিত হলে তাদের দৃষ্টান্তিমূলক শাস্তি হবে।