নেই স্বাস্থ্যকর টয়লেট ও বিশুদ্ধ পানি একদল পরিশ্রমী নারী শ্রমিকের দৈনন্দিন জীবন সংগ্রামের গল্প

আপডেট: মার্চ ২৫, ২০২৫, ২:৪৬ অপরাহ্ণ


আখলাকুজ্জামান, গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি :


নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলাধীন বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কের পাশে সন্ধ্যার পর তৈরি হয় এক অস্থায়ী বসতি। দিনভর মাঠে রসুন তোলার পর ক্লান্ত নারী শ্রমিকরা এখানে জড়ো হন। রান্নার আয়োজন করে একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া সারেন এবং খোলা আকাশের নিচেই রাত কাটান তারা। উপজেলার কাছিকাটা ও হাঁসমারী এলাকায় এমন দৃশ্য চোখে পড়ে প্রতিদিন।

সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গেই মহাসড়কের পাশে শুরু হয় এক ভিন্ন কর্মযজ্ঞ। সারি সারি চুলায় জ্বলে আগুন, ধোঁয়ার কুন্ডুলি উঠতে থাকে আকাশে। দূর থেকে দেখলে মনে হবে, কোনো উৎসবের প্রস্তুতি চলছে। কিন্তু বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন, এটি একদল পরিশ্রমী নারী শ্রমিকের দৈনন্দিন সংগ্রামের গল্প।

স্থানীয়রা জানান, এই নারী শ্রমিকরা মূলত তাড়াশ, চাটমোহর ও পাবনার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসেন মৌসুমি শ্রমিক হিসেবে। দিনে প্রায় ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা মাঠে কাজ করার পর তারা ফিরে আসেন মহাসড়কের পাশে তাদের অস্থায়ী আবাসে। অথচ এত কষ্টের পরও তারা পান সামান্য মজুরি।

তাড়াশ থেকে আসা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারী শ্রমিক ইলা মিত্র জানান, ‘সারাদিন রোদে পুড়ে মাঠে কাজ করি। সন্ধ্যায় এসে রান্নার ব্যবস্থা করি। একসঙ্গে খাই। তারপর খোলা আকাশের নিচে ঘুমাই কিংবা মাথার ওপর পলিথিনের ছাউনি দিয়ে থাকি। কিন্তু কাজের তুলনায় মজুরি কম, সংসার চালানো কঠিন হয়ে গেছে।

আরেক নারী শ্রমিক জানান, ‘আমাদের থাকার কোনো ভালো জায়গা নেই। অনেক সময় রাতের বেলা ভয় লাগে, কারণ এখানে কোনো নিরাপত্তা নেই।’

স্থানীয় বাসিন্দা জুলফিকার হোসেন জানান, ‘নারী শ্রমিকদের অধিকাংশের বয়স ২৫ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে। সংসার চালাতে তারা বছরের বেশিরভাগ সময়ই গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র কাজ করতে যান। কিন্তু মহাসড়কের ধারে বসবাস করায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হয় প্রতিনিয়ত। নেই স্বাস্থ্যকর টয়লেট ব্যবস্থা, নেই বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা।

বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এসএম শহিদুল ইসলাম সোহেল বলেন, ‘কৃষিকাজে নারীর অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়লেও তাদের শ্রমের প্রকৃত মূল্যায়ন আজও হয়নি। তারা অস্থায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করলেও সামাজিক ও অর্থনৈতিক সুবিধা পান না। নেই সরকারি সহযোগিতা কিংবা শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃতি। এই নারীদের জন্য নিরাপদ আবাসন, ন্যায্য মজুরি এবং স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা দরকার।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হারুনর রশিদ বলেন, গুরুদাসপুরে এ ধরনের নারী শ্রমিকের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। তাদের জীবনযাত্রা কষ্টকর, তবুও তারা থেমে নেই।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহমিদা আফরোজ বলেন, গুরুদাসপুরে মৌসুম ভিত্তিক যে সকল শ্রমিকরা কাজ করতে আসেন তাদের নিরাপত্তা ও সার্বিক বিষয়ে খোঁজ-খবর রাখছে উপজেলা প্রশাসন।#

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

Exit mobile version