নির্ধারিত দামে মিলছে না গ্যাস সিলিন্ডার

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৪, ১১:৪০ অপরাহ্ণ


নিজস্ব প্রতিবেদক:রাজশাহীসহ সারাদেশে বেড়েছে সবধরনের এলপিজি গ্যাসের দাম। সরকার গ্যাস সিলিন্ডারের দামও নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু রাজশাহীতে এ দামে সিলিন্ডার পাওয়া যাচ্ছে না। নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করছেন বিক্রেতা।

জানা গেছে, নির্ধারিত দামে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) এ মাসের জন্য গ্যাসের দাম নির্ধারণ করেছে। এ মাসে প্রতি ১২ কেজি সিলিন্ডারে দাম বেড়েছে ৪১ টাকা। যা দাম হয়েছে ১ এক ৪৭৪ টাকা। রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে এ দাম কার্যকর করা হয়। কিন্তু এই দাম নির্ধারণের আগে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রেখেছিল বিক্রেতা। আবার অনেকের কাছে সিলিন্ডার থাকলেও বেশি দামেই বিক্রি করছিলেন।

খুচরা বিক্রেতা ও পরিবেশকদের ভাষ্য, গেল বৃহস্পতিবার থেকে রাজশাহীতে কোম্পানীগুলো গ্যাস সরবরাহ করা বন্ধ রেখেছিল। এ কারণে গ্যাসের সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু যাদের কাছে গ্যাস সিলিন্ডার ছিল তারা বাসা-বাড়িতে সরবরাহ করেছে। আবার কেউ কেউ অজুহাত দেখিয়ে বেশি দামে সিলিন্ডার বিক্রি করেছে। রোববার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে দাম নির্ধারণের আগে নগরীর একটি দোকানে গ্যাসের দাম চাইতে তারা বলেন, ৫০ টাকা বাড়িয়ে বলেন। এখনও তো দাম নির্ধারণ হয়নি তাহলে এত বেশি কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, গ্যাস নাই। আর আমাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।

নগরীর নওদাপাড়া এলাকায় ফ্লিট বায়ে কল দেওয়া হলে তারা বলেন, গ্যাস সিলিন্ডার নেই। আর যে সিলিন্ডার আছে তা দেওয়ার মতো না। দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তারা জানান, পরিবেশকরা গ্যাস সরবরাহ করছেন না ঠিকমতো। কাল-পরশুর মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে। এরপর আমরা সিলিন্ডার পাবো।
বেশ কয়েকজন ক্রেতা জানান, শনিবার থেকে গ্যাস সিলিন্ডার অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছে। তারা আগের নির্ধারিত দামের চেয়ে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করেছে।

নগরীর বালিয়াপুকুর এলাকার চাকরিজীবী শামসুজ্জামান বলেন, এর আগের মাসে বসুন্ধরার সিলিন্ডার নিয়েছিলাম ১ এক হাজার ৫০০ টাকায়। শনিবার আবার গ্যাস নিতে চাইলে বলা হয় ১ হাজার ৬০০ টাকা লাগবে। বাধ্য হয়ে সিলিন্ডার নিতে হলো।

একই অভিযোগ ঘোড়ামারা এলাকার গৃহিনী ঋতু কর্মকারের। তিনি বলেন, গ্যাস না ছাড়া রান্না সম্ভব না তাই নেওয়া হয়। কিন্তু বিক্রেতারা ইচ্ছামতো দাম বাড়াচ্ছে। তাই বাধ্য হয়ে গ্যাস নিতে হচ্ছে।
সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কোম্পানিভেদে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রি হচ্ছে প্রতি সিলিন্ডার। এর মধ্যে বসুন্ধরার সিলিন্ডারের দাম ১৬৫০ টাকা, বেক্সিমকো ১৬৫০ টাকা, ওমেরা সিলিন্ডারের দাম ১৬০০ টাকা, যমুনা ১৬০০, লাফস ১৫৫০, পেট্রোম্যাক্স ১৫৫০ ও বিএম কোম্পানির সিলিন্ডার ১৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, ডিলার পয়েন্ট থেকে যে দামে সিলিন্ডার কিনতে হয়, তা সরকারি দামের চাইতে বেশি। ফলে তাদের পক্ষে ন্যায্য দামে বিক্রি করা সম্ভব হয়ে উঠছে না।
খুচরা বিক্রেতা শাহিনুর রহমান বলেন, কয়েকটা কোম্পানির এলপিজি সিলিন্ডার আমরা বিক্রি করে থাকি। সেসবের দামে কিছুটা পার্থক্য থাকে। কিন্তু সরকারি মূল্যে কেউ বিক্রি করে না। তাই আমাদেরও ন্যায্য দামে সিলিন্ডার বিক্রি করা সম্ভব হয় না।

আরেক ব্যবসায়ী পারভেজ আহমেদ বলেন, ক্রেতারা আমাদের জিজ্ঞেস করে যে দাম এত বেশি কেন? কিন্তু এখানে আমাদের তো কিছু করার নেই। আমরাও যখন ডিলার বা পাইকারদের জিজ্ঞেস করি যে সরকারি রেটে কেন দিচ্ছেন না, তখন তাদের ভাষ্য- নিলে নেন, না নিলে ভাগেন। এরপর আমাদের আর কিছু বলার থাকে না।

জানা গেছে, ভোক্তা পর্যায়ে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম ১২ কেজিতে এবার ৪১ টাকা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। আগের মাসে ১২ কেজিতে দাম ২৯ টাকা বেড়েছিল। রোববার বিইআরসি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এলপিজির নতুন দাম জানানো হয়। বিইআরসির সদস্য ইয়ামিন চৌধুরী নতুন দাম ঘোষণা করেন। ঘোষিত নতুন রোববার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে কার্যকর হয়। ফেব্রুয়ারি মাসের জন্য প্রতি ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৪৭৪ টাকা। জানুয়ারিতে দাম ছিল ১ হাজার ৪৩৩ টাকা। এলপিজির ১২ কেজি সিলিন্ডার সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় গৃহস্থালির কাজে।

গৌরহাঙ্গা এলাকার ওমেরা গ্যাসের পরিবেশক মেসার্স আনন্দ কুমার সাহার সত্বাধিকারী আনন্দ কুমার সাগা বলেন, প্রতিমাসে গ্যাসের দাম বাড়ে। সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে ১২ কেজি গ্যাস সিলিন্ডারের। আমাদের এগুলো ট্রাক পাঠিয়ে ঢাকা থেকে নিয়ে আসতে হয়। নিয়ে আসার খরচও আছে। আর কোম্পানী যে কমিশন দেয় শুধু ঢাকা সিটির জন্য পোষাবে। কিন্তু আমাদের খরচ আরও বেশি। অল্প লাভে আমরা খুচরা বিক্রেতাদের কাছে সিলিন্ডার দেয়। তারা আবার বেশি দামে বিক্রি করে।

কাদিরগঞ্জ এলাকায় যমুনা ও লাফস কোম্পানির গ্যাসের পরিবেশক মেসার্স হালিমা এজেন্সির ব্যবস্থাপক আবদুর রহিম বলেন, তাদের প্রতি মাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার গ্যাসের সিলিন্ডারের চাহিদা রয়েছে। দুই দিন পরপর একটি করে গাড়ি পাঠাতে হয় গ্যাসের চাহিদা মেটাতে। একটি ট্রাকে ৬১৬ টি সিলিন্ডার আসে। আমাদের প্রতি গ্যাস সিলিন্ডারে ৫ টাকা কমিশন পাওয়া যায়। এরপর আমরা খুচরা বিক্রেতাদের কাছে পাঠাই।

উল্লেখ্য, বিইআরসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে বিশ্ববাজারে এলপিজির দাম কিছুটা বেড়েছে। এ কারণে দেশের বাজারেও দাম বেড়েছে। ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে বিইআরসি এলপিজির দাম নির্ধারণ করে আসছে। আমদানিকারক কোম্পানির ইনভয়েস মূল্য থেকে গড় করে পুরো মাসের জন্য ডলারের দাম হিসাব করে বিইআরসি।

এলপিজি তৈরির মূল উপাদান প্রোপেন ও বিউটেন বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। প্রতি মাসে এলপিজির এই দুই উপাদানের মূল্য প্রকাশ করে সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠান আরামকো। এটি সৌদি কার্গো মূল্য (সিপি) নামে পরিচিত। এই সৌদি সিপিকে ভিত্তিমূল্য ধরে দেশে এলপিজির দাম সমন্বয় করে বিইআরসি।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ