বৃহস্পতিবার, ২৩ মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ৯ চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ ।
নিজস্ব প্রতিবেদক
বর্ষা মৌসুমে মরা পদ্মা ফিরে পেয়েছে যৌবন। ধূ ধূ বালুচর ভাসিয়ে পদ্মার পানি এখন থইথই করছে শহরপাড়ে। ব্যাপক বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে বান ডেকেছে পদ্মায়। রাজশাহীতে পদ্মার পানি নদীতীর ছাপিয়ে ঢুকে পড়ছে নি¤œ অঞ্চলে। প্রতিবার বর্ষা মৌসুমে দেখা যায় একই চিত্র।
তবে শহরপাড়ে পদ্মার পানি থইথই করলেও শহরের নিকটবর্তী রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলায় কৃষি জমিতে যে পরিমাণ পানির প্রয়োজন তা সংরক্ষণ করা সম্ভব হয় না। এর ফলে শুকনো মৌসুমে পানির প্রয়োজন হয়। পদ্মার পানি টেনে নিয়ে কৃষিকাজে ব্যবহারের জন্য আশির দশকে পদ্মা নদীকে ঘিরে তৈরি করা হয়েছিল প্রায় অর্ধশত স্লুইসগেট। আর শহরঘেঁষা উপজেলাগুলোর খালবিলে পানি নেয়ার জন্য খনন করা হয়েছিল ১৯টি খাল ও ফ্লাড ড্রেন।
কিন্তু পদ্মার পানি কাজে লাগানোর পথ এখন রুদ্ধ। অবৈধভাবে খাল দখল ও সিটি করপোরেশনের দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে অচল হয়ে পড়েছে অর্ধশত স্লুইসগেট ও ফ্লাড ড্রেনগুলো। ফলে পদ্মায় পানি থইথই করলেও তা কৃষিকাজে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, এ সমস্যার সমাধানে নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, পদ্মার অতিরিক্ত পানি ও প্রবল স্রোতে চাপ বাড়ছে শহররক্ষা বাঁধের ওপর। এর ফলে ভাঙছে নদীরপাড়। পানি উন্নয়ন বোর্ড, বাড়তে থাকা এ পানি শহররক্ষা বাঁধের স্লুইস গেটগুলো দিয়ে বের করতে চাইলেও নগরীর ড্রেনের নাজুক অবস্থা ও খাল দখলের কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না।
পদ্মার সঙ্গে যেসব ড্রেনগুলোর সংযোগ ছিলো নগরীর সঙ্গে তা এখন বন্ধ। আর এ ড্রেনগুলোতে নগরীর বিভিন্ন রাস্তা ও সাব ড্রেনগুলোরও সংযোগ ছিলো। কিন্তু এগুলো দখল করে নিয়েছেন প্রভাবশালীরা। তার ওপর নির্মাণ করেছেন বহুতল ভবনসহ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এর ফলে নগরীর পানি নিষ্কাশনের পথ রুদ্ধ হয়েছে। সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতার।
নগরীর উল্লেখযোগ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে, নগরীর ভাটাপাড়া এলাকায় ড্রেন দখল। ওই এলাকায় এই ড্রেনটির পানি নগরী দিয়ে পবা উপজেলার কয়েকটি খালে নামিয়ে দেয়া হত। ভাটাপাড়া এলাকায় এই ড্রেনটি ছিলো অনেক প্রশস্ত। পরবর্তীতে ড্রেনটি দখল করে সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণ করেন প্রভাবশালীরা। একইভাবে নগরীর চৌদ্দপায়া ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পাশে বড় ড্রেন, ফুদকিপাড়া এবং সাহেববাজার বড় মসজিদ সংলগ্ন ড্রেনও দখল করা হয়েছে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্য মতে, গেল বর্ষায় শহর পয়েন্টে পানির উচ্চতা উঠেছিল সর্বোচ্চ ১৮ দশমিক ০৪ সেন্টিমিটার। এতে মাত্র একটি স্লুইসগেট খুলে দিলে ড্রেনেজ অব্যবস্থাপনার কারণে পানিবন্দি হয় নগরীর ফুদকি পাড়াসহ বেশকিছু নিচু এলাকা।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী বলেন, বসতি বেড়ে যাওয়ার কারণে এবং যে এলাকাগুলোতে পানি দেওয়া হতো সেই এলাকার মানুষদের আপত্তির কারণে আর পানি সেদিকে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
সিটি কর্পোরেশনের ড্রেনেজ অব্যবস্থাপনার কারণে বৃষ্টির পানি ছাড়া, স্লুইস গেটকে ঘিরে তৈরি করা খাল থেকে পদ্মার পানি ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছেন না কৃষক।
রাজশাহী পবা উপজেলার বড়গাছি এলাকার কৃষক হোসেন আলী বলেন, নদী ভরে গেলে স্লুইসগেট খুলে দিলে পানি নেমে যায়। পদ্মার পানি পেলে আমাদের ফসলের জন্যে ভাল হয়। পানি পেলে মাছ চাষ থেকে আরম্ভ করে সব কিছুই করা সম্ভব। খাল খনন করা হলে আমাদের ফসল ফলাতে সুবিধা হবে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী আশরাফুল হক বলেন, পদ্মানদীর পানি নামাতে স্লুইস গেটের ব্যবহার নিয়ে নতুন করে পরিকল্পনা ও প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ২০৫০ পর্যন্ত রাজশাহী শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে।