শনিবার, ১০ জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ২৭ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
রবিউল ইসলাম বিদ্যুৎ
বাংলাদেশের নিউজিল্যান্ড সফর নিয়ে দেশের ক্রিকেটাঙ্গনে আলোচনা একটু বেশিই হচ্ছে। অবশ্য এই আলোচনা ইতিবাচক। এর আগেও বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ড সফর করেছে। প্রত্যাশা কম থাকায় এত আলোচনা হয় নি।
কিন্তু এবার যে বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ডের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে অস্ট্রেলিয়ার ক্যাম্প করছে তাদের প্রতি প্রত্যাশা বেড়েছে কয়েকগুণ। অবশ্য এটা তাদেরই সৃষ্টি। বাংলাদেশের এই দলের মানসিকতা আর আগের বাংলাদেশের মানসিকতা এক নয়। এই দল এখন কোন প্রতিপক্ষের সামনে মাথা নত করে না। এই বাংলাদেশ দল ক্রিকেট বিশ্বে অন্যতম শক্তিধর হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দেওয়া বাংলাদেশ।
২০১৫ বিশ্বকাপ থেকে বাংলাদেশকে অন্যভাবে চিনেছে ক্রিকেট বিশ্ব। ইংল্যান্ডকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করা মাশরাফি বিন মুর্তজার দলকে সমীহ করে চলে প্রতিটি দল। তার প্রমাণ ঘরের মাঠে দেখে গেছে পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা।
ছোট একটা পরিসংখ্যান দিলে বিষয়টিকে স্পষ্ট করে তোলা যায়। ২০১৫ সালের এপ্রিল থেকে ইংল্যান্ড সিরিজ অবধি বাংলাদেশ ১৮টি ওয়ানডে খেলেছে। এরমধ্যে ১৩টি ম্যাচ জিতেছে মাশরাফির দল। বোঝাই যাচ্ছে, এই সময়টাতে বাংলাদেশ কতটা আধিপত্য দেখিয়েছে। এরমধ্যে তো পাকিস্তানকে তিন ম্যাচের তিনটিতেই পরাজয়ের স্বাদ উপহার দিয়েছে। বাংলাদেশের সামনে রেহাই পায়নি দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ভারতও। দুদলকেই বাংলাদেশে ওয়ানডে সিরিজ বিসর্জন দিতে হয়েছে।
সর্বশেষ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ বাংলাদেশ হেরেছে ১-২ ব্যবধানে। কিন্তু সিরিজটি বাংলাদেশ ২-১ ব্যবধানে সহজেই জিততে পারত। সেটা হয়নি স্রেফ ইংল্যান্ডের ভাগ্য ভাল বলে! কিন্তু টেস্ট সিরিজে ইংল্যান্ড ঠিকই টের পেয়েছে এই বাংলাদেশ আগের বাংলাদেশ নেই। চট্টগ্রামে জয়ের খুব কাছে গিয়েও জয় বঞ্চিত থাকতে হয়েছিল। মিরপুরে সেই আক্ষেপ ঘুচিয়ে বাংলাদেশ তিনদিনেরও কম সময়ে টেস্ট জিতে নেয় ১০৮ রানের বিশাল ব্যবধানে।
এই জয় টেস্টে ক্রিকেটে বাংলাদেশের বদলে যাওয়ারই ইঙ্গিত। মেহেদি হাসান মিরাজ নামে নতুন এক প্রতিভা এসেই সবাইকে তাক লাগিয়ে সিরিজ সেরার পুরস্কার হাতে তুলে নিয়েছে। মাশরাফি রঙিন পোশাকের বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন অন্য উচ্চতায়। মুশফিকুর রহীমও রঙিন পোশাকের পারফরম্যান্স সাদা পোশাকে সঞ্চারিত করতে চাইছেন।
বিশ্বকাপের পর বাংলাদেশের সব সাফল্য এসেছে দেশের মাটিতে। ইংল্যান্ডের সঙ্গে দুর্দান্ত এক টেস্ট সিরিজ শেষ হওয়ার পর জিওফ বয়কট বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ বিদেশের মাটিতে জিতে দেখাক।’ মাশরাফি-মুশফিকরাও চাইছেন দেশের মাটিতে পাওয়া সাফল্যের অনুরণন বিদেশেও ঘটাতে।
মাশরাফি ও মুশফিক দুজনই চাইছেন, নিউজিল্যান্ডের মাটিতে নতুন শুরু করতে। বাংলাদেশ দল ভাল করার প্রেরণা পাচ্ছে বিশ্বকাপ থেকে। সেই আত্মবিশ্বাস থেকে মাশরাফি দেশ ছাড়ার আগে যেমন বলেছেন, ‘নিউজিল্যান্ডে জেতা কঠিন কিন্তু অসম্ভব নয়।’বিদেশেও ভাল খেলার ধারাবাহিকতা টেনে নিয়ে যেতে চান মুশফিকুর। তার কথায়, ‘বিশ্বকাপে এখানে আমরা ভাল খেলেছি। এটা নিশ্চয় আত্মবিশ্বাস জোগাবে। আমাদের নতুন লক্ষ্য বিদেশের মাটিতে ধারাবাহিকভাবে ভাল খেলা।’ বিশ্বকাপেই নিউজিল্যান্ডে সবশেষ খেলেছে বাংলাদেশ। এরআগে শেষবার বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলতে নিউজিল্যান্ড গিয়েছিল ২০১০ সালে। সে বছরই ঘরের মাঠে ড্যানিয়েল ভেট্টরির নিউজিল্যান্ডকে পেয়ে হোয়াইটওয়াশ করে ছেড়েছিল বাংলাদেশ। এর তিন বছর পর আবার কিউইরা বাংলাদেশে এসে হোয়াইটওয়াশের লজ্জায় পুড়েছে। সবমিলে ঘরের মাঠে ছয় টেস্টের তিনটিতে ড্র, ১৩টি ওয়ানডের মধ্যে আটটি জিতেছে বাংলাদেশ। একমাত্র টি-২০ ম্যাচে পরাজয়।
নিজেদের চেনা কন্ডিশনে নিউজিল্যান্ড কতটা ভয়ংকর সেটাও দেখেছে বাংলাদেশ। পাঁচ টেস্টের তিনটিতে ইনিংস ব্যবধানে হার, অপর দুটির একটি ৯ উইকেটে অন্যটি হেরেছে ১২১ রানের বড় ব্যবধানে। আর সাত ওয়ানডে খেলে হেরেছে সবই। একমাত্র টি-২০ ম্যাচেও হেরেছে বাংলাদেশ।
কিন্তু এবার প্রেক্ষাপট আলাদা। মাশরাফি-মুশফিকরা নতুন লক্ষ্য নিয়ে দেশ ছেড়েছে। এখন দেখাই যাক, নতুন লক্ষ্যকে তারা কতটা পূর্ণতা দিতে পারেন।
অস্ট্রেলিয়ায় দশ দিনের কন্ডিশনিং ক্যাম্প শেষে নিউজিল্যান্ডে উড়াল দেবে টাইগার শিবির। আগামী ২৬ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে মাঠের লড়াই। ক্রাইস্টচার্চে প্রথম ওয়ানডে দিয়ে মাঠে গড়াবে সিরিজের উত্তাপ। নিউজিল্যান্ড সফরে তিন ওয়ানডে, তিন টি-২০ ও দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলবে মাশরাফি-মুশফিকরা।