সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৪ ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ ।
রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার এখনই সময়
শুধু জাতীয় নির্বাচন আসন্ন হলেই সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের প্রসঙ্গকথা খুব জোরেসোরে উচ্চারিত হয়। আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের দাবিতে তিব্র আন্দোলন গড়ে ওঠে। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় নাশকতা, হত্যা-সন্ত্রাস ও সহিংসতার ঘটনা এই তো সে দিনের ঘটনা। অর্থাৎ নির্বাচন ঘনিয়ে আসলেই নির্বাচন নিয়ে রাজনীতি অস্থির হয়ে ওঠে। কিন্তু নির্বাচন ব্যবস্থাকে একটি স্থায়ী ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে যে সব রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন হয়েছে তারাও ক্ষমতাকালীন নির্বাচন ব্যবস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদা দেয়নি। আবার সেই রাজনৈতিক দলই যখন ক্ষমতার বাইরে থাকে তখন তারা নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করতে নির্বাচন কমিশনকে শাক্তিশালী করার উদ্যোগ নেয়ার দাবি করে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল সেই প্রসঙ্গটিই আবার সামনে আনলেন। বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনের অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও সফলভাবে সম্পন্ন করায়’ ধন্যবাদ জ্ঞাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, ‘নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর জনগণের আস্থা অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক নেতৃত্বেরও প্রয়োজন হবে একটি পদ্ধতি অন্বেষণ করা।’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনের মত হলোÑউদ্বেগ ও সংকট থেকে জাতি ওঠে এসেছে। তবে এটা স্থায়ী সমাধান নয়। রাজনীতিবিদদের যদি আস্থা না থাকে, তাহলে নির্বাচন কমিশনের গ্রহণযোগ্যতা থাকে না। নির্বাচন নিয়ে প্রতি পাঁচ বছর পর পর যদি সংকট সৃষ্টি হয়, তাহলে দেশের উন্নয়নও বাধাগ্রস্ত হবে। নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক নেতৃত্বেরও প্রয়োজন হবে একটি পদ্ধতি অন্বেষণ করা।
নির্বাচন পদ্ধতিতে সংস্কার আনা সম্ভব হলে আগামীতে নির্বাচন আরো বেশি গ্রহণযোগ্য হবে বলে মনে করেন তিনি।
প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সময়ের এই সতোচ্চরণের সম্যক উপলব্ধি জাতীয় রাজনীতি ধারণ করবে কি? এটা একটি খুবই জটিল প্রত্যয় এই কারণে যে, নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীন ও শক্তিশালী করার বিষয়টি মুখে উচ্চারিত হলেও অন্তরভাগে এর স্বীকৃতি রাজনৈতিক দলের কাছে সমান নয়। সমস্যাটা সেখানেই। সে জন্যই বারবার নির্বাচন আসন্ন হলে নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ করার দাবিটি বারবার চলে আসছে। এরফলে যে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান দিনের সাথে পাল্লা দিয়ে দুর্বল হতেই আছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হলে অবশ্যই গণতন্ত্রের চর্চাটা সম্যকভাবে এগিয়ে নিতে হয়।
এর জন্য শুধু নির্বাচন কমিশন নয়Ñ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাধীন ও শক্তিশালী করতেই হবে। অথচ এগুলো বিষয় নিয়ে কোনো রাজনৈরতিক দলই সংলাপে বসার কথা বলে না, সিদ্ধান্ত নেয়ার উদ্যোগ নেয় না। এর ফলে বিভেদ- সংঘাতের সৃষ্টি হচ্ছে। জাতীয় রাজনীতিকে সর্বাগ্রে পাল্টাতে হবে। এর অন্যথা হতেই থাকলে সমাজে দুর্বৃত্তায়নই শক্তিশালী হবে, শেষ পর্যন্ত গণতন্ত্রই হেরে যাবে। এর জন্য রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার এখনই সময়।