পবায় সাব-রেজিস্ট্রার না থাকায় ভোগান্তিতে সেবা গ্রহিতারা, বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

আপডেট: এপ্রিল ৬, ২০২৪, ৮:১০ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:রাজশাহীর পবা উপজেলায় স্থায়ীভাবে সাব-রেজিস্ট্রার না থাকায় জমির দলিল রেজিস্ট্রি করতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন হাজারও জমি ক্রেতা-বিক্রেতারা। পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

পবা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস সূত্রে জানা গেছে, রেজিস্ট্রি প্রতি এক লাখ টাকায় সাত হাজার ৫০০ টাকার রাজস্ব জমা হয় সরকারের কোষাগারে। পবা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে প্রতিদিন গড়ে এক শতাধিক জমি রেজিস্ট্রি হয়, যার আনুমানিক রাজস্বের পরিমাণ প্রায় ৫০ লাখ টাকা। অনেক উপজেলার এক সপ্তাহের কেনা-বেচা পবা উপজেলায় একদিনেই হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে সপ্তাহে চার দিনের কর্মদিবসের ব্যবস্থা থাকলেও নানা অজুহাতে দুই কর্মদিবসের বেশী সাব-রেজিস্ট্রি অফিস চলে না। আবার স্থায়ী সাব-রেজিস্টার না থাকায় অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা রেজিস্টার অফিস করেন নিজের খেয়াল খুশি মত। তাই জমি বেচাকেনায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে এই উপজেলার জমি ক্রেতা-বিক্রেতারা। পাশাপাশি সরকার হারাচ্ছে বিপুল অংকের রাজস্ব।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েক মাস যাবৎ দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার আয়েশা সিদ্দিকা মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকায় জমি রেজিস্ট্রি বন্ধ হয়ে যায়। পরে জেলা রেজিস্ট্রারের নির্দেশনায় অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন, গোদাগাড়ী উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার সাদেকুর রহমান এবং দূর্গাপুর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার সাদ্দাম হোসেন। অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত সাব-রেজিস্ট্রার সময়মত অফিস না করার ফলে দলিল রেজিস্ট্রির নিয়ে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে।

বুধবার (৩ আগস্ট) সরেজমিনে পবা উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিস ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে সেবা নিতে এসেছেন সেবা প্রার্থীরা। তারা জানান, কারো বাবা মা অসুস্থ, আবার নিজেই চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাবেন, আবার অনেকে বিলের জমি বিক্রি করে ভিটা জমি কিনবেন। এসে দেখেন আজ জমির দলিল রেজিস্ট্রি হবে না। এতে অনেকের মাথায় হাত পড়ে। সমস্ত যোগাড় শেষ হয়ে যায়। আবার অনেকে জমির দলিল রেজিস্ট্রি দিতে টালবাহানা শুরু করেন। তখন দলিল রেজিস্ট্রি করতে বেশী টাকা খরচ হয়।

এসময় সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে ইসলামী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আব্দুল্লাহ আল কাফী তার জমি রেজিস্ট্রি করতে এসেছিলেন। তিনি জানান, বিগত দুইদিন জমি রেজিস্ট্রির তারিখ নির্ধারণ হবার পরও সাব রেজিস্ট্রার উপস্থিত না থাকায় রেজিস্ট্রি করতে ব্যর্থ হই। আজকে (বুধবার) এসে দেখি সাব রেজিস্ট্রার অফিস করবেন না। তাকে কল করা হলেও ফোন রিসিভ করেননি। উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিস থেকে পুনরায় তারিখ দিয়েছেন ১৫ আগস্ট। এমতাবস্থায় আমি জমি রেজিস্ট্রির বিষয়ে উদ্বিগ্ন ও উৎকণ্ঠায় ভুগছি।

এবিষয়ে রাজশাহী জেলা রেজিস্ট্রার মো. শফিকুল ইসলামকে (০১৭১৫-৭১৭৯২৪) এই নম্বরে একাধিক বার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
পবা উপজেলা দলিল লেখক সমিতি’র একাধিক দলিল লেখকের কাছে জানা গেছে, স্থায়ীভাবে সাব-রেজিস্ট্রার না থাকায়, জমির দলিল রেজিস্ট্রি করতে গেলে নানা ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। ব্যাংক ড্রাফট, জমির কাগজপত্র ও প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস জোগাড় করতেই বেলা শেষ হয়ে যায়। ওই দিন কোনো কারণে জমির দলিল না হলে, পরের দিন করতে হয়। আবার সব ঠিকঠাক থাকলেও হঠাৎ করে জানা যায়, আজ রেজিস্ট্রার সাহেব ছুটিতে আছেন। তখন দলিল লেখকসহ ক্রেতা-বিক্রেতা বিপাকে পড়েন। নানান ভোগান্তির কারণে জমির মালিক জমি বেচা কেনায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। ফলে সরকার লক্ষ-লক্ষ টাকা রাজস্ব হতে বঞ্চিত হচ্ছে পাশাপাশি দলিল লেখকরাও বেকার হয়ে পড়ছে।

পবা উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি এসএম আয়নাল হক জানান, দীর্ঘদিন থেকে পবা উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিসে স্থায়ী কোনো সাব রেজিস্ট্রার নেই, ফলে জমি বেচা কেনায় হয়রানির শিকার হচ্ছে সাধারণ জনগণ। কর্মহীন হয়ে পড়েছে অনেক দলিল লেখক।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ