নাটোর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পরিদর্শন করে প্রশংসিত হলেন সদর ইউএনও

আপডেট: জুন ১, ২০২৩, ১২:০১ পূর্বাহ্ণ

নাটোর প্রতিনিধি:


মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে নাটোরে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া তৃতীয় পর্যায়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পরিদর্শন করেছেন, সদর উপজেল নির্বাহী কর্মকর্তা সারমিনা সাত্তার। মঙ্গলবার (৩০ মে) বিকালে উপজেলার দিঘাপতিয়া ইউনিয়নের মালিপাড়া গ্রামে আশ্রয়ণ প্রকল্পের নির্মাণ কাজের পরিদর্শন করেন তিনি। এসময় নাটোর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১এর সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী,এমদাদুল হক,সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ ও উপজেলা নির্বাহী কার্য্যলয়ের অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, গত মঙ্গলবার বিকালে প্রচন্ড তাপদাহ উপেক্ষা করেই নাটোর সদর উপজেলার ভাতুরিয়া লঞ্চঘাট এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পে ছুটে যান,উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সারমিনা সাত্তার। কারণ সেখানে বসবাসরত ১৪টি পরিবার প্রায় এক বছর যাবৎ বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল ওইসব পরিবার গুলো। পরে প্রতিটার পরিবারের সাথে আলাদা ভাবে কথা বলেন এবং সুবিধা বঞ্চিতদের অভিযোগ শুনেন ধৈর্য্যরে সাথে। ব্যবস্থাও নেন তড়িৎ গতিতে দীর্ঘ্য দিন ধরে টিনের চালের উপর পরে থাকা বাঁশগুলো কর্তন করাসহ সরকারি ভূমির সিমানা নির্ধারন করে দেয়ার জন্য বলা হয়, সদর উপজেলা ভূমি কর্মকর্তাকে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে সাধারন মানুষের মনে ভালোবাসার জায়গা করে নিয়েছেন এই ইউএনও। শুধু আশ্রয়ন প্রকল্পে ঘর নির্মানেই নয়, প্রশংসা কুড়িয়েছেন নানা কার্যক্রমে। তিনি দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ঘুরে বেয়ান উপজেলার প্রত্যান্ত এলাকা গুলোতে। খোঁজ খবর নেন অসহায় মানুষদেরও। খুব অল্প সময়ে এক অনন্য নজির গণমাধ্যম, ফেসবুক এবং মুঠোফোনের মাধ্যমে পাওয়া বিভিন্ন অভিযোগ দ্রুত সমাধান ও তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়ে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রশংসাও কুড়িয়েছেন তিনি।
আশ্রয়ন প্রকল্পে ঘর পাওয়া সাজিদা বেগম (৪২)জানান, প্রায় এক বছর পূর্বে এ আশ্রয়নে ঘর পাইছেন তিনি। বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ায় তার ১৪টি পরিবার চরম কষ্টের মধ্যে ছিলে।এর মধ্যে বেশি সমস্যা হতো ছোট্র শিশু এবং বয়স্ক লোকজনের আজ থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়ায় অনেক খুশি হয়েছেন তারা। এর বাইরে বসচেয়ে বেশী ভাল লাগিছে ইউএনও স্যারের ব্যবহার খুব অল্প সময়ে আমরা সবাই তার অনেক আপনজন হয়ে গেছি।
অপরজন জরিনা বেওয়া (৭০) তিনি বলেন, ২৬ বছর আগে তার স্বামী মারা গেলে পগল ছেলে মজিদকে নিয়ে বসবাস করে সেখানে। আয় রোজগার বলতে কলার মোচা, থোড় যা (ফলন্ত কলা গাছের কান্ড) কচুঁর লতি,শাক,সবজি বিক্রয় করে যা আয় হয় তাই দিয়ে সংসার চলে। গরমে অনেক কষ্ট হত তার ঘরে বাইরে থাকা যেতনা এখন আর সেই কষ্ট হবেনা । ইউএনও মা অনেক ভাল তার কথা আর ব্যবহারে শুখি হইছি।
নাটোর সদর উপজেলা সূত্রে জানা যায়, মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ন প্রকল্প এ উপজেলায় প্রথম দফায় ১৬২ টি দ্বিতীয় দফায় ১০০ টি এবং তৃতীয় দফায় ৪২৭ টিসহ মোট ১হাজার ৮৯টি ঘর বরাদ্ধ পেয়েছেন। এর মধ্যে এর মধ্যে ৬শ ৮৯টি গৃহ নির্মাণ শেষে হস্তান্তর করা হয়েছে। অন্যগুলো কিছু কারনে সম্পূর্ণ হয়নি তবে এসব গৃহ নির্মাণ খুব দ্রুত শেষ করে জুন-জুলাই মাসের মধ্যে হস্তান্তর করা হবে। প্রথম ও দ্বিতীয় দফার ঘরগুলো ১ লক্ষ ৭১ হাজার টাকায় নির্মাণ করা হয়। তৃতীয় দফার ঘরগুলোর টেকসই ও গুণগত মান বিবেচনা করে ঘর প্রতি ২ লক্ষ ৮৪ হাজার টাকা করে নির্মাণ করা হচ্ছে।
নাটোর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সারমিনা সাত্তার বলেন, ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য চমৎকার পরিবেশে মানসম্মত টেকসই ৬শ ৮৯ টিঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে এবং ৪শটি ঘরের কাজ চলমান রয়েছে। আমাদের গৃহনির্মাণ কাজ শেষ হলেই গৃহহীন ও ভূমিহীনদের মাঝে বিতরণ করা হবে। এসব ঘরে আশ্রয়া পাওয়াদের অধিকাংশই রাস্তার ধারে ফুটপাত বা কারও আশ্রয়ে বসবাস করতেন। এখন তারা প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘর উপহার পেলেন। এর ফলে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। পর্যায়ক্রমে উপজেলার শতভাগ দরিদ্র জনগোষ্ঠী যাদের জমি ও ঘর নাই, তাদের বসবাসের জন্য বাড়ি করে দেওয়া হবে।
এ বিষয় নাটোর জেলা প্রশাসক আবু নাসের ভূঞা বলেন, ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য চমৎকার পরিবেশে মানসম্মত টেকসই ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে।
এসব ঘরে আশ্রয়া পাওয়াদের অধিকাংশই ওই মানুষগুলোর কিছু দিন আগেও কোনো স্থায়ী ঠিকানা ছিলো না। এখন তাদের নিজেদের জমি ও ঘর হচ্ছে। তারা এখন কয়েকটি ধাপে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘর উপহার পাচ্ছেন। এর ফলে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। বর্তমান সরকারের নির্দেশনা রয়েছে দেশে কোন ভূমিহীন ও গৃহহীন থাকতে পারবে না। আমরা সে অনুযায়ী কাজ করতেছি। বঙ্গবন্ধু, এদেশের গরীব মেহনতি মানুষের জন্য যে স্বপ্ন দেখে ছিলেন, তাদের মুখে হাসি ফোটানো কাজ করছেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।