নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণের অপেক্ষা II কোন্ বিকল্পের তালাশে বিএনপি?

আপডেট: নভেম্বর ২১, ২০২৩, ১২:০৫ পূর্বাহ্ণ

বিএনপি ও সমমনা দলগুলো সরকারের পদত্যাগ এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে নির্বাচন দাবিতে অটল আছে। একই সাথে বিএনপি সমমনাদের নিয়ে একের পর এক হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। তবে এই আন্দোলনে তেমন সাফল্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। বরং ক্রমশই বিএনপি আন্দোলনের মাঠে দুর্বল হয়ে পড়েছে। আন্দোলনে চোরাগোপ্তা কিছু সহিংসতা চালাচ্ছে দুর্র্বত্তরা যার দায় পুরোটিই বিএনপিকে নিতে হচ্ছে। এর ফলে সাধারণের মধ্যে দলটি সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণাই প্রতিফলিত হচ্ছে। এই আন্দোলন করে শেষ বিবেচনায় বড় ধরনের পরিবর্তন অর্থাৎ নির্বাচন ঠেকানো যাবে তেমনটি মনে হচ্ছে না। বরং দলটির সামনে নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প আছে বলেও মনে হয় না। শেষে ‘আমছালা দুইই হাতছাড়া হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এর ফলে বিএনপি খুব বেশি করে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। বরং যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপিয় ইউনিয়নভুক্ত কতিপয় দেশ বাংলাদেশের নির্বাচন পরিস্থিতি বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তাতে করে ক্ষমতাসীন দল ইচ্ছে না করলেও নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্নে তাদেরকে অবিতর্কিত একটা নির্বাচন করতেই হবে। সে ক্ষেত্রে বিএনপি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে সেটা হবে দলটির জন্য অধিক নিরাপদ ও গুরুত্বপূর্ণ।

অতীতের রাজনৈতিক ভাব-বৈশিষ্ট্য যা-ই থাকুক না কেন, এবারের নির্বাচনে সেই ছকে ফেলে বিবেচনা করা ভুল হবে। কেননা ইতোমধ্যেই বিএনপির অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি খুবই অস্থির এবং বিক্ষুব্ধ অবস্থায়। সংবাদ মাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী দলগতভাবে নির্বাচন না করার ঘোষণা দিলেও বিএনপির অনেক নেতা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিবেন। বিভিন্ন জেলা থেকে প্রাপ্ত খবর বিশ্লেষণ করে সংবাদ মাধ্যমটি জানায়, অন্তত ১৭৫ টি আসনে বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান। তারা নিজ যোগ্যতা ও অবস্থান থেকে নির্বাচনে প্রার্থী হবেন। এছাড়াও বিএনপির আরো অন্তত ১০০ নেতা তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দিয়ে মনোনয়ন পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন।

অন্যদিকে বিদেশি দূতাবাসগুলো এখনো হাল ছাড়েনি। তারা বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা করছে। সংবাদ মাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী ইতোমধ্যেই বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে তারা কথা বলেছে। আন্দোলনের কর্মসূচি বন্ধ করে নির্বাচনে যেন বিএনপি আসে সে জন্য বিএনপির সঙ্গে নিরবিচ্ছিন্নভাবে যোগাযোগ করছে অন্তত তিনটি দেশের কূটনীতিক। তারা বিএনপিকে বোঝাতে চাইছে যে, বিএনপি যদি নির্বাচনে না আসে এবং সহিংস আন্দোলনের পথ বেছে নেয়, তাহলে সেটি বিএনপির জন্য কোনো ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে না। কিন্তু বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা আমলে নিচ্ছে না। বরং জেদের বশীভুত হয়ে দলটিকে পরিচলিত করছে। এই পরিস্থিতিতে বিএনপির অনেক নেতাই দলটির নেতৃত্বকে সমালোচনা করছেন। দল থেকে সদ্য বহিস্কৃত বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য খন্দকার আহসান হাবিব তারেক জিয়ার সমালোচনা করে বলেছেন. দলটি তার একক কর্তৃত্বে চলে। বিএনপি গঠনতন্ত্র মেনে চলে না।

বিএনপিতে অসন্তোষ খুব সামনে এসেছে। বহিস্কার ও কারণ দর্শানোর মত ঘটনা তারই সাক্ষ্য দিচ্ছে। দলটির সাংগঠনিক অবস্থা অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে আশংকাজনকভাবে নড়বড়ে হয়ে উঠেছে- তা দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব বুঝতে দেরি করলে অপূরণীয় ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। বরং দলকে নির্বাচনি মাঠে এনে কর্মি-সমর্থকদের সংগঠিত ও চাঙ্গা করার মধ্যে প্রাপ্তির পাল্লায় ভারি হবে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ