পরিবহন ধর্মঘটে ভোগান্তিতে যাত্রীরা

আপডেট: মার্চ ১, ২০১৭, ১:১১ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক



রাজশাহীতে পরিবহন ধর্মঘটে ভোগান্তিতে পড়েছে এই অঞ্চলের মানুষজন। হঠাৎ করে ডাকা এই ধর্মঘটে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে না যাওয়ায় দূর-দূরান্ত থেকে থেকে আগত যাত্রীরা বিপাকে পড়ে। অনেকে বাধ্য হয়ে সিএনজিতে, অটোরিকশায় ও ট্রাকে করে গন্তব্যস্থানে পৌঁছায়। ধর্মঘটের কারণে ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি যাত্রী উঠে ট্রেনে।
কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজশাহীতে এই ধর্মঘট পালন করে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। বাস চালক জামির হোসেনের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে এবং সড়ক দুর্ঘটনার মামলায় অপর এক চালকের মৃত্য্যুদণ্ডের রায়ের প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দেয় পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। গতকাল মঙ্গলবার দিনব্যাপি চলা পরিবহন ধর্মঘটে দূরপাল্লার কোনো বাস টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যায়নি।
হঠাৎ করে ডাকা এই ধর্মঘটে বাস টার্মিনালে এসে বিপাকে পড়েন চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা সোহেল রানা। গতকাল বেলা ১১টার সময় শিরোইল বাস টার্মিনালে কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি জানান, কাল (বুধবার) সকাল ১০টায় তার দুবাইগামী ফ্লাইট। আজকের (মঙ্গলবার) মধ্যেই যেকোনোভাবে তাকে ঢাকায় পৌঁছাতেই হবে। বেলা একটা পর্যন্ত তিনি টার্মিনালেই অপেক্ষা করছিলেন। তিনি বলেন, এমন অবস্থা যে আজকে আবার ঢাকাগামী ট্রেনও নেই।
নারায়ণগঞ্জগামী গার্মেন্টস কর্মী আবদুর রহমান বলেন, টার্মিনালে এসে দেখি বাস চলাচল করছে না। তিন দিনের ছুটিতে রাজশাহীতে এসেছিলাম। কাল নারায়ণগঞ্জ পৌঁছাতেই হবে। না পৌঁছালে চাকরি থাকবে কি না জানি না।
চরম ভোগান্তিতে পড়েন বৃদ্ধ ও অসুস্থ রোগীরা। তার স্বজনরা তাদের নিয়ে দুভের্ঁাগে পড়েন। অনেকে বাধ্য হয়েই রাস্তার ওপর আশ্রয় নেন। তাদের একজন ইয়াকুব। তিনি কুষ্টিয়া থেকে তার মায়ের চিকিৎসা করানোর জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছিলেন। পাঁচদিন পর আজকে ছুটি পেয়েছেন। ছুটি পেয়ে টার্মিনালে এসে দেখেন বাস বন্ধ। তার মাথায় হাত পড়ে। ওদিকে ট্রেনেরও টিকিট কাটেননি। অসুস্থ রোগী নিয়ে দাঁড়িয়েও যেতে পারবেন না। তিনি বলেন, কী ভাবে কুষ্টিয়া পৌঁছাব এখনো বুঝতে পারছি না।
বাস না পেয়ে সিএনজিতে নাটোর যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে রওয়ানা দেন গৌতম দে। তিনি বলেন, আমাকে নাটোরের বড়াইগ্রামে যেতেই হবে। এখন ভাড়া বেশি লাগলেও যেভাবে হোক যেতেই হবে।
নগরীর হড়গ্রাম এলাকার শফিকুল ইসলাম গতকাল সকালে জানান, সকালে জরুরি কাজে তার ঢাকা যাওয়ার কথা ছিলো। টার্মিনালে যাওয়ার পরে তিনি শুনতে পান যে পরিবহন ধর্মঘট চলছে। বিকল্প হিসেবে তিনি দুপুরের ট্রেনে ঢাকা যাওয়ার কথা ভাবছেন।
বাস চলাচল বন্ধ থাকার কারণে রাজশাহী রেল স্টেশনে সকাল থেকেই ট্রেনের টিকিট নেয়ার জন্য যাত্রীদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এদিকে পরিবহন ধর্মঘটের সমর্থনে সকালে রাজশাহী টার্মিনালে মিছিল করেছেন পরিবহন শ্রমিকরা। সকাল থেকে রাজশাহী থেকে কোনো রুটেই বাস ছেড়ে যায়নি।

রাজশাহী জেলা বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি কামাল হোসেন রবি জানান, গতকাল সকাল থেকে দেশব্যাপি অনির্দিষ্টকাল পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে। পরিবহন মালিক সমিতি এবং শ্রমিক সংগঠনের যৌথ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বাস চালক জামির হোসেনের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে এবং সড়ক দুর্ঘটনার মামলায় অপর এক চালকের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের প্রতিবাদে এ ধর্মঘট শুরু হয়েছে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ