রবিবার, ২২ জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৮ আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ।
আব্দুর রউফ রিপন, নওগাঁ প্রতিনিধি: দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শূন্যপদে পাঁচজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের পাঁয়তারা করেছিলেন স্কুলের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগের প্রেক্ষিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। শেষ হয়ে যায় নিয়োগ প্রক্রিয়ার মেয়াদ। এতে মুখ থুবড়ে পড়ে ওই সকল চাকরি প্রত্যাশীর স্বপ্ন। ঘটনাটি নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার সাগরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে।
অভিযোগ টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেয়ার পাঁয়তারা করেছিলেন বিদ্যলয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও মিঠাপুর ইউপিড চেয়ারম্যান ফিরোজ হোসেন। প্রধান শিক্ষক এনামুল হকের বিরুদ্ধেও আছে টাকা নেয়ার অভিযোগ। তারা নিয়োগ পরীক্ষার আগেই প্রায় ৭০ লাখ টাকা এবং স্কুলের নামে ১০ শতক জমি লিখে নিয়েছেন বলে অভিযোগ।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সাগরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে শূন্যপদে একজন করে নিরাপত্তাকর্মী, আয়া, নৈশ্যপ্রহরী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও অফিস সহায়ক পদে নিয়োগের জন্য গত বছর পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। সে মোতাবেক পাঁচটি পদের নিয়োগ গত ৩১ ডিসেম্বর চূড়ান্ত পর্যায়ে ছিল। কিন্তু অভিযোগ ওঠে ওই নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ার আগেই বিদ্যালয়ের সভাপতি এবং প্রধান শিক্ষক যোগসাজস করে চাকরি প্রার্থীদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার চেষ্টা করছিলেন।
বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং যেকোনো সময় আইন শৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে বলে আশংকা প্রকাশ করা হয়। এঘটনায় বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সদস্য সঞ্জয় সরকার, খয়বুল ও মাহবুব মোরশেদ গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত চেয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন। এবং অনুলিপি বিভিন্ন দপ্তরে দেওয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে সেই নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত করেন কর্তৃপক্ষ। এরফলে যেসকল চাকরি প্রত্যাশীরা নিয়োগ পাওয়ার আশায় টাকা দিয়েছেন, তারা রয়েছেন বিপদে। তবে এখনও চাকরি পাওয়ার আশায় তারা মুখ খুলতে রাজি না।
ম্যানেজিং কমিটির এক সদস্য অভিযোগ করেন, গোপনে আগে থেকে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক চতুর্থ শ্রেণির পাঁচটি পদে সাতজন চাকরি প্রত্যাশীর কাছ থেকে প্রায় ৭০ লাখ টাকা নিয়েছেন। এছাড়া আয়া পদের জন্য এক চাকরি প্রত্যাশীর কাছ থেকে স্কুলের নামে ১০ শতক জমি লিখে নিয়েছে, পাশাপাশি নগদ টাকাও নিয়েছে।
নিরাপত্তাকর্মী পদে নিয়োগের জন্য একজনের কাছ থেকে প্রধান শিক্ষক ১২ লাখ টাকা নিয়েছে এবং একই পদে নিয়োগের জন্য সভাপতি একজনের কাছ থেকে ১২ লাখ ও আরেকজনের কাছ থেকে ১৪ লাখ টাকা নিয়েছে। আয়া পদের জন্য আরেকজনের কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা, নৈশ্য প্রহরী পদে সাড়ে ৯ লাখ টাকা, পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদের জন্য সাড়ে ৯ লাখ টাকা এবং এক চাকরি প্রত্যাশীর বাবা ওই স্কুলে চাকরি করার সুবাদে তার কাছ থেকে অফিস সহায়ক পদের জন্য ৭ লাখ টাকা নেয়া হয়েছে।
অভিযোগকারীদের দাবি, সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়াসহ স্বচ্ছতার মধ্য দিয়ে যোগ্যতার ভিত্তিতে জনবল নিয়োগ করবেন।
এদিকে একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, সাগরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের নিজস্ব কোনো জমি বা খেলার মাঠ নেই, আমরা স্থানীয়রা চেয়েছিলাম কেউ যদি স্কুলের নামে জমি লিখে দেয়, তাহলে তাকে যেন চাকরি দেয়া হয়। একজন ১৫ শতক জমি দিতেও চেয়েছিল, কিন্তু ফিরোজ চেয়ারম্যান সেটা শোনেননি। যদিও এক চাকরি প্রত্যাশী ১০ শতক জমি লিখে দিয়েছেন স্কুলের নামে। তাই ওই ১৫ শতক পেলে স্কুলের সম্পদ আরও বেড়ে যেতো। খেলার মাঠ হতো। এছাড়া যারা টাকা দিয়েছেন তাদের মধ্যে কেউ কেউ নিয়োগ না পেয়েও স্কুলে কাজ করছে বলে জানান তারা।
টাকা নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে স্কুলের প্রধান শিক্ষক এনামুল হক মুঠোফোনে বলেন, কে কি নিলো, ওই সম্পর্কে বলার নেই।
টাকা নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে স্কুলের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান ফিরোজ হোসেন মুঠোফোনে বলেন, আপনাকে কি বলা লাগবে, কি শুনলে খুশি হবেন? আপনার কাছে কি কেউ অভিযোগ করেছে? আপনি টাকা নিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন, এতো গল্প নেই, আপনার কাছে কেউ অভিযোগ দিয়ে থাকলে তাকে নিয়ে আসেন, তাছাড়া মোবাইল নিয়ে নওগাঁ বসে থাকেন মিয়া। টাকা নিয়েছেন কিনা আবারও জিজ্ঞেস করলে, তিনি উত্তেজিত স্বরে জানতে চান কে অভিযোগ করেছে? যদি কেউ অভিযোগ করে, তাহলে তাকে নিয়ে আসেন বলে সংযোগ কেটে দেন তিনি।
বদলগাছী মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শফিউল আলম মুঠোফোনে বলেন, এধরনের ঘটনা ঘটে থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে অবশ্যই বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।