বুধবার, ১৪ মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩১ বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ ।
আমানুল হক আমান, বাঘা (রাজশাহী):
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পদ্মার মধ্যে চকরাজাপুর ঘাটে প্রতিদিন মাছের হাট বসে। এই হাটে প্রতিদিন জেলেরা পদ্মা নদী থেকে মাছ ধরে এই হাটে বিক্রি করেন। বিভিন্ন এলাকা থেকে মাছ ক্রয় করতে এই হাটে আসেন বড় বড় ব্যাপারিরা।
জানা যায়, পদ্মায় নতুন পানি আসার পর থেকে জেলেরা মাছ ধরতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। এক সপ্তাহ থেকে পদ্মায় নতুনভাবে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন পদ্মার মধ্যে চকরাজাপুর ইউনিয়নের জেলেরা।
মূল ভূখ- থেকে বিচ্ছিন্ন নদীবেষ্টিত উপজেলার পদ্মার মধ্যে চকরাজাপুর ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নে ১৫টি চর রয়েছে। এই চরে জনসংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। উপজেলায় ২৬ কিলোমিটার এলাকা পদ্মা নদী রয়েছে। এরমধ্যে ১৫ কিলোমিটার চকরাজাপুর ইউনিয়নের মধ্যে। জেলে রয়েছে ৩৭০ জন। তারা ভাঙনগ্রস্ত ও সহায়-সম্বলহীন মানুষ। তারা চরে অবস্থান করে। তবে কিছু কিছু চরে স্থায়ী জনবসতি গড়ে উঠেছে। আবার কিছু কিছু চরে অস্থায়ী বসতি রয়েছে। জেলেরা সারারাত মাছ শিকার করে সকালে চকরাজাপুর পদ্মা নদীর ঘাটে বিক্রি করতে আসে। এই মাছ ক্রয় করতে আসেন ঈশ্বর্দী, লালপুর, কুষ্টিয়ার বড় বড় ব্যাপারিরা।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার চীরমারি চরের জেলে শাহিনুর রহমান বলেন, আমি প্রতিদিন পদ্মা নদীতে মাছ শিকার করি। সকালে চকরাজাপুর পদ্মা নদীর ঘাটে বিক্রি করি। এই মাছ বিক্রি করতে কোনো অসুবিধা হয় না। বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যাপারি এসে মাছ ক্রয় করে নিয়ে যায়। মাছ ধরায় আমার মূল পেশা। এই পেশাতে আমার ৬ সদস্যের সংসার চলে।
কালিদাসখালী চরের মাছ ক্রয় করতে আসা ব্যাপারি করম উদ্দিন বলেন, জেলেরা সারারাত মাছ ধরে প্রতিদিন সকালে এই ঘাটে বিক্রি করতে আসেন। এই মাছ ক্রয় করে ঈশ্বদীতে নিয়ে যায়। পদ্মা নদীর মাছের প্রচুর চাহিদা। সকাল ৭াট থেকে ১০টা পর্যন্ত চলে এই হাট। তবে এই হাট দুই/তিন ঘন্টার মধ্যে শেষ হয়ে যায়।
শুক্রবার (৫ জুলাই) সকাল ১০টার দিকে চকরাজাপুর পদ্মা নদীর ঘাটে মাছ বিক্রি করতে আসা দাদপুর চরের জেলে শহিদুল ইসলাম বলেন, আমি ও আমার ছেলে মিলে সাড়ে ৮ পিয়ালী, তিন কেজি চিংড়ি, দেড় কেজি বালি মাছ ধরেছিলাম। এই মাছ চকরাজাপুর পদ্মার নদীর ঘাটে বিক্রি করি। পিয়ালী প্রতিকেজি ৫০০ টাকা, চিংড়ি সাড়ে ৮০০ টাকা এবং বালি সাড়ে ৮০০ কেজি দরে বিক্রি করেছেন।
এ বিষয়ে চকরাজাপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুল আযম বলেন, পদ্মার চরের মধ্যে ১৫টি চর নিয়ে চকরাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদ গঠিত হয়েছে। পদ্মায় নতুন পানি বাড়ছে। এরপর থেকে কেউ নৌকা আবার কেউ জাল নিয়ে মাছ ধরে জীবন যাপন করে।
এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাহাদুল ইসলাম বলেন, পদ্মার মধ্যে চরের বেশির ভাগ বাসিন্দা ভূমিহীন অসহায় খেটে খাওয়া মানুষ। তারা প্রতিনিয়ত প্রকৃতির খামখেয়ালি রূপকে বরণ করে বসবাস করে। তাদের মধ্যে বেশির ভাগ মানুষ শুকনো মৌসুমে কৃষি কাজ আর বর্ষা মৌসুমে মাছ ধরে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। তবে সকাল থেকে চকরাজাপুর পদ্মা নদীর ঘাটে মাছের হাস বসে।