নিখোঁজ দুই স্কুলছাত্রীর বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার, গ্রেফতার তিন

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৭, ১২:২৮ পূর্বাহ্ণ

চাঁপাইনবাবগঞ্জ অফিস



চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌর এলাকার নামোশংকরবাটী ফতেপুর মহল্লা থেকে দুইদিন আগে নিখোঁজ হওয়া দুই শিশু সুমাইয়া খাতুন মেঘলা (৭) ও মেহজাবিন আক্তার মালিহার (৬) বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রতিবেশী ইয়াসিন আলীর বাড়ির একটি ঘর থেকে থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়।
মুক্তিপণ আদায়ের জন্যই ওই দুই শিশুকে অপহরণ করা হয়েছিল বলে ধারণা এলাকাবাসীর। কিন্তু পুলিশের তৎপরতার কারণে শিশুদের হত্যা করে অপহরণকারীরা। এই ঘটনায় ওই বাড়ির মালিক ইয়াসিন আলীসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় ওই এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ঘাতকদের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ করেছে এলাকাবাসী।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নামোশংকরবাটী ভবানীপুর মহল্লার প্রবাসী মিলন রানার মেয়ে স্থানীয় ছোটমনি বিদ্যা নিকেতনের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী সুমাইয়া খাতুন মেঘলা ও প্রতিবেশী আবদুল মালেকের মেয়ে একই স্কুলের নার্সারির ছাত্রী মেহজাবিন আক্তার মালিহা রোববার সকাল ১০টার পর বাড়ির বাইরে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। এরপর থেকে তাদের কোনো সন্ধান মেলে নি।  সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজাখুজির পর রোববার বিকেলে দুই শিশুর নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয়। তখন থেকেই নিখোঁজ ওই দুই শিশুকে উদ্ধারে মাঠে নামে পুলিশের একাধিক টিম। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে তেলীপাড়া মহল্লার জনৈক শম্ভুর মেয়ে গীতা রানী (১৮) নামের এক তরুণীকে আটক করে পুলিশ। তার দেয়া তথ্যর ভিত্তিতে জেলা শহরের বেশ কয়েকটি স্থানে অভিযান চালানো হয়। নিখোঁজ দুই শিশুকে উদ্ধারে পুলিশের পক্ষ থেকে পুরুস্কারও ঘোষণা করা হয়। এছাড়া নিখোঁজ দুই শিশুর প্রয়োজনীয় সব তথ্য ও ছবি পাঠানো হয় দেশের সবকটি পুলিশ স্টেশনে। সীমান্ত পেরিয়ে কেউ যাতে ভারতে পাচার করতে না পারে, সেজন্য বিজিবির সহায়তাও নেয় পুলিশ। কিন্তু এতোকিছুর পরও তাদের সন্ধান মিলছিলো না।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার দুপুর থেকে স্থানীয় এলাকাবাসী ওই এলাকার সন্দেহভাজন প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে তল্লাশি শুরু করে। এক পর্যায়ে সন্ধ্যায় একই গ্রামের ভ্যানচালক ইয়াসিন আলীর বাড়ি থেকে মেঘলা ও মালিহার বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে স্থানীয় এলাকাবাসী। মুহূর্তের মধ্যে খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকার কয়েকশ নারী-পুরুষ সেখানে ছুটে আসেন। খবর পেয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার টিএম মোজাহিদুল ইসলামসহ পুলিশের ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তারাও ঘটনাস্থলে যান। এসময় বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন এলাকার সাধারণ মানুষ। ঘাতকদের ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে তারা। পরে সদর থানা পুলিশ রাত ৭টার দিকে নিহত দুই শিশুর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম জানান, এই ঘটনায় বাড়ির মালিক ইয়াসিন আলী, তার স্ত্রী তানজিলা বেগম ও ছেলের বউ লাকি খাতুনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে হত্যার মোটিভ সম্পর্কে তিনি নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেন নি।
এদিকে নিহত দুই শিশুর পরিবারে চলছে শোকের মাতম। ফুটফুটে দুই শিশুকে হারিয়ে শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছেন এলাকার অধিবাসীরা। মেঘলা ও মালিহার স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে সেখানকার পরিবেশ। মেঘলার মা কুলসুম বেগম মেয়ের শোকে কয়েকবার অচেতন হয়ে পড়েন। তাদের শান্তনা দিতে গিয়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেন নি উপস্থিত অনেকেই।
এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার টিএম মোজাহিদুল ইসলাম জানান, স্থানীয় এলাকাবাসির তথ্যের ভিত্তিতে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে কি কারণে ও কিভাবে তাদের হত্যা করা হয়েছে তা তাৎক্ষণিকভাবে তিনি জানাতে পারেন নি। তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে দ্রুত এই ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা হবে। এছাড়া লোমহর্ষক এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার ঘোষণা দেন তিনি।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ