মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
নাটোর অফিস
নাটোরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে রোগির শরীর থেকে কিডনী চুরির অভিযোগে অভিযুক্ত চিকিসৎসক, হাসপাতালে পরিচালকসহ চারজনের নামে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী আসমা বেগমের স্বামী ফজলু বিশ্বাস। এছাড়া আরো ৭-৮ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে গতকাল বুধবার দুপুরে নাটোর সিনিয়র জুডিশিয়াল আদালত ২ মামলাটি দায়ের করা হয়।
পরে বিচারক শামসুল আল আমিন প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ মামলার বাদী এবং ভিকটিমকে আগামী সোমবার স্বশরীরে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। মামলায় অভিযুক্তরা হলেন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহকারী সার্জন ডা. এমএ হান্নান, নাটোর জনসেবা হাসপাতালের স্বত্তাধিকারী ডা. আমিরুল ইসলাম, পরিচালক রফিকুল ইসলাম, হাসপাতালের অজ্ঞানকারী চিকিৎসক ডা.এসবি হালদার। এদিকে পুলিশ হেফাজতে রোগিকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বোর্ডে হাজিরের জন্য জেলা পুলিশ সুপার বরাবার আবেদন করেছেন অভিযুক্ত চিকিৎসক, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং বিএমএ নেতারা।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, গত দুই বছর আগে সিংড়া উপজেলার ছোট চৌগ্রাম গ্রামের ফজলু বিশ্বাসের স্ত্রী আসমা বেগম পেটে ব্যাথা অনুভব করলে ২০১৫ সালের ১০ মে শহরের মাদরাসা মোড়ের জনসেবা হাসপাতালে নিয়ে যায় তার স্বজনরা। সেখানে পরীক্ষা নিরিক্ষার জন্য জনসেবা হাসপাতালের সনোলজিস্ট ডা. আশিকুর রহমান আসমা বেগমের আলট্রাসনোগ্রাফি করে দুইটি কিডনি স্বাভাবিক ও সুস্থ রয়েছে মর্মে রিপোর্ট দেন। পরবর্তীতে আবারো একই বছরের ৩০ মে রাজশাহীর লক্ষীপুরে গ্রীণ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কিডনি স্বাভাবিক এবং সুস্থর রিপোর্ট দেন। কিছুদিন পরে আসমা বেগম অসুস্থ বোধ করলে জনসেবা হাসপাতালের ডা. এমএ হান্নান তাহাকে ভর্তি করার পরমর্শ দেন। পরে ২০১৫ সালের ১২ জুন রাত ৮টার দিকে আসমা বেগমের পিত্ত থলিতে পাথর অপারেশন করেন রামেক হাসপাতালের সার্জারি বিভাগী সহকারী সার্জন ডা. এমএ হান্নান।
মামলায় আরো বলা হয়, আসমা বেগমের অপারেশনের পর কিছুতেই শরীর তিনি সুস্থ হয়ে উঠতে পারে নি। বরং দিন দিন আরো অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে গত ২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি আবারো জনসেবা হাসপাতালে নিয়ে যায়, সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক সনোলজিস্ট ডা. এবি সিদ্দিক আলট্রাসনোগ্রাফি করে রিপোর্ট দেয় ডান কিডনি না থাকার বিষয়টি। পরে আবারো বিষয়টি নিশ্চত হওয়ার জন্য শহরের আইডিয়াল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, কেয়ার হাসপাতাল এবং সর্বশেষ বগুড়ার পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা নিরীক্ষায় একই ফলাফল আসে। কিন্তু বিষয়টি গত ৩ ফেব্রুয়ারি অভিযুক্ত ডাক্তারসহ অন্যদের জানানো হলে তারা উল্টো হুমকি দিয়ে বিষয়টি বাড়াবাড়ি না করার জন্য চাপ দিতে থাকে।
বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট বকুল হোসেন জানান, আদালত মামলাটি পর্যবেক্ষণে রেখেছে। যার কারণে আগামী সোমবার ভিকটিম, মামলার বাদীকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ স্বশরীরে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য বিচারক নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার বাদী ফজলু বিশ্বাস জানান, আমার স্ত্রী আসমা বেগমকে হত্যা করার জন্য এবং উচ্চ মূল্যে কিডনি বিক্রির জন্য চিকিৎসক, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডান কিডনি সরিয়েছে। অভিযুক্তদের প্রয়োজনীয় শাস্তির জন্য আমি আদালতের দারস্ত হয়েছি।
মামলার বিষয়ে জনসেবা হাসপাতালের পরিচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আদালত যা করবে সেটাই আমরা মেনে নিবো।
এদিকে পুলিশ হেফাজতে রোগিকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বোর্ডে হাজিরের জন্য জেলা পুলিশ সুপার বরাবার আবেদন করেছেন অভিযুক্ত চিকিৎসক, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং বিএমএ নেতারা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) জেলা শাখার সভাপতি ডা. এসএম জাকির হোসেন বলেন, ঘটনার দিন ৩ ফেব্রুয়ারি ভিকটিমের স্বামী থানায় উচ্চতর পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য লিখিত দিয়েছি। কিন্তু হাসপাতাল এবং চিকিৎসকের পক্ষ থেকে ভিকটিমের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা আসে নি। এই অবস্থায় রোগিকে পুলিশি হেফাজতে মেডিকেল বোর্ডে হাজির হওয়ার জন্য জেলা পুলিশের কাছে আবেদন করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে নাটোরের পুলিশ সুপার বিপ্লব বিজয় তালুকদার জানান, এ ধরনের কোন আবেদন তার কাছে আসে নি।