সোমবার, ১৭ মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩ চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
সিলেট টেস্টে নিউজিল্যান্ডকে ১৫০ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। রানের হিসাবে টেস্টে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয় কোনটি? খুব বেশি পিছিয়ে যাওয়ার দরকার নেই। গত জুনেই মিরপুরে আফগানিস্তানকে ৫৪৬ রানে হারিয়েছিল বাংলাদেশ; যা শুধু বাংলাদেশেরই নয়, একবিংশ শতাব্দীতেই টেস্টে কোনো দলের সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয়। তবে জয়টা ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণ টেস্টে নবীন সদস্য আফগানিস্তানের বিপক্ষে বলেই সেই বিশাল জয়কেও খুব একটা বড় করে দেখা হয় না, এমনকি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাওয়া দেড় শোর্ধ্ব রানের পাঁচ-পাঁচটি জয়কেও না। কিন্তু সিলেটের জয়টিকে ওপরের সারিতে রাখতেই হবে। সিলেটে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে পাওয়া ১৫০ রানের জয়টা যে আইসিসি টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ পাঁচে থাকা দলগুলোর বিপক্ষে রানের হিসাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়। বড় দলগুলোর বিপক্ষে এর আগে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়টা ছিল ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। মিরপুরে সে ম্যাচে অ্যালিস্টার কুক-বেন স্টোকসদের ১০৮ রানে হারিয়েছিল বাংলাদেশ।
জিম্বাবুয়ে ও আফগানিস্তানের বাইরে টেস্ট খেলুড়ে অন্য দলগুলোর বিপক্ষে রানের হিসাবে সিলেট টেস্টেই সবচেয়ে বড় জয় পেল নাজমুল হোসেনের দল। নিজেদের ১৩৯তম টেস্ট ম্যাচে ১৯তম জয় পাওয়া বাংলাদেশ প্রতিপক্ষকে ১০০ বা এর চেয়ে বেশি রানের ব্যবধানে হারাল ৯ বার (ইনিংস ব্যবধানে জয় ব্যতীত)। তবে বড় দলের বিপক্ষে ১০০ রানের বেশি ব্যবধানে জয় এই দুটিই। ইনিংস ব্যবধানে সবচেয়ে বড় জয় হিসাবে আনলে সেটা ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। এ নিয়ে ৩ টি দলের বিপক্ষে একাধিক টেস্ট জিতলো বাংলাদেশ—জিম্বাবুয়ে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের পর নিউজিল্যান্ড। যেকোনো দলের বিপক্ষে উইকেট ব্যবধানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয়টা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেই। গত বছর মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে ইতিহাস গড়ার ম্যাচে কিউইদের হারিয়েছিল ৮ উইকেটে। সেটা এখন পর্যন্ত সব সংস্করণ মিলিয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তাদেরই মাটিতে বাংলাদেশের একমাত্র জয়। সে সময়ও নিউজিল্যান্ড ছিল আইসিসি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের চ্যাম্পিয়ন এবং র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ পাঁচ দলের একটি। ভারত, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকা—এই ৩ দলের বিপক্ষে এখনো টেস্ট জিতেনি বাংলাদেশ।
নিউজিল্যান্ডে এক গাদা অভিজ্ঞ ক্রিকেটার ও বিশ্বের সেরা কয়েকজনকে নিয়ে গড়া পূর্ণশক্তির দল। লম্বা বিশ্বকাপে সেমি-ফাইনালে খেলার পরও মূল ক্রিকেটারদের কাউকে তারা বিশ্রাম দেয়নি। সবটুকু মনোযোগ এই সিরিজে দিয়েছে। কারণটাও বোধগম্য। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম আসরের চ্যাম্পিয়ন তারা। আর বাংলাদেশ দলের শক্তির ঘাটতি তো ছিলই। চোটের কারণে নেই অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। পারিবারিক কারণে নেই সহ-অধিনায়ক লিটন কুমার দাস। তামিম ইকবাল তো অনেক দিন ধরেই অনিয়মিত। পেস আক্রমণের মূল দুই অস্ত্র ইবাদত হোসেন চৌধুরি ও তাসকিন আহমেদও মাঠের বাইরে চোটের কারণে। এই দলটা তাই অনেকটাই খর্বশক্তির। সেখানে অবশ্য তাদের অভাবটা এবার নবীন টাইগাররা বুঝতে দেয়নি। তাদের ছাড়াও যে বাংলাদেশ জিততে পারে। সেটা সিলেট টেস্টে প্রমাণ করে দিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত-তাইজুলরা। বিশ^কাপের পর অনেকটা হতাশা নিয়ে দেশে ফিরে ছিলেন তারা। কিন্তু দেশের ক্রিকেটপ্রেমিদের এই জয় উপহার দিলেন নতুন এক সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। অনেকটা নবীন খেলোয়াড়দের নিয়ে এবারের টেস্ট দলটা নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নেমেছিল। তারা প্রথম থেকে একটা সুন্দর টিমওয়ার্কের মাধ্যমে খেলে সাফল্য বয়ে এনেছে। এই ধারা আগামীতে অব্যাহত থেকে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে অনেকটা এগিয়ে নিয়ে যাবে। এটাই ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রত্যাশা।