সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১০ আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
নাটোর অফিস
বনপাড়া-হাটিকুমরুল সড়কে ৬ নম্বর ব্রিজের নিকট প্রাইভেট কারে ডাকাতদের হামলার ৪২ দিন পর নাটোর পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোস্তাক আহমেদ ভুট্টু মৃত্যুবরণ করেছেন। গতকাল সোমবার সকালে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। নিহত কাউন্সিলরের ভাই মাসুদ আহমেদ রুপক তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি নাটোর পৌর আওয়ামী লীগের উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ও শহরের কানাইখালি জেলে পাড়া মহল্লার নাটোর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর মরহুম মসেলম উদ্দিনের ছেলে।
নাটোর পৌরসভা ও তার পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত ৯ অক্টোবর রাতে নাটোর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোস্তাক আহমেদসহ চারজন ঢাকা থেকে একটি ব্যক্তিগত গাড়িতে করে নাটোরে ফিরছিলেন। রাত নয়টার দিকে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় মহাসড়কের ৬ নম্বর ব্রিজের ওপর গাড়িটির দুইটি চাকা পাংচার হয়। এসময় তারা গাড়ি থামালে অজ্ঞাত ডাকাতরা মোস্তাক আহমেদকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপায়। এতে তার পেটের পাঁচটি নাড়ী ফুটা হয়ে যায়। ওই দিন কাউন্সিলর ভুট্টু ও মিঠু শাহা, নাটোর পৌরসভার ২নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর জাহিদুল ইসলাম জাহিদ, লালবাজার এলাকার সঞ্জয় কুমার আহত হয়। আহত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করে প্রথমে সিরাজগঞ্জ সাকাওয়াত মেমোরীয়াল ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে ভুট্টু ও মিঠু শাহা, অবস্থা অবনতি হলে তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে ভুট্টুর অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে ৪২ দিন ধরে চিকিৎসা চলছিল।
এ ব্যাপারে নিহত ভুট্টুর বড় ভাই মাসুদ আহমেদ রুপক জানান, চিকিৎসকগণ তার শরীরে কৃত্রিম খাদ্যনালী সংযোজন করেছিলেন। কিন্তু তা ঠিক ঠাক কাজ করছিল না। রোববার রাত সাড়ে নয়টায় তিনি বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এসময় তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। অবশেষে সোমবার ভোর সাড়ে তিনটার দিকে তাকে লাইফ সাপোর্ট দেয়া হয়। সকাল ১০টায় তাকে মৃত ঘোষণা করেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক। সেখানে তার সঙ্গে তাঁর সহদর রুপক ও প্রিন্স ও স্ত্রী রিপা বেগম রয়েছেন। তাঁরা জানান, নিহত কাউন্সিলরের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে নাটোরে নিয়ে আসা হবে। তাঁর বয়স হয়েছিল ৪৬ বছর। মৃত্যুকালে তিনি দুই মেয়ে ও স্ত্রীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে যান।
ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে অবস্থানরত কাউন্সিলর ভুট্টুর এক নিকটতম আত্বীয় আজাদ হোসেন সেন্টু জানান, অনেক আগেই সে মারা গেছে। যেহেতু তার স্ত্রী রিপা বেগম স্কয়ার হাসপাতালে অবস্থান করছে। মৃত্যুর কথা শোনালে রিপা বেগমসহ অন্যসব আত্বীয় স্বজনরা ভেঙে পড়বে তাই তাদেরকে স্বাভাবিক রাখতে লাইফ সাপোটের্র কথা বলা হয়। তাদেরকে ঢাকার উত্তরায় এক আত্বীয়র বাসায় পাঠিয়ে দিয়ে লাশ নাটোরে আনা হবে। এছাড়া হাশপাতালে চার লাখ টাকা বাকীঁ আছে সেই বিষয়ে নিয়ে চিন্তিত রয়েছেন তারা।
নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সিরাজুল ইসলাম জানান, কাউন্সিলর ভুট্টু নাটোর পৌর আওয়ামী লীগের উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন। তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তাঁর মৃত্যুর খবরে সারা শহরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এদিকে তার মৃত্যুর সংবাদ শুনে নাটোর সদর আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল, শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানাতে ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে যান এবং গভীর শোক প্রকাশ কজলা রেন। এছাড়া নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী জলি, নাটোর জেলা আওয়ামী লীগ, পৌর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান এবং তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
গত ৯ অক্টোবর শনিবার রাত সারে ৯টার দিকে ঢাকা থেকে একটি প্রাইভেটকারে চরে বাড়ি ফিরছিল মোস্তাক আহমেদ ভুট্টু সহ চারজন। বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের ৬নং ব্রিজের নিকট একদল ডাকাত তাদের গতিরোধ করার জন্য রাস্তায় কাটা তার ফেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এতে ওই প্রাইভেটকারের দুইটি চাকা পাংচার হয়। তখন ডাকাতদল তাদের উপর এলোপাথাড়ীভাবে কুপিয়ে জখম করে এবং নগদ টাকা, স্বর্ণের চেইন, আংটি, ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়।