নিজস্ব প্রতিবেদক
বিএনপির এক নেতা আরেক নেতাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করেছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর যুবলীগ নেতার পুকুর থেকে মাছ লুট করতে না পেরে এই গালাগাল করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। দুজনের কথোপকথনের অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। গালাগাল করা বিএনপি নেতার নাম হযরত আলী। তিনি গোদাগাড়ীর গোগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান।
এদিকে যাঁকে গালাগাল করা হয়েছে ভুক্তভোগী সেই ব্যক্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন।
যাকে গালাগাল করা হয়েছে তার নাম শরিফুল ইসলাম বিশু। গোদাগাড়ী পৌরসভার জাহানাবাদ মহল্লায় তার বাড়ি। বিএনপি নেতা হযরতের দাবি, বিশু আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছিলেন। তবে বিশুর দাবি, ২০০৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত তিনি গোদাগাড়ীর ৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ২০২০ সালের স্থগিত হয়ে যাওয়া ওয়ার্ড সম্মেলনে তিনি সভাপতি প্রার্থী ছিলেন। কমিটি না হলেও তিনি অন্য কোনো দলে যোগ দেননি।
দুজনের ছড়িয়ে পড়া কথোপকথনে শোনা যায়, প্রথমেই শরিফুল ইসলাম বিশুকে ফোন করে স্থানীয় বিএনপি নেতা হযরত আলী বলেন, ‘বড় আওয়ামী লীগার তুমি, কাগজপত্র বের করছ পুকুরের। এই এলাকা থেকে কত টাকা তুললা হিসাবটা রাখো।’ জবাবে বিশু বলেন, ‘আওয়ামী লীগার বলতে কী বোঝাচ্ছেন আপনি?’ হযরত উত্তেজিত হয়ে অশ্রাব্য ভাষায় গালি দিয়ে বলেন, ‘…ব্যাটা গোগ্রাম ইউনিয়ন থেকে কত টাকা তুলেছিস, হিসাবটা রাখিস। এখন কাগজপত্র বাহির করা…ছিস।’ বিশু বলেন, ‘ভাষা খারাপ করছেন কেন আপনি?’ হযরত তখন আরও উত্তেজিত হয়ে অশ্লীল ভাষায় গালি দিয়ে বলেন, ‘আমি হযরত চেয়ারম্যান বললাম কিন্তু,…ব্যাটা তুই রেডি থাক, তুই রেডি হইয়া যা, তুই কত বড় আওয়ামী লীগ। তোর নামে মামলা হয়েছে।’ বিশু তখন বলেন, ‘তদবির করে নাম দেওয়া যায়। আপনি নাম দিয়েছেন। যে ভাষাগুলা বললেন তা আমার মুখেও আছে। কিন্তু আমি বলব না।’
হযরত বলেন, ‘তুই রেডি থাকিস, তোকে তোর বাড়িত থেকে লিয়্যাসবো। তুই আওয়ামী লীগ।’ বিশু বলেন, ‘আমি বিএনপি।’ তখন হযরত গালি দিয়ে বলেন, ‘বিএনপির সার্টিফিকেট তোকে দিয়েছে কোন শালা। ওই শালাকে দেখতে চাই।’ এ সময় বিশু বলেন, ‘আপনি বিএনপি, আপনি ব্যারিস্টার আমিনুল হকেরও বিপক্ষে গেছেন। আমরা কোনো দিন যাইনি।’ হযরত তখন বলেন, ‘ব্যারিস্টার আমিনুল হক তোর…হয়, স্বীকৃতিটা লে ওখান থেকে। তারপর দেখছি তোকে আই।’ এরপর ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
এই কথোপকথনের ব্যাপারে শরিফুল ইসলাম বিশু বলেন, ‘উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ পারভেজ বিপ্লব গোগ্রাম এলাকায় আটটি সরকারি পুকুর ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করেন। গত ৩ আগস্ট বিপ্লব ভারতে চলে গেছেন। এখন দেশে ফিরতে পারছেন না। ৫ আগস্টের পর তিনি ১৪ লাখ টাকায় মাছসহ পুকুরগুলো নাসিম নামের এক বিএনপি নেতার কাছে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন। এই পুকুর বিক্রি করতে হলে ইউএনও অফিস থেকে বিপ্লবের পুকুর ইজারার কাগজগুলো দরকার। আমি সেই কাগজ তুলে দিয়েছি বলে সাবেক চেয়ারম্যান হযরত আলী ক্ষুব্ধ হয়েছেন। কারণ তিনি তাঁর লোকজন দিয়ে পুকুরগুলো দখল করে রেখেছিলেন। ইজারার কাগজ না পেলে পুকুরগুলো বিক্রি হতো না। তখন পুকুরগুলোর মাছ লুটের পাশাপাশি সেগুলো দখল করতেন হযরত। এ জন্য বারবার তিনি ফোনে আমাকে পুকুরের কাগজপত্র বের করার প্রসঙ্গ তুলে গালি দেন।’
জানতে চাইলে বিপ্লবের পুকুর দখলের পরিকল্পনার কথা অস্বীকার করেন হযরত আলী। তিনি বলেন, ‘শরিফুল ইসলাম বিশু আওয়ামী লীগের লোক। এত দিন পুকুর সিন্ডিকেট চালিয়েছে। একটা পুকুরের টাকায় সরকারি চারটা পুকুর ইজারা নিয়েছে। সেই পুকুর আবার দ্বিতীয় দফায় ইজারা দিয়ে লাখ লাখ টাকা কামাই করেছে। সে এক পুকুর একাধিক ব্যক্তিকে দিয়ে এলাকায় বিরোধ তৈরি করেছে। এখন আবার সে বিএনপি সাজছে। এ জন্য একটু হট টক হয়ে গেছে।’
ইউএনওর কাছে বিশুর অভিযোগ প্রসঙ্গে হযরত আলী বলেন, ‘অভিযোগ করেছে, আইনে যা আছে আমার হবে। কিন্তু আমিও তার নামে সাইবার সিকিউরিটি আইনে মামলা করব। সে আমার কথা অনুমতি ছাড়া রেকর্ড করে ইন্টারনেটে ভাইরাল করেছে। এটা তো সে পারে না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল হায়াত বলেন, ‘শরিফুল ইসলাম বিশু একটা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অডিও রেকর্ডও পাঠিয়েছেন। বিষয়টা আমরা দেখছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’