নাটোর২-সংসদ সদস্য শিমুলের দশ বছরে স্ত্রী সুমির আয় বেশী, সম্পদ বেড়েছে ৬৯ গুণ

আপডেট: ডিসেম্বর ৮, ২০২৩, ৭:১৬ অপরাহ্ণ


নাটোর প্রতিনিধি:


নাটোর-২ (সদর ও নলডাঙ্গা) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শফিকুল ইসলাম শিমুলের তুলনায় বেশি সম্পদের মালিক তাঁর স্ত্রী জান্নাতি সুলতানা সুমি। স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে সংসদ সদস্য শিমুলের সম্পদের মূল্য ৪ কোটি ৬৫ লাখ ৩১ হাজার টাকা। স্ত্রী সুমির সম্পদের মূল্য ৭ কোটি ৫৭ লাখ ৭১ হাজার টাকা।

গত ১০ বছরে নাটোর-২ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে প্রায় ১৪ গুণ। এই সময়ের মধ্যে তার স্ত্রী শামীমা সুলতানা জান্নাতীর সম্পদ বেড়েছে ৬৯ গুণের বেশি।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামা এবং একাদশ জাতীয় নির্বাচনের হলফনামায় তথ্য বিবরণীতে দেখা যায়, গত ১০ বছরে সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ বাড়ে প্রায় ১৪ গুণ। এই সময়ের মধ্য তার স্ত্রী শামীমা সুলতানা জান্নাতির সম্পদ বেড়েছে ৬৯ গুণের বেশি ।

শফিকুল ইসলাম শিমুল নাটোর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচনে তিনি এমপি নির্বাচিত হন। এর পর থেকে বেড়েছে এই দম্পতির সম্পদ। ২০১৮ সালে শিমুলের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বেড়ে দাঁড়ায় ৩ কোটি ৮৩ লাখ ২৮ হাজার ৯০৮ টাকা। ২০১৮ সালের হলফনামায় শিমুলের স্ত্রীর সম্পদের পরিমাণ বেড়ে হয় ১ কোটি ৮৫ লাখ ১৭ হাজার ৬৯৯ টাকা।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, শুরুটা ২০০৯ সালে নাটোর-২ (নাটোর সদর ও নলডাঙ্গা) আসনে এমপি হন আহাদ আলী সরকার। পান যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব। তিনি ক্লিন ইমেজের রাজনীতিক হলেও মন্ত্রী হওয়ার পর ব্যর্থ হন নিজের দুই পুত্র সোহেল সরকার ও বকুল সরকারের দৌরাত্ম্য সামাল দিতে। আর এ সুযোগটি নেন, ওই সময়ের সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সাবেক জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বর্তমান এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুল। বিএনপির রাজনীতির জবাবে নাটোরের রাজনীতির টার্ফে উত্থান ঘটে এই যুবনেতার। অর্জন করেন বিপুল জনপ্রিয়তাও। ৯৬তে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদে থেকে নির্বাচিত হন সদর উপজেলা চেয়ারম্যান।

শিমুল ২০১৩ সালের হলফনামায় পেশা হিসেবে দেখিয়েছিলেন ঠিকাদারি এবং সরবরাহকারী। ব্যবসা থেকে বার্ষিক আয় দেখানো হয়েছিল ৩ লাখ ২৩ হাজার ৯২০ টাকা। উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে সম্মানী বাবদ আয় ছিল ২ লাখ ৪৬ হাজার টাকা। তবে তখন স্ত্রীর কোনো পেশা উল্লেখ করেননি তিনি।

তখন শিমুলের অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে ছিল নগদ ১১ লাখ ১২ হাজার ৩৩৬ টাকা। নিজের নামে ব্যাংকে জমা দেখিয়েছিলেন ৭ লাখ টাকা। স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে ছিল শুধু ২৫ হাজার টাকা মূল্যের ৩৩ শতাংশ কৃষি জমি।

অন্যদিকে তার স্ত্রীর বাৎসরিক আয় ছিল শূন্য। তার কোনো স্থাবর সম্পত্তিও ছিল না।
২০১৮ সালে শিমুলের নগদ টাকার পরিমাণ বেড়ে হয় ১ কোটি ১৫ হাজার ৪৩ লাখ ৩০৪ টাকা। ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ছিল ১ কোটি ২৬ লাখ ৬৭ হাজার ৪০৪ টাকা, পোস্টাল সেভিংস সার্টিফিকেট ৩৩ লাখ টাকার এবং সঞ্চয়পত্রে ছিল ৪০ লাখ টাকা। তখন শিমুলের ব্যক্তিগত ঋণ ছিল ৫০ লাখ টাকা এবং ব্যাংক ঋণ ছিল ১০ লাখ ১ হাজার ৩৮৪ টাকা।
স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে শিমুলের ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার হাজার টাকার ৬৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ কৃষি জমি এবং ৩ শতাংশ অকৃষি জমি, যার মূল্য ১ লাখ ২৩ হাজার ২০০ টাকা। স্ত্রীর নামে ছিল ১৬ লাখ ৩৫ হাজার ২০০ টাকার মূল্যের ১৪ দশমিক ১১ শতাংশ অকৃষি জমি। তবে বাড়ি, ফ্ল্যাট, দালান কিছু ছিল না তার।

২০১৮ সালের হলফনামায় সুমির সম্পদ ছিল ১ কোটি ৮৫ লাখ ১৮ হাজার টাকার। এবার বেড়ে হয়েছে ৭ কোটি ৫৭ লাখ ৭১ হাজার টাকা। এর মধ্যে ৩ কোটি ৫৯ লাখ ৪২ হাজার টাকার কৃষি ও অকৃষি জমি ও ৮১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের দালান বাড়ি রয়েছে। বাকি ৩ কোটি ১৬ লাখ ৫৪ হাজার ৬৫৬ টাকার মধ্যে নগদ, ব্যাংকে জমা, শেয়ার, স্থায়ী আমানত, গাড়ি, স্বর্ণ ও আসবাব রয়েছে। নগদ আছে ১ কোটি ৫৬ লাখ ৬৯ হাজার ৪৭০ টাকা।

২০২৩ সালের হলফনামা অনুযায়ী, শিমুলের স্ত্রীর নামে ৪ কোটি ৪১ লাখ টাকার বাড়ি এবং ফ্ল্যাট আছে। এর মধ্যে তিনতলা বাড়ি মূল্য ৩ কোটি ৫৯ লাখ ৪২ হাজার ৫০ টাকার এবং ফ্ল্যাটের মূল্য ৮১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। তার নগদ টাকা আছে ১ কোটি ৫৬ লাখ ৬৯ হাজার ৪৭০ টাকা। ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আছে ৭৮ হাজার ৮৭১ টাকা, ৩৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার ব্যক্তিগত গাড়ি ও ৩৫ ভরি সোনা ৫০ লাখ টাকার শেয়ার এবং এফডিআর ৬৯ লাখ ৬ হাজার ৩১৫ টাকা।

এখন শিমুলের নগদ টাকার পরিমাণ ১ কোটি ৫৬ লাখ ৬৯ হাজারর ৪৭০ টাকা, ব্যাংক এবং শেয়ার বাজারে সামির ইমপ্যাক্ট লিঃ প্রতিষ্ঠানে নিজের ৫০ লাখ, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আছে ৩৩ লাখ ৩২ হাজার ১৫০ টাকা, এফডিআর ২১ লাখ ৪৭ হাজার ৬৭৩ টাকা, সেভিংস সার্টিফিকিটে ৪০ লাখ টাকা, দুইটি গাড়ি ১ কোটি ৫৩ লাখ ৩৬ হাজার টাকা স্বর্ণালংকার ১ লাখ টাকা, ইলেকট্রনিক্স ২০ হাজার টাকা এবং আসবাবপত্র ১ লাখ টাকা।

২০১৩ সালে শিমুলের ৯ লাখ টাকার একটি গাড়ি ছিল তবে স্ত্রীর নামে কোনো গাড়ি ছিল না। এখন তার নিজের দুটি জীপ ১ কোটি ৫৩ লাখ ৩৬ হাজার টাকার এবং স্ত্রীর ৩৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের একটি জিপ আছে।

২০১৮ সালের নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী শিমুলের সম্পদ ছিল ৩ কোটি ৮২ লাখ ২৮ হাজার টাকার। এবার বেড়ে হয়েছে ৪ কোটি ৫৬ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে নগদ ১ কোটি ৫৬ লাখ ৯ হাজার টাকা।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামা ও একাদশ জাতীয় নির্বাচনের হলফনামা দেখা গেছে, গত ৫ বছরে শিমুলের আয় ১১ লাখ ২৯ হাজার ১৩২ টাকা কমে হয়েছে ৫৩ লাখ ৩ হাজার টাকা। তবে স্ত্রী সুমির আয় ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা বেড়ে হয়েছে ২৮ লাখ ২৮ হাজার টাকা।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ