নেতাকর্মীদের প্রতারণায় ফাঁসানোর অভিযোগ যুব মহিলালীগ সভাপতির বিরুদ্ধে

আপডেট: জুলাই ২৭, ২০২৪, ১০:৩০ অপরাহ্ণ

শাহীন রহমান, পাবনা:


কৃষি অধিদপ্তরের লোক বলে ভুয়া ত্রাণদাতাদের সঙ্গে যোগসাজস করে দলীয় কর্মীদের প্রতারণার মাধ্যমে ফাঁসিয়ে দেয়ার অভিযােগ উঠেছে পাবনা জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আরেফা খানম শেফালী বিরুদ্ধে।
প্রতারণার শিকার হওয়ার পর তাকে জানালে তিনি উল্টো নেতাকর্মীদের বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেন। সেইসাথে কোথাও অভিযোগ করলে দলীয় পদ-পদবি কেড়ে নেয়ারও হুমকি দিয়েছেন অভিযুক্ত নেত্রী।

পরে এ বিষয়ে পাবনার ঈশ্বরদী থানা ও পাবনা জেলা আইনজীবী সমিতিতে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী নেতাকর্মীরা।
লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগী নেতাকর্মীরা জানান, গত ৪ জুন পাবনা জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আরেফা খানম শেফালী নেতাকর্মীদেরকে একটি মোবাইল নাম্বার দিয়ে বলেন, ওই মোবাইল নাম্বারটি কৃষি অধিদফতরের লোকের। এলাকার দরিদ্র ব্যক্তিদের ত্রাণ দিবে তারা-এমন বিষয়ে কথা বলতে বলেন এবং তারা যেভাবে যা করতে বলে তা করার জন্যও তাদেরকে নির্দেশ দেন শেফালী।

তার নির্দেশমতো নেতাকর্মীরা কথিত সেই কৃষি অধিদফতরের লোকদের সঙ্গে কথা বলেন। তারা নেতাকর্মীদেরকে আবেদন ফিসহ নানা বিষয়ের কথা বলে বিপুল অঙ্কের টাকা নেন। এরপর কৃষি অফিসে সেই ত্রাণ আনতে গিয়ে বুঝতে পারেন তারা প্রতারণার শিকার হয়েছেন। তারপর থেকে কথিত সেই কৃষি অফিসারদের নাম্বারও বন্ধ হয়ে গেছে। পরে বিষয়টি নিয়ে নেতাকর্মীরা শেফালির মুখোমুখি হলে শেফালী ভুক্তভোগী নেতাকর্মীদের নানা হুমকি-ধামকি দেন। কোনো অভিযোগ দিলে পদ-পদবি কেড়ে নেবারও হুমকি দেন তিনি বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
ভুক্তভোগীদের মধ্যে ঈশ্বরদী উপজেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি মেরিনা ইয়াসমিন লাকী বলেন, ‘আমি তাঁর কথামতো ওই কৃষি অফিসারের সাথে কথা বললে তিনি আমাকে ৩০ জন দরিদ্র মানুষকে আর্থিক সহায়তার প্রলোভন দেখিয়ে ফরম পূরণ বাবদ ১৫ হাজার টাকা নগদের মাধ্যমে হাতিয়ে নেন।

এছাড়াও ওই কৃষি কর্মকর্তা আরো ১৮ জনকে সহায়তার কথা বলে আমার কাছ থেকে আরো ৪৬০০ টাকা নেন। পরে আমি ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি অফিসে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি এমন কোনো কার্যক্রম তাদের চালু নেই। পরে আমি বুঝতে পারি যে এটা প্রতারণা এ বিষয়ে ঈশ্বরদী থানা ও জেলা বার সমিতিতে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।’

পাবনা পৌর মহিলা যুবলীগের অর্থ সম্পাদক রাবেয়া খাতুন তিশা বলেন, ’একইভাবে ওই কৃষি কর্মকর্তা আমার কাছ থেকে দুই দফায় বিকাশ এজেন্ট ও পার্সোনাল নাম্বারের মাধ্যমে ৪০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। বিষয়টি জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আরেফা খানম শেফালীকে জানালে তিনি খারাপ ব্যবহার করেন এবং টাকার কথা ভুলে যেতে বলেন।’

জেলা যুব মহিলা লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক জুবায়দার খান মুন্নি বলেন, ‘শেফালী আপার মাধ্যমে ওই কৃষি কর্মকর্তার নাম্বারে যোগাযোগ করে আমিও প্রতারণার শিকার হয়েছি। আমাকে ৩৫ জন দরিদ্রকে আর্থিক সহায়তার কথা বলে বিকাশের মাধ্যমে ২২ হাজার ৭৩০ টাকা নিয়েছে প্রতারকরা। জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি শেফালী আপাকে জিজ্ঞেস করলে তিনি উল্টো হুমকি দেন।’

অভিযুক্ত পাবনা জেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আরেফা খানম শেফালী বলেন, ‘নাম্বারটি আমি সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক এমপি জলি আপার কাছ থেকে পেয়েছিলাম। উনি আমাকে মেয়েদেরকে দেয়ার কথা বলেছিলেন। তার কথামতোই আমি মেয়েদের সেই নাম্বারটা দিয়েছিলাম। কিন্তু মেয়েদের কোনো টাকা-পয়সা আমি দিতে বলিনি। টাকা দেয়ার সময় মেয়েরা আমাকে জানায়ওনি। আর হুমকি-ধামকি দেয়ার অভিযোগ সত্যি নয়।’

এ বিষয়ে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক এমপি নাদিরা ইয়াসমিন জলি বলেন, ‘আসলে নাম্বারটা আমিই শেফালিকে দিয়েছিলাম। কিন্তু আমরা কেউ বুঝতে পারি নাই তারা প্রতারক। আমরা আসলে প্রতারণার শিকার হয়েছি। তবে শেফালি বলেছে যে, ও কাউকে টাকা-পয়সা দিতে বলেনি। মেয়েরা নিজেরাই টাকা-পয়সা লেনদেন করেছে। ওরা টাকা পয়সা দেবার আগে একটু আমাদের জানালে বিষয়টি হয়তো এতদূর যেতো না।’
এ ব্যাপারে যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ডেইজী সারোয়ার বলেন, ‘যদি তারা (নেতাকর্মী) প্রতারণার বিষয়ে আরেফা খানম শেফালীর জড়িত থাকার তথ্য-প্রমাণসহ অভিযোগ দেয়, তাহলে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

এ বিষয়ে ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অভিযোগ পাবার পর থেকে তদন্ত চলমান রয়েছে। আমরা সবকিছু খতিয়ে দেখছি। যেসব বিকাশ নাম্বার দেওয়া হয়েছে, তারপর অভিযুক্তের সাথে তাদের যোগাযোগ, সবকিছুই তদন্ত করা হচ্ছে। আসলে প্রতারক চক্র নানাভাবে মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এজন্য সবাইকে সতর্ক থেকে যাচাই বাছাই করে লেনদেন করা উচিত।’

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ