বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৮ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে প্রতিরোধ করতে হবে
এখন শীতের সময় গাছ থেকে খেজুর রস সংগ্রহ করছে গাছিরা। দেশে সাধারণত খোলা হাড়ি বা পাত্রে খেজুরের রস সংগ্রহ করে থাকেন গাছিরা। সেই রস যদি বাদুড় খায় বা তার সংস্পর্শে আসে তাহলে রসে ভাইরাস মিশ্রিত হতে পারে। সেই রস পান করলে মানবদেহে ছড়ায় নিপাহ ভাইরাস। গ্রেটার ইন্ডিয়ান ফ্রুট ব্যাট প্রজাতির মাধ্যমে এ রোগ বেশি ছড়ায়। নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণের হুমকিকে উপেক্ষা করা চলে না। এই ভাইরাসের সংক্রমণ সম্পর্কে আমাদের সতর্ক থাকা জরুরি। জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে একে প্রতিরোধ করা যেতে পারে। মানুষ যেন খেজুরের কাঁচা রস খাওয়া থেকে বিরত থাকেন। সেই লক্ষ্যে প্রচারণা চালাতে হবে।
জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য প্রচলিত মাধ্যমের পাশাপাশি ডিজিটাল মাধ্যমের সহায়তা নেয়া যেতে পারে। শীতকালকে খেজুরের রসের মৌসুম বলে গণ্য করা হয়। সেই কারণে শীত মৌসুবে বেশি প্রচার চালাতে হবে। দেশের যেসব এলাকায় খেজুরের রস উৎপাদন হয় সেসব এলাকার মানুষকে এ বিষয়ে সজাগ করা জরুরি। গত রোববার সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) আয়োজিত এক সভায় নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে চলতি বছর মারা গেছে ১০ জন। তথ্য অনুযায়ী, দেশে চলতি বছর নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ১৪ জন। সেই হিসাবে নিপাহ ভাইরাসে মৃত্যুর হার ৭১ শতাংশ। এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
নিপাহ ভাইরাসজনিত রোগে দশজনের মৃত্যুর সংখ্যাকে আপাতদৃষ্টিতে কম মনে হতে পারে। তবে উদ্বেগজনক বিষয় হচ্ছে এ ভাইরাসে আক্রান্তদের ৭১ শতাংশই মারা গেছে। মৃত্যুর হার বেশি হওয়ার কারণ হচ্ছে, এখন পর্যন্ত নিপাহ ভাইরাসের কোনো টিকা আবিষ্কার হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসাও নেই। চিকিৎসকদের মতে, নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর ভাগ্যক্রমে কেউ বেঁচে গেলেও তাদের জন্য এক ভয়াবহ সময় অপেক্ষা করে। আক্রান্ত ব্যক্তি যদিওবা সুস্থ হন পরবর্তীতে তিনি গুরুতর স্নায়বিক জটিলতায় ভুগতে পারেন। রোগাক্রান্তরা স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলতে পারেন, এমনকি পঙ্গুও হয়ে যেতে পারেন চিরতরে। যদি কোনো গর্ভবতী নারী গর্ভাবস্থার শেষদিকে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হন তবে তা জটিল আকার ধারণ করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বৈশ্বিক মহামারির সম্ভাব্য ১০টি হুমকির একটি হিসেবে ঘোষণা করেছে নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণকে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিপাহ ভাইরাস সাধারণত বাদুড় থেকে প্রথমে মানুষে ছড়ায়। এরপর আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে সুস্থ ব্যক্তিও আক্রান্ত হতে পারে। তাই আমাদের জনসচেতনা বাড়াতে হবে। যাতে করে এই ভাইরাসে আক্রান্তে হয়ে কেউ যাতে মারা না যান। এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।