মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
নির্বাচন কমিশন স্বাধীন হলেই যে, সমস্যার সমাধান হবে ব্যাপারটি তেমন নয়- এর জন্য যে ব্যক্তিরা কমিশন চালাবেন তাদের স্বাধীন পরিচালন ক্ষমতাও গুরুত্বপূর্ণ। ব্যক্তি কমিশনার স্বাধীনভওবে সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হলে নির্বাচন কমিশনকে যতই শক্তিশালী করা হোক না কেন তা কাজ করবে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন বর্তমানে নির্বাচন কমিশন যে ক্ষমতা রাখে তার প্রয়োগ কমিশনের দায়িত্বে যারা থাকেন তারা তা পারেন না। এটা একটি মানসিক ব্যাপার বটে।
সংবিধানের আলোকে নির্বাচন কমিশন আইনের প্রণয়নের বিষয়টি বিশেষজ্ঞ মহলে অনুভুত হলেও রাজনৈতিক দলগুলো এ ব্যাপারে মোটেও আগ্রহ দেখায়নি। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ যা রাজনৈতিক দলগুলোরই লক্ষ্য হওয়া উচিৎ ছিল। শুধু তাই নয়- সাংবিধানিক অপরাপর প্রতিষ্ঠানগুলোকেও শক্তিশালী করার কোনো উদ্যোগ রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে নেয়া হয়নি। অথচ সব রাজনৈতিক দলই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার কথা বলছে।
বাংলাদেশের সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে সুনির্দিষ্টভাবে আইনের কথা বলা আছে যে, নির্বাচন কমিশন গঠনে আইনের বিধান সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনারদের নিয়োগ করবেন। জানা যায়, সংবিধানের আলোকে আগের কমিশন আইনের একটি খসড়া সরকারের কাছে দিলেও সরকার সেটি আমলে নেয়নি।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, একটা গণতান্ত্রিক সরকার দেশে পাঁচ বছর শাসন করতে পারবে, অথচ স্বাধীনভাবে, নিরপেক্ষভাবে কোনো নির্বাচন দিতে পারবে না, এটা রাজনীতিবিদদের জন্য দেউলিয়াপনা। শনিবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
এখানে শুধু রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বপনাই নয়- রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরস্পর আস্থা ও বিশ্বাসের ভঙ্গুর অবস্থাও কম দায়ী নয়। এই আস্থার সঙ্কটের ঐতিহাসিক কারণও রয়ে গেছে। এই কারণগুলিই একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে বড় ধরনের অন্তরায় সৃষ্টি করে আছে। কারো কাছে এসব কারণ মূল্যহীন হলে হতেও পারে কিন্তু রাজনীতিতে অতি নির্মমভাবে উদ্ভুত কারণগুলোর সমাধান ছাড়া একটি সুষ্ঠু রাজনৈতিক ধারা সৃষ্টি করা যাবে বলে মনে হয় না। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বাংলাদেশ এখনো স্বাধীনতা ও স্বাধীনতার বিরোধী পক্ষ বিদ্যমান। পঁচাত্তরের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে যে দুর্বৃত্তায়ন সৃষ্টি হয়েছে সেটাও একটি পশ্চাদপদ রাজনীতির ধারাকে সামনে নিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ করে অর্জিত দেশকে ‘মিনি পাকিস্তানে’ রূপ দোর দীর্ঘ সময় ধরে প্রচেষ্টা চলেছে। প্রতিক্রিয়াশীল ওই গোষ্ঠি বা রাজনৈতিক দলগুলো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তিকে একেবারে নির্মূল করার প্রচেষ্টা চালিয়েছে। তারা দেশকে অস্থিতিশীল করতে জঙ্গি ও সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান ঘটিয়েছে। ওই শক্তি গণতান্ত্রিক ছদ্মাবরণে আগেও ছিল এখনোও আছে। এই পরিস্থিতি নির্বাচন কমিশন আইনের বিষয়টি এখনই সময়োপযোগী কি না তা নিয়ে প্রশ্ন থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ হিসেবে টিকে থাকতে হলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার দাবির সাথে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের কারণগুলোর অনুসন্ধান করাও অগ্রাধিকার গুরুত্বপূর্ণ।