মঙ্গলবার, ৩০ মে, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৬ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
সোনার দেশ ডেস্ক
একশ ৭৪টি কেন্দ্রের কোথাও গোলযোগ-সহিংসতা হয়নি, ভোট স্থগিত করতে হয়নি কোথাও; তেমন কোনো অভিযোগও ছিল না প্রার্থীদের- বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে শেষ নির্বাচনটির পরিবেশ ছিল এমনই।
নারায়ণগঞ্জে বৃহস্পতিবারের ভোটচিত্র দেখে নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বর্তমান ইসির সময়ে অনুষ্ঠিত সব খারাপ দৃষ্টান্ত থেকে ভালোর পথে একটা রূপান্তর এই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন।
ইউনিয়ন, উপজেলা ও পৌরসভা নির্বাচনে সহিংসতা আর গোলযোগের পর নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন ঘিরেও ছিল অনেকের শঙ্কা; সাত খুনের ঘটনাসহ নানা কারণে আলোচিত এই নগরীতে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত ছিল প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কেন্দ্র। কিন্তু শঙ্কা মুছে দিয়েই ভোট হয়েছে নারায়ণগঞ্জে, যাতে ভোটারদের মধ্েয কোনো অস্বস্তি দেখা যায়নি; প্রার্থীদের কণ্ঠেও শোনা যায়নি অন্য সব ভোটের মতো অভিযোগের সুর।
গত পাঁচ বছর ধরে সমালোচিত কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন কমিশনের অধীনে এই নির্বাচনে সুষ্ঠু ভোট আয়োজনের সব নিয়ামক একসঙ্গে কাজ করেছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
তারা বলছেন, প্রার্থী, দল, ভোটার, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারের সহায়তা-এ পাঁচটি একসূত্রে কাজ করেছে এবার। ভোটগ্রহণের পর সিইসি কাজী রকিবও বলেছেন, সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতায় নারায়ণগঞ্জে শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামান তালুকদার বলেছেন, সুষ্ঠু ভোটের জন্য যা যা করা দরকার সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। এ নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে ‘অবিস্মরণীয়’ ভোট উপহার দেয়ার প্রত্যয় ছিল তাদের।
নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের একটি মোর্চা ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইডব্লিউজি) পরিচালক আব্দুল আলীম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাম্প্রতিক খারাপ দৃষ্টান্তগুলো থেকে নারায়ণগঞ্জের এ নির্বাচন ভালো দৃষ্টান্তের রূপান্তর ঘটেছে। এটা একটা ইউ টার্ন; একটা ভালো দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। যার ইতিবাচক প্রভাব সবখানে পড়বে।” সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যত ধরনের ‘ফ্যাক্টর’ দরকার, তার সবটুকুই এ সিটি নির্বাচনে হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
“দুজন ভালো ইমেজের প্রার্থী, পরিচ্ছন্ন প্রচারণা, ভোটার ও প্রার্থীর বিধি লঙ্ঘনে অনাগ্রহ, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি, বিদায় বেলায় ইসির ভালো পদক্ষেপ, রাজনৈতিক দলের সহনীয় মনোভাব, সরকারের সহযোগিতা, স্থানীয় সাংসদের আচরণবিধি প্রতিপালনের প্রবণতা দেখা গেছে।”
দলীয় প্রতীকের এই ভোটে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী এবং বিএনপির প্রার্থী সাখাওয়াত হোসেন খান দুজনই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ। প্রচারণায় ব্যক্তি আক্রমণ করতেও দেখা যায়নি তাদের।
ইডব্লিউজি পরিচালক আলীম বলেন, “এবার দুই দলই ভালো প্রার্থী বাছাই করেছেন, যাদের নিয়ে ভোটারদেরও মনে সমালোচনা কম হয়েছে। ব্যক্তি বিদ্বেষ ছিল না, যা ভোটারদের ভালো নির্বাচনের দিকে নিয়ে গেছে।”
বিএনপির সেনা মোতায়েনের দাবি প্রত্যাখ্যান করলেও পরিস্থিতি শান্ত রাখতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাড়ে ৯ হাজার সদস্য মোতায়েন ছিল পৌনে ৫ লাখ ভোটারের নগরী নারায়ণগঞ্জে, এর মধ্েয বিজিবিও ছিল।
আলীম বলেন, “আমরা দেখলাম- ভোট নির্বাচন কমিশনের একার নয়। এক্ষেত্রে সব ফ্যাক্টর একযোগে কাজ করেছে এবং যার সফলতা এসেছে সব অর্গানের সমন্বিত কার্যক্রম। এখন সবাই একমত হবে, নির্বাচন কমিশন, সরকার, প্রার্থী একযোগে কাজ করলে ভালো নির্বাচন সম্ভব।”
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একটা ভালো নির্বাচন পেয়েছি আমরা। এর মাধ্যমে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন এবং সবার সহযোগিতায় সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করার বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে।”
তিনিও বলেন, এ নির্বাচনে প্রার্থী-ভোটার-দল-সরকার-ইসি-আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সব নিয়ামক একসূত্রে কাজ করেছে। যে জন্য একটি দৃষ্টান্তমূলক নির্বাচন সম্ভব হয়েছে।
বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিবেশে ও বর্তমান ইসির বিদায়ের শেষ সময়ে এমন নির্বাচন অংশীজনসহ সবার মধ্যে আস্থা তৈরি করবে বলে মনে করে নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ।
গত পাঁচ বছরের দায়িত্ব পালনে গোলযোগ থামাতে ব্যর্থতার জন্য যেমন সমালোচিত ছিল এই ইসি; তেমনি অনিয়ম ও বিধি লঙ্ঘন ঠেকাতে ব্যর্থতার জন্য ‘সরকারের আজ্ঞাবহ’ গালিও শুনতে হয়েছে তাদের।
আগামী ফেব্রুয়ারিতে বিদায় নেবে কাজী রকিবের এই ইসি; নতুন কমিশন গঠনের তোড়জোড়ও শুরু হয়ে গেছে এরই মধ্েয, যাদের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচন হবে।
সহিংসতা-বর্জনের ধারাবাহিকতার বিপরীতে অনুষ্ঠিত হওয়া নারায়ণগঞ্জের চিত্র আগামীতে ভোটের পরিবেশ বদলাতে ভূমিকা রাখবে বলে আশা পর্যবেক্ষকদের।- বিডিনিউজ