নির্বাচনের পরদিন খুলবে রাবি, ক্যাম্পাসে ফেরা নিয়ে দুশ্চিন্তা শিক্ষার্থীদের

আপডেট: জানুয়ারি ৬, ২০২৪, ১:১০ অপরাহ্ণ


রাবি প্রতিনিধি :


রোববার (৭ জানুয়ারি) সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আগে থেকেই এই নির্বাচনকে বর্জনের ঘোষণা দিয়ে আন্দোলন করছে বিএনপি-জামায়াত সহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। নির্বাচন রুখতে শনি ও রোববার হরতালের ডাক দেয়া হয়েছে। শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) রাত থেকেই রাজধানীতে ট্রেনে অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন স্থানে ভোটকেন্দ্রে ককটেল বিস্ফোরণ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।

রাজধানীর গোপীবাগে ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় চার জন পুড়ে মারা গিয়েছে এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।
এদিকে নির্বাচনের পরদিন সোমবার (৮ জানুয়ারি) থেকেই চালু হবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ক্লাস-পরীক্ষা। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে ক্যাম্পাসে ফেরা নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন দূরবর্তী জেলার শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে শিক্ষার্থীদের নিরাপদে ক্যাম্পাসে পৌঁছানোর দায়িত্ব নেয়া উচিত অথবা, বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করছেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে খোলা ফেসবুক গ্রুপ ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার’-এ অনেককেই এই দুই দাবির পক্ষে পোস্ট করতে দেখা গেছে।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছেন, ছুটি বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা তাদের নাই। আগে থেকেই সবকিছু নেগেটিভ ধরে নেয়া কাক্সিক্ষত না। তারা চান, সকলের সহযোগিতায় সুষ্ঠুভাবে দেশটি চলুক। সরকার জনগণের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করছে এবং করবে।

রাবি পরিবার গ্রুপে বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের শিক্ষার্থী ওমর শরিফ লিখেছেন, ‘…রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে বলে আমার মনে হয় না। শীতকালীন ছুটি শেষে নির্বাচনের পরের দিন (৮ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত এখনো পর্যন্ত পুনর্বিবেচনা না করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষার্থীকে চরম দুশ্চিন্তা এবং আতঙ্কের মধ্যে ফেলে রেখেছেন তারা। নির্বাচনকালীন দেশের যে পরিস্থিতি, এমতাবস্থায় কোন অভিভাবক তার সন্তানকে ভ্রমণ করতে দিতে ইচ্ছুক না।…’

ওমর শরিফের পোস্টের সঙ্গ একমত পোষণ করে একই বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী সুমি পারভিন লিখেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি সাধারণ ছাত্রদের কথা না ভাবে, তাহলে সেটা কেমন বিশ্ববিদ্যালয়! যারা দূর থেকে আসবে, তাদের নিরাপত্তার কথাও একবার ভাবা দরকার। এই পরিস্থিতিতে কোনো বাবা-মা বা, পরিবারই তাদের ছেলে-মেয়েকে ভার্সিটিতে ফিরতে দিতে চাইবেন না। আর এরই মাঝে ক্লাস ছাড়াও পরীক্ষা, ভাইভা, টিউটোরিয়াল রাখছে বিভিন্ন বিভাগ। শিক্ষার্থীদের চিন্তায় আর নিরাপত্তাহীনতায় না রাখলে এদের বোধহয় ভালো লাগে না!’

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী তারেক সরকার লিখেছেন, ‘১১ তারিখের ট্রেনের টিকেট কেটেছি। বুঝতে পারছি না ক্যাম্পাসে যাবো কিনা?’
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী মোকাররম হোসাইন আরেক পোস্টে লিখেছেন, ‘রাবির শিক্ষার্থীরা হতাশায় সময় পার করতেছে। আমরা সবাই মোটামুটি ধরেই নেই, ট্রেন জার্নি নিরাপদ। কিন্তু সেই ট্রেনে জ্বালাও পোড়াও হচ্ছে। এদিকে রাবি প্রশাসন ৮ তারিখ ক্লাস শুরুতে অটল আছে। শিক্ষার্থীরা কিভাবে ক্যাম্পাসে পৌছাবে? জীবনের জন্য সবকিছু, শিক্ষার জন্য জীবন না। রাবি প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি,

হয় শিক্ষার্থীদের নিরাপদে ক্যাম্পাসে পৌঁছানোর দায়িত্ব নেয়া হোক, না হয় বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যবস্থা করা হোক।’
তবে, ছুটি বাড়ানোর বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম ইসলাম বলেন, ‘এধরনের (ছুটি বাড়ানোর) কোনো পরিকল্পনা নাই। কারণ আগে থেকেই যদি সবকিছু আমরা নেগেটিভ ধরেই নিই, এটি আসলে কাক্সিক্ষত না আমাদের কারোর জন্যই। আমরা চাই যে, আমাদের সকলের সহযোগিতায় সুষ্ঠুভাবে দেশটি চলুক।

জাতীয় প্রশ্নে যেন আমাদের কোনো বিভেদ না থাকে। মতপার্থক্য থাকতেই পারে, কিন্তু জাতীয় স্বার্থ যেখানে জড়িত, সেখানে মনে হয় এধরনের (ছুটি বাড়ানোর) কোনো প্রত্যাশা করা, কাউকে সহযোগিতা করা কিংবা এধরনের চিন্তাভাবনা করা সমীচীন বলে আমি মনে করি না।’

শিক্ষার্থীরা নিরাপদে ক্যাম্পাসে পৌঁছাতে পারবে বলে মনে করেন কিনা এবং পারলে এটা কিভাবে সম্ভব হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দেশে সরকার আছে না? এখানে কারো ব্যক্তিগত মতামততো আসে না, যেখানে রাষ্ট্রীয় বিষয়। সরকারতো জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। আমরা আগেই এতো কিছু ভেবে নিবো, তার মানে কি কেউ ডিকটেট করছে যে, এই জিনিসগুলো হবেই? সেজন্য যেটি হবে, সেটি নিয়ে এতো কথা না বলায় মনে হয় ভালো। কারণ এটারতো কোনো নিশ্চয়তা নেই। আশঙ্কা মানুষের থাকে এবং সেটা নিশ্চয় সরকারের মাথায় আছে। সরকার জনগণের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করছে এবং করবে। আমরা সকলেই সহযোগিতা করলে, কেউ পরিস্থিতি অতোটা খারাপ অবস্থায় নিতে পারবে না।’

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ