পরিবহণ ধর্মঘট প্রত্যাহার || স্বস্তির সিদ্ধান্ত শিক্ষারও হোক

আপডেট: ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৭, ১২:১৭ পূর্বাহ্ণ

স্বস্তির খবর এই যে, খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় চলমান অনির্দিষ্টকালের পরিবহণ ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিয়েছে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। খুলনা জেলা প্রশাসনের  উদ্যোগে সমঝোতা হলে ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনে তা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। সোমবার দুপুরে এই সিদ্ধান্ত নেয়ার পর যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। ফলে মানুষের মধ্যে যে, দুর্ভোগ, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা নেমে এসেছিল তার অবসান হয়েছে।
সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিদেনের তথ্যমতে, সড়ক দুর্ঘটনায় তারেক-মিশুকের মৃত্যুর দায়ে বাসচালকের যাবজ্জীবন সাজার প্রতিবাদে খুলনা বিভাগে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন রোববার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট শুরু করে। ফলে ওই ১০ জেলার মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগের মধ্যে পড়ে। পরিবহণ ধর্মঘট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিতে পারার জন্য সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানাই। এই সুমতি তাদের মধ্যে অব্যাহতভাবেই থাকবে বলেও আমরা বিশ্বাস করতে চাই।
বাংলাদেশে কথায় কথায় ধর্মঘট ডাকাটা অনেকটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। কখনো কখনো আইনের তোয়াক্কা না করেই ধর্মঘটের আশ্রয় নেয়া হয়। যার পরিণতিতে দেশের সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে পড়ে। এটা যে শুধু সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের বিষয় তা নয়Ñ সব শ্রেণিপেশার জোটগুলোই দাবি আদায়ের জন্য ধর্মঘট ডেকে বসে। ডাক্তারদের ধর্মঘটের কথা প্রায়ই সংবাদ মাধ্যম থেকে জানা যায়। এর ফলেও নিরীহ রোগিরা জিম্মি হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও দেশের জনগণ এ ক্ষেত্রে খুবই প্রান্তিক পর্যায়ে রয়েছে। কোনো সংগঠন বা জোট ইচ্ছে করলেই জনগণকে  জিম্মি করে ফেলতে পারে। কোটারি শক্তির কাছে অনেক সময় প্রশাসনকে অসহায় পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়।
সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন হুট করেই যে পরিবহণ ধর্মঘট ডেকেছে তা কতটুকু যৌক্তিক ছিল? সরকারের প্রভাবশালী সেতুমন্ত্রী ধর্মঘটকে অযৌক্তিক বলেছেন। যদিও সরকারের আরেকজন- নৌ মন্ত্রী মন্তব্য করেছেন ‘ ধর্মঘট তারা করতেই পারে।’ এই যে সরকারের দুই মন্ত্রীর বিপরীতমুখি বক্তব্য  দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করে, বিব্রত করে। মন্ত্রীর বক্তব্য যদি সড়ক দুর্ঘটনার অপরাধকে উৎসাহিত করে তবে তা হবে অত্যন্ত দুঃখজনক। সড়ক দুর্ঘটনায় যে কয়েকটি কারণ- তার মধ্যে চালকের বেপরোয়া গাড়ি চালানো, ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালান এবং অপ্রাপ্ত বয়স্কদের দিয়ে গাড়ি চালানোর বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এসব কারণে যদি কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা হলে সে আইনের আশ্রয় নিতে পারবে না? তদুপরি আদালত যে রায় দিয়েছেন এটাই শেষ কিছু নয়- আসামী পক্ষের অবশ্যই উচ্চতর আদালতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ গুলো না করে ধর্মঘট ডেকে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করা কতটুকু যৌক্তিকÑ এসব আমাদের বিবেচনায় নেয়ার সময় এসেছে। কেননা দেশের মানুষ এই ধর্মঘট ভালোভাবে নেয়নি। সাধারণ মানুষ গ্রহণ না করলে তার পরিণতি ভাল হয় না। এদেশে হরতাল কর্মসূচি ভোত্ াহয়ে পড়ার দৃষ্টান্ত আমাদের সামনেই আছে।
দেশের উন্নয়ন হচ্ছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বিশ্বের নজর কেড়েছে কিন্তু আমরা সড়কে মৃত্যু হার মোটেও কমাতে পারছি না। বরং দিন দিন তা বেড়েই চলেছে। তথ্যমতে সড়ক দুর্ঘটনার ফলে দেশে ১-২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কম হচ্ছে। অবশ্যই এই পরিস্থিতি উত্তরণে বিনিয়োগ বাড়ান দরকার। চালকদের শারীরিক ও মানসিক দক্ষাতার ওপর জোর দেয়ার সময় এসেছে। আর বিষয়টি সর্বাগ্রে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনেরই দাবির মধ্যে আসা উচিৎ। কেননা সড়কে মৃত্যুর মিছিলে তাদের পরিবারের সদস্যরা সামিল হয়ে পড়তে পারে। সেই মৃত্যু ও আর সড়ক দুর্ঘটনায় অন্য মৃত্যু একই রকম বেদনাদায়ক। এই অনুভুতি আমাদের সকলের মধ্যেই জাগরিত হবে, বিবেককে নাড়া দিবেÑ কেবল তখনই আমরা সড়কে মৃত্যু সহনশীল মাত্রায় নিতে পারবো।