সোমবার, ২ অক্টোবর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৭ আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ ।
সোনার দেশ ডেস্ক
নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগে কোনো বিভেদ নেই দাবি করে সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান বলেছেন, ‘নেত্রী’ নির্দেশ দিলে সাংসদ পদ ছেড়েও দলের মেয়র প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভীর পক্ষে মাঠে নামতে প্রস্তুত আছেন তিনি।
ক্ষমতাসীন দলের এই দুই নেতার মধ্েয পুরনো দ্বন্দ্ব নিয়ে সংবাদমাধ্যমে নানা খবরের মধ্েযই শুক্রবার শহরের নাসিম ওসমান মেমোরিয়াল পার্ক মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের ছেলে শামীম।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারায়াণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আইভীর হাতে নৌকা প্রতীক দিয়েছেন। আইভীকে বার বার ‘ছোট বোন’ হিসেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, “আইভীই আওয়ামী লীগের যোগ্য প্রার্থী।”
শামীম বলেন, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি পদে থাকায় নির্বাচনের আচরণ বিধি অনুযায়ী আইভীর পক্ষে ভোটের প্রচারে নামার সুযোগ নেই।
“কিন্তু নেত্রী যদি চান, শনিবারই আমি পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করে আমার ছোট বোন আইভীর সঙ্গে প্রতিটি ঘরে ঘরে যাব। আর এই সুযোগ যদি আমার নেত্রী না দেন, তাহলে সিটি করপোরেশনের বাইরে বসে নির্বাচনী কাজ করার অধিকার আমার আছে।”
এই সংসদ সদস্য বলেন, “নির্বাচনী আচরণবিধিতে বিধান নেই যে আমি বাইরে বসে কথা বলতে পারব না। যদি এই বিধানই থাকে তাহলে টকশোতে বসে যারা বিভিন্নভাবে কথা বলছেন, সেটাও কিন্তু পারে না।”
আর নিজে যেতে না পারলেও শনিবার থেকে নিজের নেতাকর্মীদের নৌকার পক্ষে ভোটের প্রচারে পাঠাবেন জানিয়ে শামীম বলেন, “আগামীকাল থেকে প্রতিটি অলিতে-গলিতে মানুষের পায়ে হাত দিয়ে আমার নেতাকর্মীরা নৌকার পক্ষে ভোট চাইবে।”
পাঁচ বছর আগে এই শামীম ওসমানকে হারিয়েই নারায়ণগঞ্জের প্রথম মেয়র হয়েছিলেন আইভী। তাদের দুজনের এই দ্বন্দ্ব পারিবারিক উত্তরাধিকার। ওসমানদের বিরোধী শিবির থেকে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান হয়েছিলেন আইভীর বাবা আলী আহমেদ চুনকা।
ভোটের পর ত্বকী হত্যাকা- এবং সাত খুন নিয়ে আইভী ও শামীমের দ্বন্দ্ব চরমে ওঠে। প্রকাশ্য সভায় একে অন্যের বিষোদগারের পাশাপাশি টেলিভিশন বিতর্কে তাদের মারমুখী ভূমিকায়ও দেখা যায়। এবারের নির্বাচন সামনে রেখে শামীম প্রভাবিত নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগ মেয়র পদে মনোনয়নের জন্য যে তিন নেতার নাম দিয়েছিল তার মধ্যে ছিলেন না আইভী। তবে গত এক যুগের বেশি নারায়ণগঞ্জবাসীর জনপ্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করা জেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি আইভীর উপরে আস্থা রাখে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
তার মনোনয়নে দ্বিধাবিভক্ত আওয়ামী লীগ নারায়ণগঞ্জে নৌকার জয় আনতে পারবে কি না সে শঙ্কার মধ্যে শামীম ও আইভীকে নিয়ে গণভবনে বসেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তখন দুজন সংবাদমাধ্যমে কোনো কথা না বললেও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়, আইভীর জন্য কাজ করবেন দলের নেতাকর্মীরা।
এরপর আর কোনো সাড়া শব্দ না মিললেও সোমবার প্রতীক বরাদ্দের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরুর পঞ্চম দিনে সংবাদ সম্মেলনে এলেন শামীম ওসমান।
দলীয় প্রার্থী আইভীকে বিজয়ী করে আনার আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, “আইভী আমার ইয়োঙ্গার সিস্টার, ছোট বোন।” তার সঙ্গে দ্বন্দ্ব থাকলেও তা এখন অতীত বলে মন্তব্য করে সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জে নৌকার পক্ষে ভোটের প্রচার ‘কাল থেকে দেখবেন’।
‘চাপ থেকে নয়’ দলীয় সভানেত্রীর প্রতি আনুগত্য থেকে আইভীর পক্ষে তার এই অবস্থান জানিয়ে শামীম ওসমান বলেন, “আমি আওয়ামী লীগ করি, আওয়ামী লীগ করব এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত করব। আমরা যারা পঁচাত্তরের পর জন্ম নিয়েছি আমরা কিন্তু ওয়ান মাস্টার দল, আমাদের নেত্রী একটা শেখ হাসিনা।
“উনার ইচ্ছা, উনার কাছ থেকে যেই ভালোবাসা, স্নেহ পেয়েছি, উনার জন্য যে কোনো ত্যাগ, যে কোনো তিতিক্ষা, যে কোনো সিদ্ধান্ত, উনি যা দিবেন আমাদের জন্য তা শিরোধার্য।”
সংবাদ সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই, সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।- বিডিনিউজ