নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজশাহীর পদ্মা নদীতে প্রতিদিন পানি বাড়ছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে উঠেছেন রাজশাহীর বিভিন্ন চরাঞ্চলের মানুষ। পানির তোড়ে পাড় ভাঙতে দেখে তারা বন্যার আশঙ্কা করছেন। যদিও নদীর পানি এখনও বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। তবে এভাবে পানি বাড়তে থাকলে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে ধারণা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
পদ্মার পানি বাড়ার সাথে সাথে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যাচ্ছে। এই মাছ ধরে জেলেরা বিক্রিও করছেন। পদ্মার জালে ধরা পরা মাছে জীবিকা নির্বাহ করছেন জেলেরা। তাদের আবারও সুদিন ফিরছে বলে জানিয়েছে জেলেরা।
রাজশাহী পাউবোর গেজ রিডার এনামুল হক জানান, প্রতিদিন গড়ে ২৫ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। শনিবার (১৩ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টায় রাজশাহী নগরীর বড়কুঠি পয়েন্টে পদ্মার পানির উচ্চতা পাওয়া গেছে ১৪ দশমিক ৮০ মিটার।
এদিন ভোর ৬টায় পাওয়া গেছে ১৪ দশমিক ৬৪ সেন্টিমিটার। তিনি আরও জানান, এই মাসের প্রথম দুইদিন পানি বাড়েনি। এরপর থেকে পানি বাড়তে শুরু করেছে। ১ তারিখে পানির উচ্চতা পাওয়া গেছে ১১ দশমিক ১৬ মিটার।
এনামুল হক বলেন, রাজশাহী অঞ্চলে পদ্মার পানির বিপদসীমা ১৮ দশমিক ৫০ মিটার। এখন প্রতিদিন পানি বাড়ছে। এভাবে বাড়তে থাকলে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এখনই পদ্মার বুকের জেগে ওঠা বেশিরভাগ চর তলিয়ে যেতে শুরু করেছে। এসব চরে মানুষের বসতি না থাকলেও গবাদি পশু পালন হতো। পানি বিপদসীমা অতিক্রম করলে যেসব চরে বসতি রয়েছে সেগুলোতে পানি ঢুকবে।
এদিকে নদীতে পানি বৃদ্ধির কারণে জমে উঠেছে নৌকা ভ্রমণ। রাজশাহী নগরীর টি-বাঁধ, মুক্তমঞ্চ ও বড়কুঠিসহ বিভিন্ন স্পটে রাখা আছে সারি সারি নৌকা। ভ্রমণ পিপাসুদের নিয়ে মাঝিরা নৌকা ছাড়ছেন ভরা পদ্মায়। মাঝিরা জানিয়েছেন, বছরের বেশিরভাগ সময় নদীতে পানি কম থাকায় তাদের নৌকা তেমন চলে না। তবে ভরা মৌসুমের কয়েকটা মাস তারা নৌকা চালিয়ে বেশ ভালোই আয় করেন।
পদ্মায় পানি বাড়ার ফলে চরগুলোর ফসল ডুবে যাচ্ছে। রাজশাহীর গোদাগাড়ী, পবা ও বাঘা উপজেলায় চাষ করা নানান ফসল তলিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর ইউনিয়নের ১৫টি চরের প্রায় ৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে শত শত বিঘা জমির ফসল। বাঘা উপজেলার মানিকের চরে পানিতে তলিয়ে গেছে অর্ধশত চাষির ফসল। এমন অবস্থায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারা।
পদ্মা নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোতে বসছে মাছের হাট। এছাড়াও জেলেরা মাছ ধরে সরাসরি আড়তে নিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকা থেকে মাছ কিনতে আসছেন বড় বড় ব্যাপারিরা। পদ্মায় নতুন পানি আসার পর থেকে জেলেরা মাছ ধরতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। কিছুদিন থেকে পদ্মায় নতুনভাবে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জেলের জালে উঠছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এর মধ্যে ছোট বাঘাইড়, পাবদা, ছোট চিংড়ি, চিতল, রিটা, মলা, ট্যাংড়া ও পিয়ালিসহ বিভিন্ন জাতের। তবে জেলেরা বলছেন, ভরা পদ্মায় ¯্রােতের কারণে মাছ কম পাওয়া যায়। হেমন্তকালে এই মাছ বেশি পাওয়া যাবে।
রাজশাহী মহানগরীর শ্রীরামপুর এলাকার জেলে রুবেল ইসলাম বলেন, নদীতে মাছ ধরা শুরু হয় রাত থেকেই। সন্ধ্যার পর জাল ও নৌকা প্রস্তুত করে আবহাওয়া বুঝে রাত ১০টার দিকে চলে যায়। সারারাতই মাছ ধরি। ভোরবেলায় মাছ নিয়ে এসে এখানেই বিক্রি করি। এতে আমাদের লাভও বেশি হয়। এখন পদ্মার ভরা যৌবন চলছে। এই মাছ আরও বেশি পাওয়া যাবে পানি কমলে।
বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর পদ্মা নদীর ঘাটে মাছ বিক্রি করতে আসা দাদপুর চরের জেলে শহিদুল ইসলাম বলেন, আমি ও আমার ছেলে মিলে সাড়ে ৮ কেজি পিয়ালী, তিন কেজি চিংড়ি, দেড় কেজি বালি মাছ ধরেছিলাম। এই মাছ চকরাজাপুর পদ্মার নদীর ঘাটে বিক্রি করি। পিয়ালী প্রতিকেজি ৫০০ টাকা, চিংড়ি সাড়ে ৮০০ টাকা এবং বালি সাড়ে ৮০০ কেজি দরে বিক্রি করেছেন।
কুষ্টিয়ার চীরমারি চরের জেলে শাহিনুর রহমান বলেন, আমি প্রতিদিন পদ্মা নদীতে মাছ শিকার করি। সকালে চকরাজাপুর পদ্মা নদীর ঘাটে বিক্রি করি। এই মাছ বিক্রি করতে কোনো অসুবিধা হয় না। বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যাপারি এসে মাছ ক্রয় করে নিয়ে যায়। মাছ ধরায় আমার মূল পেশা। এই পেশাতে আমার ৬ সদস্যের সংসার চলে।
উল্লেখ্য, সবশেষ ২০১৩ সালের ৭ সেপ্টেম্বর রাজশাহীতে পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে। সেসময় পানি ১৮ দশমিক ৭০ মিটার উচ্চতায় উঠেছিল। অর্থাৎ সে সময় পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল। গেল বছরেও পদ্মার পানি সেভাবে বৃদ্ধি পায়নি।