সোনার দেশ ডেস্ক:
পুলিশ বাহিনীর গায়ে গত ১৬ বছরের যে কালিমা মাখা আছে তা রাতারাতি পাল্টানো সম্ভব নয় মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস এ বাহিনীর সদস্যদের সম্পূর্ণ নতুন ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন।
সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে নিজের কার্যালয়ে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে এ আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, সরকার চায় পুলিশ বাহিনী একটি নতুন ভাবমূর্তি তৈরি করুক, যাতে দেশের ও দুনিয়ার সবাই দেখে, এটি শুধু পুলিশ বাহিনী না, নতুন বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী।
“এই চরিত্রটা জরুরি, দেখলে মনে হয় যেন এই পুলিশটা নতুন বাংলাদেশের পুলিশ। তোমার কাজে কর্মে তখন মানুষ অতীত ভুলে যাবে, মাফ করে দেবে।’’
বাংলাদেশের যত টিম আছে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ টিম হল পুলিশ, এমন মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘’ব্যবসা-বাণিজ্য অন্যান্য বহু রকমের জিনিস কিন্তু গোড়া ঠিক করে দিতে হয় পুলিশকে। কাজ করার পরিবেশ এই পরিবেশটা তোমাদেরকে সৃষ্টি করতে হবে।
‘’আমাদের শপথ নিতে হবে, সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে মানুষকে আমরা বাধা দেব না, তার পথকে আমরা সহজই করব, তার পাশে থাকব।’’
পুলিশকে আইন না ভাঙারও পরামর্শ দেন তিনি।
নির্বাচন প্রসঙ্গও উঠে আসে সরকারপ্রধানের বক্তব্যে। তিনি বলেন, ‘’এই সরকার অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, হাতে খুব বেশি সময় নাই, আমরা অলরেডি সাত মাস পার করে এসেছি। আমরা বলছি ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে। কাজেই এর মধ্যে যা আমরা করতে চাই, যা আমাদের সামর্থ্য আছে, এগুলো করে ফেলা।’’
এসময়ের মধ্যে যত সংস্কার দরকার তা করে ফেলার কথাও বলেন তিনি।
নির্বাচন আসছে, নানা রকম চাপ আসার আশঙ্কার কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা আইনের মধ্যে থেকে কাজ করার পরামর্শ দেন পুলিশ কর্মকর্তাদের। বলেন, ‘’আইনের ভেতরে থাকতে হবে, যাতে করে যে সরকার নির্বাচিত হয়ে আসবে, সে সরকার আইনের সরকার যেন হয়।’’
যেই হোক, সে ছাত্রদের দল হোক, পুরানা দল হোক, নতুন দল হোক, সবার ক্ষেত্রেই আইনের ভেতর থেকে দায়িত্ব পালনের কথা বলেন তিনি।
এসময় পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের নিজেদের সৃজনশীলতা দেখিয়ে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা।
নারী ও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘’নারীদের সুরক্ষা দেওয়া, এটা একটা মস্ত বড় কাজ। আমাদের অবহেলার কারণেই এটা ক্রমেই সমাজের মধ্যে দ্রুত বিস্তার লাভ করেছে। আমাদের দেশের অর্ধেক মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। তাদের দিকে দৃষ্টি দেবার কেউ নাই।
”সংখ্যালঘু নিরাপত্তায় নাগরিক হিসেবে সংবিধান অনুসারে যত অধিকার দেওয়া আছে, সবগুলো নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব এবং সেই দায়িত্ব পুলিশের মারফতে আমাদের পালন করতে হয়।”
অপপ্রচার থেকে সতর্ক থাকতে আবারও আহ্বান জানিয়ে ইউনূস বলেন, ‘’অপপ্রচারের কোনো একটা সূত্রপাত হলে, তোমার এলাকা যদি হয়, সঙ্গে সঙ্গে এটা রিপোর্ট করা যে এখানে একটা অপপ্রচার চলছে, এটাকে শিগগির পরিষ্কার করে ধরতে হবে, লোকে যেন ভুল ধারণার মধ্যে না থাকে।’’
পুলিশের কাজে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোরও নির্দেশ দেন তিনি।
পাসপোর্টে পুলিশ ভেরিফিকেশন তুলে দেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘’পুলিশ ভেরিফিকেশন এত অভ্যস্ত হয়ে গেছি আমরা, পুলিশ ভেরিফিকেশন যেটা তুলে দেওয়া মাত্র চমকে উঠেছে, অথচ এটা কোনো দরকার নেই।
”রোহিঙ্গাদের ইউএনএইচসিআরের ডেটাবেজের মাধ্যমে ভেরিফিকেশনের সুযোগ আছে, বায়োমেট্রিক্স দিলে সঙ্গে সঙ্গে বলব যে, এটা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা, যেহেতু ওই দুইটা ডাটাবেজ কানেক্টেড হয়ে যাবে, এখন আমরা প্রক্রিয়া করছি, একত্র হয়ে যাবে, এটা দেওয়া মাত্রই সমস্ত তথ্য স্ক্রিনে ভেসে উঠবে ওখানে, সেখানে পাসপোর্ট অথরিটি ঠিক করবে যে তোমাকে আমরা দিতে পারলাম না।’’
স্টারলিংকের প্রসঙ্গও উঠে আসে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে। তিনি বলেন, ‘’স্টারলিংক আশা করি কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হয়ে যাবে, হয়ে গেলে দেখবেন যে এই যে ফার্স্ট ইন্টারনেট এল, খুব দ্রুত গতির ইন্টারনেট হয়ে গেল, বর্তমান যে ইন্টারনেট আছে তার তুলনায় এটা এত গতি, তাতে সমস্ত কিছু হাতের মধ্যে চলে আসবে মুহূর্তের মধ্যে।’’
তথ্যসূত্র: বিডিনিউজ